Logo
Logo
×

শেষ পাতা

দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা কর্তৃপক্ষের

স্থগিত হচ্ছে ৫৫২ প্রকল্পের অর্থছাড়

নির্ধারিত সময়ে মেয়াদ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি * প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতায় আনতে হবে -ড. জাহিদ হোসেন

Icon

হামিদ-উজ-জামান

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২২, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্থগিত হচ্ছে ৫৫২ প্রকল্পের অর্থছাড়

দায়িত্বপ্রাপ্তদের চরম অবহেলার কারণে ৫৫২টি প্রকল্পে অর্থছাড় ও ব্যয় স্থগিত করা হচ্ছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর হবে। চলতি মাসেই শেষ হচ্ছে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময়। কিন্তু তিন মাস আগে মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়ার বিধান থাকলেও তা নেওয়া হয়নি। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সূত্র জানায়, প্রথম দিকে সিদ্ধান্ত ছিল ৩০ জুনের মধ্যে মেয়াদ শেষ হবে-এমন প্রকল্প আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা যাবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশেষ বিবেচনায় এসব প্রকল্প যুক্ত করা হলেও মেয়াদ বাড়ানো ছাড়া অর্থছাড় বা ব্যয় করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প এবং বাস র‌্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পও আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান রোববার যুগান্তরকে বলেন, বছরের পর বছর এ ধরনের দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ড আর চলতে দেওয়া যায় না। আমি আইএমইডিকে দিয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেব। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা যদি সচেতন না হয়, তাহলে উন্নয়নের গতি কীভাবে আগাবে। আমরা বিষয়টি দেখছি।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা সরকারকে এক ধরনের জিম্মি করছে। কেননা, হয় মেয়াদ বাড়ান, না হয় যা খরচ হয়েছে সেগুলো গচ্ছা যাবে-এটা তো ঠিক নয়। প্রকল্প পরিচালক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। সেটি করা না হলে একই ঘটনা সব সময়ই ঘটতে থাকবে।

সূত্র জানায়, ১৭ মে অনুষ্ঠিত হয় এনইসি বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এসব প্রকল্পের বিষয় তুলে ধরা হয়। সেসময় বলা হয়, অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, মেয়াদ বৃদ্ধি যথাসময়ে না হওয়ায় অর্থবছরের প্রথম ৪/৫ মাস এসব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দ করা অর্থ খরচ করা সম্ভব হয় না। ফলে এডিপির বরাদ্দ ব্যবহার কম থাকে। সামগ্রিকভাবে এডিপি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি বা সংশোধনের সব প্রক্রিয়া ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করা প্রয়োজন। যাতে জুলাই থেকে কাজ করা যায়।

প্রকল্পগুলো বিশেষ চিহ্ন (তারকা) দিয়ে নতুন এডিপি যুক্ত করা হলেও যতদিন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি না হবে, ততদিন অর্থ ছাড় বা ব্যয় করা যাবে না। আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হবে-এরকম ৫৫২ প্রকল্পের মধ্যে ১৫ বছর ধরে চলমান আছে ১টি প্রকল্প। এছাড়া এক যুগ বা ১২ বছর ধরে চলছে ৫টি, ১১ বছরের ২টি, ১০ বছরের ৫টি এবং ৯ বছরের প্রকল্প রয়েছে ৬টি। আরও আছে ৮ বছরের ১১টি, ৭ বছরের ২৭টি এবং ৬ বছরের ৩৬টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প ৩ থেকে ৪ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১৫ বছর ধরে চলছে ‘পাকিস্তানের ইসলামাবাদে বাংলাদেশ চ্যান্সেরি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্পটি। ২০০৭ সালে হাতে নেওয়া হয় এটি। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে তিনবার সংশোধন করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুন শেষ হয়ে যাচ্ছে সর্বশেষ বর্ধিত মেয়াদও। কিন্তু শুরু থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের অনুকূলে মোট ব্যয় হয়েছে ২০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া আগামী ৩০ জুন মেয়াদ শেষ হচ্ছে ‘বিসিক শিল্পপার্ক সিরাজগঞ্জ’ প্রকল্পের। ফলে চার বছরের এ প্রকল্প ঠেকেছে ১২ বছরে। খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ৩৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা। কিন্তু সর্বশেষ সংশোধনীর মাধ্যমে করা হয় ৭১৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। প্রকল্পটিতে তিনবার ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদনের সময় এর মেয়াদ নির্ধারণ ছিল ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে এক বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

পরে ব্যয় না বাড়িয়ে আরও এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত। এর মধ্যেও বাস্তবায়ন না হওয়ায় দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ৩ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। আবার তৃতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে ২ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।

সর্বশেষ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হলেও সেটিও শেষ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্পটিও রয়েছে স্থগিতের তালিকায়।

২০১০ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত রয়েছে প্রকল্পটির মেয়াদ। ইতোমধ্যেই একবার সংশোধন করা হয়েছে। প্রায় ১২ বছর ধরে চলা প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমি ৬ মাস আগে থেকেই প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনে সেটি এখনো প্রক্রিয়াধীন। অর্থছাড় বা ব্যয় স্থগিত হলে কোনো সমস্যা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। এর মধ্যেই আশা করছি সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম