প্রশাসনে ক্ষোভ অসন্তোষ
অবশেষে প্রাইজ পোস্টিং পেলেন বিতর্কিত ‘সেই কর্মকর্তা’

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

মাঠ প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদায়ন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশাসনজুড়ে। সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে আপত্তি জানালেও শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালী মহল সফল হয়েছে।
সরকারবিরোধী হিসাবে চিহ্নিত কর্মকর্তাকে সম্প্রতি জেলা পর্যায়ে প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকার সমর্থক কর্মকর্তাসহ অনেকের মধ্যে ক্ষোভ-অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুব্ধ কর্মকর্তাদের কয়েকজন যুগান্তরকে বলেন, ‘সরকারের পোস্টিং পলিসির স্থিতিশীলতা নিয়ে আমরা খুবই বিভ্রান্তির মধ্যে রয়েছি। বর্তমান সরকারের শুরু থেকে সরকারবিরোধী হিসাবে চিহ্নিতদের অনেকে প্রাইজ পোস্টিং পেয়ে আসছেন, যা এখনো রহস্যঘেরা। তবে নির্বাচনের এক বছর বাকি থাকতে তাদের প্রত্যাশা ছিল, আগে যা হওয়ার হয়েছে, ভবিষ্যতে আর হবে না। কিন্তু ফের একই ধরনের পোস্টিং দেখে তারা খুবই বিস্মিত।’
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, অতি সৌভাগ্যবান এই উপসচিবের পুরো পরিবার অনেক আগে থেকে সরাসরি বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। আপন ভাই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। মামা ছিলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সদস্য। দাদা-নানা আমৃত্যু মুসলিম লীগ ও আওয়ামী বিরোধী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিবির-ছাত্রদলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুবিধা নিলেও বর্তমান সরকারের সময়ে নিজেকে ছাত্রলীগ হিসাবে পরিচিত করার অপচেষ্টা করেন। একপর্যায়ে সফলও হন। বিশেষ কারণে প্রভাবশালী মহল সব সময় তাকে অকুণ্ঠ সমর্থন জুগিয়ে আসছে।
এ সুবাদে অতি সৌভাগ্যবান এই কর্মকর্তা ইউএনও হিসাবে এক উপজেলায় দুবার পোস্টিং পান, যা প্রশাসনের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। তাকে ২০১১ সালে ঢাকার একটি উপজেলায় ইউএনও হিসাবে পোস্টিং দেওয়া হয়। একই উপজেলায় তাকে ফের ২০১৪ সালে ইউএনও হিসাবে পোস্টিং দেওয়া হলে প্রশাসনের অভ্যন্তরে ব্যাপকভাবে সমালোচনা শুরু হয়।
তবে প্রভাবশালী মহল পক্ষে থাকায় তিনি বহাল তবিয়তে দ্বিতীয় দফায় সেখানে তিন বছর পার করেন। পরবর্তী সময়ে তিন বছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য ছুটিতে ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবার ইতোমধ্যে পিআর-এর জন্য আবেদনও করেছেন।
জানা যায়, এই কর্মকর্তার বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকেও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত দিয়ে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। যেখানে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব রিপোর্টকে উপেক্ষা করে গত সপ্তাহে তাকে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় পোস্টিং দেওয়া হয়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ১৯৮৪ ব্যাচের একজন ডিসি ওই কর্মকর্তাকে তার সঙ্গে কাজ করার বিশেষ সুযোগ দেন। সেখান থেকে তার সোনালি দিনের যাত্রা শুরু। ওই জেলা প্রশাসকের আশীর্বাদে পরবর্তী সময়ে তিনি আরও কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলার সুযোগ পান। এরপর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
অপরদিকে মাঠ প্রশাসনের আরও একজন কর্মকর্তা গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে প্রকাশ্যে মিস কন্ডাক্ট বা অসদাচরণের মতো অপরাধ করলেও তিনি তিরস্কৃত হওয়ার পরিবর্তে পুরস্কৃত হয়েছেন। গত সপ্তাহে তাকেও একই প্রজ্ঞাপনে মাঠ প্রশাসনের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ওই পদের সবচেয়ে সেরা পোস্টিং দেওয়া হয়। এ কারণে তার ব্যাচমেটরাসহ বিভিন্ন ব্যাচের মেধাবী ও পেশাদার কর্মকর্তাদের অনেকে যুগান্তরকে বলেন, ‘তাহলে ভালো পোস্টিং পাওয়ার জন্য এখন থেকে ওই কর্মকর্তার মতো মিস কন্ডাক্টই করতে হবে। কারণ, দাগ লাগলে যদি ভালো কিছু হয়, তাহলে তো দাগই ভালো।’