আমদানি-রপ্তানি সনদ
বাড়ছে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি
এ ছাড়া ৪২ সেবার বিপরীতে ফি আরোপ করা হচ্ছে
সাদ্দাম হোসেন ইমরান
প্রকাশ: ১৭ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
পণ্য আমদানি-রপ্তানির সনদ (আইআরসি-ইআরসি) নেওয়ার খরচ বাড়ছে।
এ ছাড়া আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর (সিসিআইএন্ডই) এ সংক্রান্ত যত ধরনের সেবা দিয়ে থাকে, সেসব সেবার বিপরীতে ফি আরোপ করা হচ্ছে। সিসিআইএন্ডইর দেওয়া সেবার ফি নির্ধারণী সংক্রান্ত কমিটির সভার কার্যবিবরণী সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
২০১৫-১৮ মেয়াদের আমদানিনীতি আদেশ অনুযায়ী বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি সনদের ফি আদায় করা হয়। এই ফি যুগোপযোগী করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি কমিটি কাজ করছে। ৮ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক, যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরের (আরজেএসসি) প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ফি পুনর্নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে, যা শিগগিরই প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে।
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে আইআরসি (আমদানি নিবন্ধন সনদ) এবং পণ্য রপ্তানি করতে ইআরসি (রপ্তানি নিবন্ধন সনদ) নিতে হয়। এ সনদ দেয় আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তর (সিসিআইএন্ডই)। একজন আমদানিকারক বছরে কত টাকার পণ্য আমদানি করতে আগ্রহী, সে টাকার অঙ্ক অনুযায়ী সনদের নিবন্ধন ও নবায়ন ফি ধার্য করা হয়ে থাকে। আমদানি সনদের শিল্প ও বাণিজ্যিক ক্যাটাগরি আছে।
বর্তমানের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আমদানি সনদের নিবন্ধন ও নবায়ন ফি আগের মতোই যথাক্রমে পাঁচ হাজার ও তিন হাজার টাকা রাখা হয়েছে। পাঁচ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নতুন স্তর বানিয়ে, এর নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে আট হাজার ও চার হাজার টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
১৫ লাখ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি ১২ হাজার ও ছয় হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে নিবন্ধন ফি ১০ হাজার টাকা ছিল। ২৫ লাখ থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ২৪ হাজার ও ১২ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ১৮ হাজার ও ১০ হাজার টাকা।
৫০ লাখ থেকে এক কোটি টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৪০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ৩০ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা। এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে ৬০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে, আগে ছিল যথাক্রমে ৪৫ হাজার ও ২২ হাজার টাকা।
এ ছাড়া পাঁচ কোটি টাকার বেশি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে নতুন চারটি স্তর করা হচ্ছে। পাঁচ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সনদ নিবন্ধন ও নবায়নের ফি যথাক্রমে ৮০ হাজার ও ৪০ হাজার টাকা; ১০ কোটি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত এক লাখ ও ৫০ হাজার টাকা; ২০ কোটি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত এক লাখ ২০ হাজার ও ৬০ হাজার টাকা; ৫০ কোটি থেকে ১০০ কোটি টাকা পর্যন্ত দেড় লাখ ও ৭৫ হাজার টাকা এবং ১০০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বের সনদ নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে দুই লাখ ও এক লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়া রপ্তানিকারক ইআরসি (রপ্তানি নিবন্ধন সনদ) নিবন্ধন ও নবায়ন ফি বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে নিবন্ধন ও নবায়ন ফি যথাক্রমে সাত হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা আছে। এটি বাড়িয়ে ২০ হাজার ও ১০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। ইনডেনটিং সার্ভিসের ইআরসির ফি বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা করা হচ্ছে। আগে ছিল ৪০ হাজার ও ২০ হাজার টাকা।
পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আইআরসি-ইআরসি নবায়নে ব্যর্থতার সারচার্জও বাড়ানো হচ্ছে। আমদানি সনদের মেয়াদোত্তীর্ণ সীমা এক থেকে তিন বছর পার হলে দুই হাজার টাকা, রপ্তানি সনদের ক্ষেত্রে এক হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা ধার্য করা হচ্ছে।
একইভাবে চার থেকে পাঁচ বছর পার হলে পাঁচ হাজার টাকা, রপ্তানি সনদের ক্ষেত্রে চার হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা এবং ছয় বছরের ঊর্ধ্বে সনদ নবায়ন করা না হলে আমদানি সনদের জন্য এক লাখ টাকা, রপ্তানি সনদের জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ইনডেনটিং সনদের জন্য এক লাখ টাকা সারচার্জ আরোপের বিধান প্রস্তাব করেছে কমিটি।
এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা ও মালিকানা পরিবর্তনের জন্য দুই হাজার টাকা; মনোনীত ব্যাংক পরিবর্তনের জন্য দুই হাজার টাকা; তিন বছরের বেশি অনবায়িত সব ধরনের নিবন্ধন সনদের নবায়নের অনুমতির জন্য দুই হাজার টাকা; আমদানি সনদের আমদানি সীমা/শ্রেণি/লিমিট পরিবর্তনের (হ্রাস/বৃদ্ধি) জন্য দুই হাজার টাকা; শিল্প আমদানি নিবন্ধন সনদের আমদানি স্বত্ব পরিবর্তনের জন্য (হ্রাস/বৃদ্ধি) দুই হাজার টাকা ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্থায়ী ভিত্তিতে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মালামাল আনার আইপি নিতে দুই হাজার টাকা; সরকারি প্রকল্পের মালামাল খালাসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা; বিনামূল্যে নমুনা, বিজ্ঞাপন ও উপহারসামগ্রীর জন্য দুই হাজার টাকা; ইক্যুইটি মূলধনী যন্ত্রপাতি ছাড়করণে পাঁচ হাজার টাকা; পূর্বানুমতিপত্রের ভিত্তিতে আমদানি করা ছাড়করণে পাঁচ হাজার টাকা; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাসে পাঁচ হাজার টাকা; জ্যান্ত প্রাণী খালাসে পাঁচ হাজার টাকা;
গ্যাস সিলিন্ডার/গ্যাসাধারের ক্ষেত্রে পাঁচ হাজার টাকা; সব ধরনের আমদানি পারমিটের মেয়ার বৃদ্ধির জন্য দুই হাজার টাকা; সব ধরনের আমদানি পারমিট সংশোধনের জন্য দুই হাজার টাকা; ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য দুই হাজার টাকা; ব্যাগেজ রুলের জন্য দুই হাজার টাকা; অনুদানের বিপরীতে আমদানি পারমিটের জন্য দুই হাজার টাকা; বিনামূল্যে প্রেরিত পণ্যের ক্ষেত্রে দুই হাজার টাকা; হাসপাতাল, এনজিও এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুই হাজার টাকা ফি ধার্যের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ ছাড়াও ফেরতের ভিত্তিতে পণ্য আমদানির আইপি নেওয়ার ক্ষেত্রেও ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মালামাল আনার আইপি নিতে দুই হাজার টাকা; সরকারি প্রকল্পের মালামাল খালাসের জন্য চার হাজার টাকা; পূর্বানুমতিপত্রের ভিত্তিতে আমদানি করা ছাড়করণের জন্য দুই হাজার টাকা; বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালামাল খালাসের জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং অন্য আমদানি পারমিটের জন্য দুই হাজার টাকা ফি ধার্য করা হচ্ছে। একইভাবে রপ্তানি পারমিটের জন্য সেবার বিপরীতে এক হাজার টাকা ফি ধার্য করা হচ্ছে।
যেসব সেবার বিপরীতে ফি ধার্য করা হচ্ছে, সেগুলো হলো- ফ্রাস্ট্রেটেড কার্গো পণ্য, দেশীয় পণ্যের নমুনা, ত্রাণসামগ্রী প্রেরণ, উপহারসামগ্রী প্রেরণ, রিপ্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে, জ্যান্ত প্রাণী, খালি কনটেইনার/সিলিন্ডার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ব্যবহৃত পণ্য, টেস্টিং পণ্য রপ্তানি, রপ্তানি কাম আমদানি সনদ জারি, সব ধরনের রপ্তানি পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি, রপ্তানি পারমিট সংশোধন এবং অন্য রপ্তানি পারমিটের জন্য এক হাজার টাকা ফি দিতে হবে।
ঋণপত্র খোলার সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য দুই হাজার টাকা; জাহাজীকরণের সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য দুই হাজার টাকা; ক্লিয়ারেন্স পারমিটের জন্য পাঁচ হাজার টাকা; আইআরসি থেকে অব্যাহতির জন্য পাঁচ হাজার টাকা এবং অন্য আমদানির পূর্বানুমতির জন্য এক হাজার টাকা ফি ধার্য করার প্রস্তাব করা হয়েছে।