Logo
Logo
×

শেষ পাতা

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু ১৯ জুন

দুবছরে ঝরে পড়েছে ৪ লাখের বেশি

এর মধ্যে ছাত্রী ৬৩ শতাংশ * সবচেয়ে বেশি কারিগরি বোর্ডে, এরপর মাদ্রাসায়, এসএসসিতে শীর্ষে যশোর বোর্ড * সুশীলসমাজের আশঙ্কাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে -রাশেদা কে চৌধুরী

Icon

মুসতাক আহমদ

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

দুবছরে ঝরে পড়েছে ৪ লাখের বেশি

ফাইল ছবি

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে ১৯ জুন। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে নিয়মিত শিক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। বাকিরা অনিয়মিত ও ফল উন্নয়ন প্রার্থী। যারা নিয়মিত পরীক্ষার্থী, তাদের সঙ্গে দুবছর আগে নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছিল ২৩ লাখ ১ হাজার ৪৬৯ জন। অর্থাৎ, পরীক্ষার সময় এসে দেখা যাচ্ছে ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৪৬ জনই ঝরে পড়েছে। তাদের মধ্যে আবার নারী শিক্ষার্থী ২ লাখ ৫৫ হাজার ২৮০ জন বা ৬২ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, সুশীলসমাজ ইতঃপূর্বে ঝরে পড়া সম্পর্কে যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, এ তথ্য থেকে তা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। অন্যদিকে বিভিন্ন স্তরেই এভাবে ঝরে পড়ার চিত্র আছে। কিন্তু বৈজ্ঞানিক তথ্য-উপাত্তের অভাবে সেটি জানা যাচ্ছে না। আর ঝরে পড়া এসব শিক্ষার্থী কোথায় গেল, সেটাও জানা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশঙ্কা করছি, তাদের মধ্যে ছেলেদের অনেকেই হয়তো শিশুশ্রমে ভিড়ে গেছে। আর ছাত্রীদের বিয়ে হয়েছে। মূলত শিক্ষার ব্যয় বহন করতে না পেরে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার সংখ্যাটা বেশি। খানা সমীক্ষায় আসন্ন জনশুমারিতে ঝরে পড়ার এই দিকটিও তুলে আনার পরামর্শ দেন তিনি।

তবে এ প্রসঙ্গে ভিন্ন কথা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির। রোববার সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিসংখ্যান তা বলছে না। আমাদের পরিসংখ্যানে ছেলেদের তুলনায় এ বছর মেয়ে শিক্ষার্থী বেশি। প্রতিবছর মানোন্নয়নের জন্য অনেকে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু গতবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে, শুধু আবশ্যিক বিষয়ে। সে কারণে পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী নেই বললেই চলে। গতবার যদি পূর্ণাঙ্গ পরীক্ষা হতো, তাহলে যারা অকৃতকার্য হতো তারা এবারও পরীক্ষায় অংশ নিত। সে কারণে এবার পরীক্ষার্থী কম মনে হচ্ছে। আসলে নিয়মিত পরীক্ষার্থী কমেনি। এছাড়া প্রতিবছর এমনও হয়, কেউ কেউ রেজিস্ট্রেশন করেও পরীক্ষা দেয় না। কিন্তু এক্ষেত্রে তা হয়নি। সবাই পাশ করেছে।’

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবছর পরীক্ষা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করা হয়। কিন্তু এবার তা করা হয়নি। তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এবার যে ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিচ্ছে, তাদের মধ্যে অনিয়মিত ১ লাখ ২৫ হাজার ১১৮ জন, বিভিন্ন বিষয়ে গতবছর ফেল করা প্রার্থী ২৬ হাজার ৮৬৯ জন, আর ফল উন্নয়ন পরীক্ষার্থী ২ হাজার ৮২৭ জন। নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৯২৩ জন। অন্যদিকে ২০২১ সালের তুলনায় এবার (২০২২) পরীক্ষার্থী কমেছে ২ লাখ ২১ হাজার ৩৮৬ জন। এ বছর করোনার ভয়ানক ডামাডোল ছিল। ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে অক্টোবরে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপরও আগের বছরের (২০২০) তুলনায় ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৩৪ জন বেশি ছিল।

যুগান্তরের আর্কাইভ ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১৯ সালে এসএসসি পরীক্ষায় নিয়মিত হিসাবে অংশ নেয় ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ জন শিক্ষার্থী। তখন নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করেছিল ২২ লাখ ৮৭ হাজার ৩২৩ জন। অর্থাৎ বাকি ৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩৮৬ জন বিভিন্ন কারণে পরীক্ষা দেয়নি। এটা নিবন্ধন করা শিক্ষার্থীর তুলনায় ২৪ শতাংশ ছিল। গত বছরও ঝরে পড়ার তথ্য গোপনে মরিয়া ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপরও ৯টি শিক্ষা বোর্ডের যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে দেখা যায়- নিয়মিত পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ লাখ ৭০ হাজার ৩৮০ জন। দুবছর আগে এসব বোর্ডে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ১৯ লাখ ৪৮ হাজার ৫৬ জন। বাকি ২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৭৬ জন খুঁজে পাওয়া যায়নি। ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭২ শতাংশই ছিল ছাত্রী।

অনেকের ধারণা, দুর্বল শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়ে থাকে কারিগরি বোর্ডের অধীন এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে। এবার সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীই ঝরে পড়েছে এই শাখায়। মোট ২ লাখ ১১ হাজার ৫১৪ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৬৪৯ জন। ছিটকে পড়েছে ৬৯ হাজার ৮৬৫ জন, যা ৩৩ শতাংশ। এরপরই স্থান অপর বিশেষায়িত শিক্ষা মাদ্রাসার। দাখিলে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৮৮৮ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৯৯৬ জন। বাদ যাচ্ছে ৭৯ হাজার ৮৯২ জন। শতকরা হার ২৪.৫৯ শতাংশ। গত বছর এই বোর্ডে ২১ দশমিক ৮২ শতাংশ ঝরে পড়েছিল।

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে ঝরে পড়ায় শীর্ষে আছে যশোর বোর্ড। বোর্ডটিতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩৯৭ জন রেজিস্ট্রেশন করলেও অংশ নিচ্ছে ১ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯০ জন। পরীক্ষা দিচ্ছে না ৩৩ হাজার ৪০৭ জন বা ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। ঝরে পড়ার হারে সাধারণ বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় কুমিল্লা বোর্ড। ওই বোর্ডে ১৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। এভাবে ঢাকায় ১৩.৩৩ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৩.৮২, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১২.৩১, বরিশালে ১৫.১৫, সিলেটে ১৪, দিনাজপুরে ১৫.৪৮ এবং ময়মনসিংহে ১৩.৩৭ শতাংশ ঝরে পড়েছে।

পরীক্ষা সামনে রেখে রোববার সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা সংক্রান্ত জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কমিটির সভা হয়। পরে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ১৯ জুন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হবে ৬ জুলাই। এই পরীক্ষায় মোট অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ৯ হাজার ৫১১ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৫৭ জন। এবার ছাত্রী সংখ্যা বেশি ২ হাজার ৮৪৬ জন। পরীক্ষা উপলক্ষ্যে ১৫ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত দেশের সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

তিনি বলেন, ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন হবে। ওইদিন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা আছে। ওইদিনের পরীক্ষা একদিন এগিয়ে ২৪ জুন নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২৫ জুন এসএসসির ইংরেজি (আবশ্যিক) দ্বিতীয়পত্র, দাখিলে বাংলা দ্বিতীয় পত্র আর এসএসসি-ভোকেশনালে গণিতের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

শিক্ষামন্ত্রী জানান, ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ১৫ লাখ ৯৯ হাজার ৭১১ জন। এছাড়া দাখিলে ২ লাখ ৬৮ হাজার এবং এসএসসি-দাখিল (ভোকেশনাল) ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ জন। এ বছর বিদেশের আটটি কেন্দ্রে অংশ নিচ্ছে মোট ৩৬৭ জন পরীক্ষার্থী।

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল-কোচিং সেন্টার স্থায়ীভাবে বন্ধের উদ্যোগ আছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, ‘কোচিং শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর; তা আমরা বলছি না। সব শিক্ষার্থীর মেধা এক থাকে না। অনেক শিক্ষার্থীর ক্লাসের বাইরে সহযোগিতা প্রয়োজন। শ্রেণিকক্ষে তাদের সব চাহিদা মেটানো সম্ভব হয় না। তাই তাদের জন্য কোচিং প্রয়োজন আছে। তবে কোনো কোনো শিক্ষক ক্লাসে মনোযোগ না দিয়ে কোচিং নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কোচিং না করলে নম্বর কমিয়ে দেন, যা অনৈতিক। তবে কোচিংয়ের ধরন পালটানো হবে।’

অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যসব প্রতিষ্ঠানের মতো হুট করে বন্ধ করে দেওয়া যায় না। পরিকল্পনা করে বন্ধের একটি রূপরেখা তৈরি করার চেষ্টা চলছে। অননুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীদেরও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। যদিও অনুমোদনহীন সিংহভাগই প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান। এছাড়া নিম্নমাধ্যমিকের কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাখা হবে না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

নতুন এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শিগগিরই এমপিও ঘোষণা দেওয়া হবে।’

এ সময় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দীক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম