৪২ লাখ প্রান্তিক চাষি বিনামূল্যে পাবেন সার ও বীজ
বোরোতে কৃষকের জন্য নেই তেমন সুখবর
ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার মতো অর্থ হাতে নেই : কৃষিমন্ত্রী

আমিরুল ইসলাম
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া। বোরো চাষের মৌসুম আসন্ন। সরকারের তরফ থেকে ডিজেলে ভর্তুকির কোনো আশ্বাস মেলেনি। এতে বোরো উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৪২ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিকে সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ দেবে। তবে এটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এছাড়া সরকারি সহায়তা বা প্রণোদনার বাইরে দেশের অধিকাংশ কৃষক। এককথায়-বোরো মৌসুমে কৃষকের জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কোনো সুখবর নেই।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ডিজিলের মূল্যবৃদ্ধিতে আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকদের কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে সরকার বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে বলেও মন্তব্য করেন তারা।
জানতে চাইলে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বৃহস্পতিবার নিজ কার্যালয়ে যুগান্তরকে বলেন, ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার মতো অর্থ এ মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই। তবে সুখবরের জন্য কৃষকদের অপেক্ষা করতে হবে। টাকা না থাকলে এর চেয়ে বেশি কী বলব। এর আগে তিনি বলেন, বোরো আবাদে প্রয়োজনে ডিজেলে ভর্তুকি দেওয়ার সম্ভাবনা আছে। সরকার সহনুভূতির সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে।
আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম প্রতি লিটারে দাম ৬৫ থেকে ২৩ শতাংশ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ৮০ টাকা। আট মাসের মাথায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ইস্যুতে ৬ আগস্ট ডিজেলের দাম আরও ৪২ শতাংশ বাড়ায় সরকার।
এতে ডিজেলের মূল্য দাঁড়ায় ১১৫ টাকা। পরে মূল্য সমন্বয়ের কথা জানিয়ে ২৯ আগস্ট ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোল-এই চার ধরনের জ্বালানির দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমানো হয়। বর্তমানে প্রতি লিটার ডিজেল ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার অতীতের ধারাবাহিকতায় এবারও কৃষকদের সার ও বীজে ভর্তুকি দেবে। ইতোমধ্যে ৯ ও ১০ নভেম্বর কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে ১৫৫ কোটি টাকার প্রণোদনার জিও জারি করা হয়েছে।
এর মধ্যে হাইব্রিড বীজ ব্যবহারকারী ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ১৫ লাখ কৃষকের জন্য ৮১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। বোরো মৌসুমে উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের বীজ ব্যবহার করে এমন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য প্রণোদনার ৭২ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দেশের ৬১ জেলায় ১১০টি ব্লক প্রদর্শনীর জন্য ১৫ কোটি ৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ৫০ একরের একটি ব্লকের জন্য ১৩ লাখ ৭০ হাজার, বীজ কেনার জন্য ৭৮ হাজার, সার কেনার জন্য ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ এবং সার বীজ বাবদ মোট ১১ লাখ ২৮ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
ডিজেলে ভর্তুকির বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উপকরণ) বলাই কৃষ্ণ হাজরা মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষি উৎপাদন চ্যালেঞ্জে আছে। সরকার বিষয়টি নিয়ে ইতিবাচক চিন্তা করছে।
তবে কী দেওয়া হবে, তা এখনো স্থির হয়নি। আমরা আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে চাই না। তিনি আরও বলেন, এ বছর থেকে আমরা ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের বীজের সঙ্গে বিনামূল্যে সারও দেব। প্রায় ৪২ লাখ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষি এ সুবিধা পাবে।
তবে মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ক্ষুদ্র প্রান্তিক কৃষকদের আরও তিন বছর আগ থেকে বীজ ও সার ফ্রি দিচ্ছে সরকার। এ বছর প্রায় ৬ লাখ কৃষককে নতুন করে এই সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে। সবমিলিয়ে সুবিধাভোগী কৃষকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৪২ লাখ। তারা আরও জানান, বৃহস্পতিবার বোরো মৌসুমে সেচে কৃষকদের কী দেওয়া যায়, তা নিয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৈঠকটি করেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সরকারের পরিকল্পনা হলো খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা। কোনো জমি অনাবাদি না রাখা। আসন্ন বোরো মৌসুমে ডিজিলের ভর্তুকি নিয়ে আমরা বৈঠক করিনি। আমরা সেচের চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। বিশেষ করে প্রতিটি পাম্প সচল রাখা, কোথায় কোথায় বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, সেখানে কীভাবে চাষ হবে, তা আগেই চিহ্নিত করার কাজ চলছে।
কোথাও পম্প হঠাৎ নষ্ট হলে তাৎক্ষণিক কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা করেছি। ডিজেলের মূল্য বেশি এবং ডিজেলে প্রণোদনা না দিলে বোরো উৎপাদনে সংকট হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। উল্লেখ্য, দেশে প্রতি বছর ৪৮ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো উৎপাদন করা হয়।