Logo
Logo
×

শেষ পাতা

ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন

চীনে করোনায় দিনে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন

ওষুধ ও কিট পেতে লড়ছেন লাখ লাখ মানুষ * ভারতে করোনার নতুন ঢেউ ঠেকাতে নাকে নেওয়ার টিকায় ছাড়পত্র

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চীনে করোনায় দিনে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছেন

চীনে প্রতিদিন ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে করোনায়। যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংস্থা এয়ারফিনিটি এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। সংস্থাটি বলছে, প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দেওয়া তথ্যও অনেকটা একই। ডব্লিউএইচও বলছে, চীনে হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে গেছে। ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। সংস্থাটি করোনাভাইরাসের সাম্প্রতিক বিস্তারের বিষয়ে চীনকে আরও তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তবে বেইজিং বলছে ভিন্ন কথা। দেশটির ভাষ্য, সবশেষ করোনায় চীনে মৃতের সংখ্যা ৭ জনে পৌঁছেছে। আক্রান্ত হয়েছে ১৮শ। দেশটিতে মৌলিক সব ওষুধ এবং পরীক্ষা কিট পেতে লড়াই করছেন লাখ লাখ লোক। এ প্রেক্ষাপটে চিকিৎসা সরবরাহের উৎপাদন বাড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে। এদিকে চীনের নতুন করোনার উপধরন ভারতে শনাক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি। মোদি সরকার করোনার নতুন ঢেউ ঠেকাতে নাকে নেওয়ার টিকায় ছাড়পত্র দিয়েছে। খবর এএফপি, রয়টার্স, বিবিসি, আনন্দবাজার ও টিআরটি ওয়ার্ল্ড।

এয়ারফিনিটি বলেছে যে, তারা চীনা আঞ্চলিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মডেলিং ব্যবহার করেছেন। যেখানে তারা দেখিয়েছেন চীনে বর্তমান প্রতিদিন সংক্রমণ ১০ লাখের উপরে। তবে সরকারি হিসাবে বলা হয়েছে গত সপ্তাহে ১৮০০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ সময় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ব্যাপারে মন্তব্যের জন্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের (এনএইচসি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাতে সাড়া দেয়নি সংস্থাটি। অথচ এনএইচসির পক্ষ থেক বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার কোভিড-১৯ এ কোনো মৃত্যু হয়নি। বুধবার নতুন করে ২ হাজার ৯৬৬ জন আক্রান্ত হয়েছে।

চীনের সরকারি কর্তৃপক্ষ সে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর বাড়তি চাপ আসতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানিয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য প্রকাশ না করলেও নিউমোনিয়ায় ভুগে হাসপাতালে মারা যাওয়া রোগীদের তথ্য প্রকাশ অব্যাহত রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।

লকডাউন, কোয়ারেন্টাইন এবং গণপরীক্ষা তুলে নেওয়ার চীনা সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান শহরগুলোর ফার্মেসিগুলো খালি হয়ে গেছে। অবসরে গেছেন এমন হাজার হাজার চিকিৎসাকর্মীকে সম্মুখসারিতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে দেখা গেছে রোগীদের লম্বা লাইন। সব মিলিয়ে ব্যাপক চাপে রয়েছে হাসপাতালগুলো। বড় অনেক শহরের সংবাদ মাধ্যমগুলোতে স্বীকার করা হয়েছে, সাধারণ মানুষের জরুরি চিকিৎসা সহায়তা চেয়ে ফোনকল করার পরিমাণ বেড়েছে। অতি জরুরি না হলে কল না করার জন্যও তাদের কাছে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

যাদের হালকা লক্ষণ রয়েছে, তাদের বাড়িতে থাকার ও নিজের চেষ্টায় চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশব্যাপী ঘাটতি মেটানোর জন্য কর্মকর্তারা এক ডজনেরও বেশি চীনা ফার্মাসিউটিক্যাল ফার্মকে প্রধান ওষুধের ‘সুরক্ষিত সরবরাহ’ নিশ্চিত করার অনুরোধ জানিয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর জিয়ামেনের একটি দ্রুত অ্যান্টিজেন পরীক্ষা কিট প্রস্তুতকারী উইজ বায়োটেক এএফপি’কে নিশ্চিত করেছে, তারা যেসব কিট তৈরি করেছে তা স্থানীয় সরকারকে সরবরাহ করা হবে। পৌরসভা ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, বেইজিংয়ে ‘উৎপাদন বাড়াতে’ সাহায্য করতে ছয়টি অ্যান্টিজেন কিট প্রস্তুতকারকদের কাছে অতিরিক্ত কর্মী পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

চেংডুর বাসিন্দা ইয়ানিয়ান এএফপিকে বলেন, আমার পুরো পরিবার অসুস্থ, আমি জ্বরের জন্য ওষুধ কিনতে পারছি না। বৃহস্পতিবার সারা দেশের এক ডজন ফার্মেসি জ্বরের ওষুধের ঘাটতির কথা জানিয়েছে।

এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণ শীর্ষে পৌঁছার শঙ্কা : সাংহাই সরকার-সমর্থিত নিউজ আউটলেট দ্য পেপারে বৃহস্পতিবার চীনের ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনফেকটিয়াস ডিজিজের পরিচালক ঝ্যাং ওয়েনহংকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, চীন এক সপ্তাহের মধ্যে করোনা সংক্রমণের শীর্ষে পৌঁছবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছেন, করোনা সংক্রমণ শীর্ষে উঠে যাওয়ার ফলে গুরুতর রোগের হারও বেড়ে যাবে; যা আমাদের সমগ্র চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর নির্দিষ্ট প্রভাব ফেলবে।

চীনের হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে যাচ্ছে-ডব্লিউএইচও : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, চীনে কোভিড-১৯ এর নতুন একটি ঢেউয়ের আঘাত নিয়ে উদ্বেগের মধ্যেই দেশটির হাসপাতালগুলো রোগীতে ভরে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। ডব্লিউএইচও এর জরুরি স্বাস্থ্য কর্মসূচির প্রধান ডা. মাইকেল রায়ান জানিয়েছেন, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রগুলো (আইসিইউ) ব্যস্ত, যদিও চীনের কর্মকর্তারা রোগীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম বলে দাবি করছেন। তিনি করোনা ভাইরাসের সাম্প্রতিক বিস্তারের বিষয়ে চীনকে আরও তথ্য দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছি, এই সংক্রামক ভাইরাসটিকে শুধু জনস্বাস্থ্য ও সামাজিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে পুরোপুরি থামানো অত্যন্ত কঠিন।

ভারতে করোনার নতুন ঢেউ ঠেকাতে নাকে নেওয়ার টিকায় ছাড়পত্র : করোনার এই টিকা প্রথমে পাওয়া যাবে বেসরকারি হাসপাতালে। শুক্রবার থেকেই টিকাকরণ কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে এই প্রতিষেধক। টিকার দাম শিগগিরই স্থির করা হবে। করোনার নতুন উপরূপ ‘বিএফ.৭’ সংক্রমণ মোকাবিলায় ভারত বায়োটেকের নাকে নেওয়ার টিকাকে (ন্যাজাল ভ্যাকসিন) ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষেধককে যুক্ত করা হয়েছে ‘কোউইন অ্যাপে।’ শুক্রবার এ কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয়। ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স, তাদের দেওয়া হবে ভারত বায়োটেকের এই টিকা।

আগামী এক মাস ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ : স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি আগামী এক মাস ভারতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। চীনে করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। সেই সঙ্গে জাপানসহ বিশ্বের আরও বেশকিছু দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কারণে ২০ থেকে ৩৫ দিন ভারতের জন্য করোনার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ দীর্ঘদিন ধরে একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চীন, কোরিয়া, জাপান, ইউরোপ, আমেরিকা, ব্রাজিলের পরে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। এক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩৫ দিন সময় লাগে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম