পাচারের অর্থ উদ্ধার
দশ দেশের সঙ্গে চুক্তির তাগিদ বিএফআইইউ’র
প্রতিবেদন আজ হাইকোর্টে উপস্থাপন
![Icon](https://cdn.jugantor.com/uploads/settings/icon_2.jpg)
আলমগীর হোসেন
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
![দশ দেশের সঙ্গে চুক্তির তাগিদ বিএফআইইউ’র](https://cdn.jugantor.com/assets/news_photos/2022/10/26/image-609350-1666736694.jpg)
পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে সহায়তার জন্য অন্তত ১০টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তির তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশগুলো হলো : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীন। এ ব্যাপারে যৌক্তিকতা তুলে ধরে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করেছে সংস্থাটি।
আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানটি এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য হাইকোর্টকে জানিয়েছে। মঙ্গলবার প্রতিবেদনটি হলফনামা করা হয়েছে। এটি আজ বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করবেন।
১০ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত নাথালি শুয়ার্ড বলেন, সুইস ব্যাংকে জমা রাখা অর্থের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তির জন্য তথ্য চায়নি। সুইস ব্যাংকের ত্রুটি সংশোধনে সুইজারল্যান্ড কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। তবে আমি আপনাদের জানাতে চাই, সুইজারল্যান্ড কালোটাকা রাখার কোনো নিরাপদ ক্ষেত্র নয়। সুইস রাষ্ট্রদূত বলেন, গত বছর সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে বাংলাদেশ থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা জমা হয়েছে। তবে উভয় দেশের সম্মতিতে ব্যাংকিং তথ্য লেনদেন হতে পারে এবং সেটা সম্ভবও। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।
এরপর ১১ আগস্ট বিষয়টি নজরে নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমাকারীদের তথ্য কেন জানতে চাওয়া হয়নি, তা রাষ্ট্রপক্ষ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) জানাতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বলেন হাইকোর্ট। এরপর আদালতে দুদক এবং বিএফআইইউ-এর পক্ষে রাষ্ট্রপক্ষ হলফনামা আকারে তথ্য দাখিল করে। ওই হলফনামায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধানকে তলব করা হয়। সেই তলবে ৩১ আগস্ট হাজির হয়ে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ক্ষমা চান। পরে আদালত তাকে সতর্ক করে দেন। একই সঙ্গে বিএফআইইউ কোন কোন দেশের কাছে অর্থ পাচার ও পাচারকারীদের তথ্য চেয়েছে, কী তথ্য পেয়েছে, তথ্য পেয়ে থাকলে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে এবং পাচার করা অর্থ উদ্ধারে কী পদক্ষেপ নিয়েছে-এসব বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। ২৬ অক্টোবর পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন। এ আদেশ অনুসারে মঙ্গলবার বিএফআইইউ প্রতিবেদন হলফনামা করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদেশে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা ও পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনার জন্য প্রস্তাবিত ‘রিসার্চ সেল’-এ লোকবল পদায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক-কর্তৃক ওই সেলে প্রয়োজনীয়সংখ্যক উপযুক্ত লোকবল পদায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অর্থ ফেরত আনার কার্যক্রম সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্পর্কিত মামলায় তথ্যপ্রমাণ বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যথাসময়ে না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে অ্যাটর্নি জেনারেলের নেতৃত্বে বিদেশে পাচারকৃত সম্পদ বাংলাদেশে ফেরত আনার বিষয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের গত ৩ জানুয়ারি ষষ্ঠ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বাংলাদেশ থেকে পাচার করা অর্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণের জন্য ৬/৭টি দেশের সঙ্গে পারস্পরিক আইনগত সহায়তা চুক্তি (এমএলএ চুক্তি) স্বাক্ষরের বিষয়টি পর্যালোচনার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিএফআইইউ এবং বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অংশগ্রহণে সভা আয়োজন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এ সিদ্ধান্তের সূত্রে বিএফআইইউ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়কে সভা আয়োজনের অনুরোধ করে। পরবর্তী সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ কোন কোন দেশের সঙ্গে এ পর্যায়ে এমএলএ চুক্তি সই করতে হবে এবং এর যৌক্তিকতা জানানোর জন্য বিএফআইইউকে অনুরোধ করলে বিএফআইইউ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, হংকং ও চীনের সঙ্গে এমএলএ চুক্তি সইয়ের যৌক্তিকতা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে অবহিত করে।
ভারতের উচ্চ আদালতের একটি রায় সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, হাইকোর্টের পরামর্শ মোতাবেক ভারতের সুপ্রিমকোর্টের ‘রামজিৎ মালানি বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড আদার্স’ শীর্ষক মামলার রায় সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এছাড়া সুইস ব্যাংকসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অর্থ ফেরাতে ভারতের নেওয়া পদক্ষেপ অনুসরণ করা যায় কি না, সেই বিষয়টি বিএফআইইউ-এর তৈরি কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সুইস ব্যাংকসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে পাচার করা অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে প্রস্তুতকৃত কৌশলপত্র/প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় সমন্বয় কমিটির ৩০ আগস্টের অনুষ্ঠিত ২৬তম সভার আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এটি জাতীয় সমন্বয় কমিটির পরবর্তী সভায় আলোচনা ও অনুমোদন পাবে আশা করছে বিএফআইইউ।