Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বন্যায় রেলপথে ক্ষতি, ঈদযাত্রায় শঙ্কা

Icon

শিপন হাবীব 

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বন্যায় রেলপথে ক্ষতি, ঈদযাত্রায় শঙ্কা

বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হওয়া ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথের বারহাট্টায় রেল সেতুতে চলছে মেরামত কাজ। মঙ্গলবার তোলা ছবি -যুগান্তর

বন্যায় রেলপথের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশন, রেললাইন পানির নিচে তলিয়ে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে ব্রিজও ভেঙে গেছে। শুরুতে বেশ কিছু ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়।

বর্তমানে ক্ষতিগ্রস্ত কিছু এলাকায় ৫ থেকে ৮ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হচ্ছে। চালক ও গার্ডরা বলছেন, চরম ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে। অপরদিকে রেলওয়ে প্রকৌশল দপ্তর বলছে, তলিয়ে যাওয়া রেললাইন থেকে ধীরে ধীরে পানি সরছে।

কিন্তু লাইনে দীর্ঘ সময় পানি থাকায় মাটি নরম হয়ে গেছে। ফলে উনিশ থেকে বিশ হলেই লাইন দেবে যাচ্ছে। ব্রিজের দুপাশের মাটি ধসে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আসছে ঈদ। এ সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি যাত্রী নিয়ে একেকটি ট্রেন চলে।

পরিস্থিতি মোকাবিলার বিষয়টি মাথায় রেখে দ্রুত সংস্কার কাজ চলছে। তবে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে শঙ্কা আরও বাড়বে। মঙ্গলবার বিকালে রেলপথ সচিব ড. হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, বন্যায় রেলওয়ে স্টেশন, রেললাইন, ব্রিজের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, তলিয়ে যাওয়া লাইন, স্টেশন থেকে ধীরে ধীরে পানি নামলেও ওইসব স্থানে মাটি নরম। ট্রেন যথেষ্ট লোড নিয়ে চলাচল করে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আমরা ঝুঁকি নিয়েই গতি কমিয়ে ট্রেন চালাচ্ছি।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অতিরিক্ত লোকবল দিয়ে দ্রুত কাজ করানো হচ্ছে। বিভিন্ন দপ্তর মাঠ পর্যায়ে সরঞ্জাম নিয়ে রয়েছে। মজুত করা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। বন্যায় রেলসেতুর দুপাশ থেকে মাটি ধসে গিয়ে বেশি সমস্যার সৃষ্টি করেছে। 

ড. হুমায়ুন কবির বলেন, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথের বারহাট্টা রেলওয়ে ব্রিজের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ব্রিজটি মেরামত করতে দিন-রাত কাজ চলছে। এ ছাড়া সিলেট লাইনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খুবই কম গতি নিয়ে ট্রেন চালাতে হচ্ছে।

ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসহ সন্দেহজনক এলাকায় মালামাল মজুত করে রাখছি। যে কোনো পরিস্থিতিতে যেন দ্রুত সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা যায়।

সামনে ঈদুল আজহা, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় থাকার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু জাফর মিয়া যুগান্তরকে জানান, শুধু সিলেট লাইনে নয়, আখাউড়া-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রেলপথেও রেললাইন, ব্রিজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এসব লাইন এলাকায় রেলপথ থেকে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলের পানি নেমে গেছে। বেশ কয়েকদিন লাইন এলাকায় পানি জমা ছিল। ব্রিজের দুপাশের মাটি ঠেকাতে কিছু ব্রিজের দুপাশে বালির বস্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনসহ ওই এলাকায় রেললাইন পানির নিচে ছিল। শনিবার ওই পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। বর্তমানে ট্রেন চলছে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় খুব কম গতি নিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

মো. আবু জাফর মিয়া বলেন, মোহনগঞ্জ এলাকায় বারহাট্টা রেলওয়ে ব্রিজ ভেঙে গেছে। দুপাশের মাটি ধসে বিশাল গর্ত হয়ে গেছে। আশা করছি, কয়েকদিনের মধ্যে ব্রিজটি অস্থায়ীভাবে মেরামত করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে ওই ব্রিজ দিয়ে কোনো ট্রেন চলাচল করছে না। ঈদযাত্রায় কোনো শঙ্কা আছে কি না? সবকিছু মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করছি। লাইন মেরামত এবং ফের লাইনে পানি উঠলে কী কী করণীয় তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। 

অভিযোগ রয়েছে, বন্যাকবলিত এলাকায় প্রতিবছরই লাইন পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে স্টেশনে পানি ওঠাসহ বিভিন্ন ব্রিজের দুপাশের মাটি ধসে বড় বড় গর্ত হয়। কখনো কখনো ব্রিজসহ দুপাশের লাইন পানিতে ভেসে যায়।

বন্যাপরবর্তী সময়ে টেকসই এবং সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগুলো মেরামত এবং পুনর্নির্মাণ করার কথা। কিন্তু বাজেট নেই কিংবা পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার অজুহাতে কোনো মতো কাজ শেষ করেই ট্রেন চালানো শুরু হয়। ফলে বন্যা এলে এসব এলাকায় লাইন ব্রিজ এবং স্টেশন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। 

এ বিষয়ে রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) প্রকৌশলী মো. কামরুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, বন্যায় ঝুঁকি নিয়েই ট্রেন পরিচালনা করতে হয়। বন্যায় সড়কপথে ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় রেলপথের প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আরও বাড়ে।

এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছাতে কম গতি নিয়েও ট্রেন চালাতে হয়। আমরা মাঠ পর্যায়ে পর্যাপ্ত লোকবল এবং সরঞ্জাম রেখেছি। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো সংস্কার কাজ সম্পন্ন করা যাবে।

শুধু সংস্কারই করছি না, নজর দিচ্ছি সামনে ঈদযাত্রা। ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ট্রেন চলে, চলমান ট্রেনের সঙ্গে কোচ বাড়ানো হয়। যাত্রীদের চাপ ২-৩ গুণ বেশি হয়।

ওই সময় যাতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যায়, সে জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে মজুত রাখা হচ্ছে মালামাল। 

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার মো. মনিরুল ইসলাম ফিরোজী যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন লাইন এলাকায় এখনো বন্যার পানি রয়েছে। ব্রিজের নিচ দিয়ে তীব্র বেগে পানি নামছে।

বারহাট্টা এলাকায় রেলসেতু ভেঙে পড়ায়, সেতুর দুপাশের মাটিও সরে গেছে। কুড়িগ্রাম রেলওয়ে এলাকায় প্রায় ২ কিলোমিটার রেলপথ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাথর সরে গেছে।

কুড়িগ্রামের উলিপুর থেকে রমনা বাজার পর্যন্ত রেলপথে পানি উঠে লাইন তলিয়ে গেছে। ওই পথে ট্রেন চালানো বন্ধ রয়েছে।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম