Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বাজেট পর্যালোচনা ২০২১-২২

পালটে গেছে খরচের হিসাব-নিকাশ

ঘোষণা ৬ লাখ কোটি টাকার, আট মাসে ব্যয় সোয়া ২ লাখ * লক্ষ্যমাত্রায় মূল্যস্ফীতি রাখা সম্ভব হয়নি

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ১১ মে ২০২২, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

পালটে গেছে খরচের হিসাব-নিকাশ

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ এবং করোনাভাইরাসের শেষ ধাক্কায় পালটে গেছে চলতি বাজেটের খরচের হিসাবনিকাশ। স্বাভাবিক পরিবেশে বছরের শুরুতে অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করলেও শেষদিকে চতুর্মুখী চাপে পড়েছে বাজেট। ফলে ব্যয় বেড়েছে অপ্রত্যাশিতভাবে কয়েকটি খাতে। আবার প্রত্যাশিত অনেক খাতে পুরোপুরি ব্যয় করা সম্ভব হয়নি।

আকস্মিক চাপ সৃষ্টি করেছে মূল্যস্ফীতি ও ভর্তুকিতে। ব্যয় বেড়েছে সুদ পরিশোধ ও ও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতনভাতায়। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৪ শতাংশের মধ্যে রাখার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী, সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। একই কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ-ভর্তুকিতেও খরচ বেড়েছে।

গতানুগতিক অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাজটে কাটছাঁট করা হয়েছে। অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ২ লাখ ২২ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়। ফলে সংশোধিত বাজেটের সব টাকা ব্যয় করতে হলে আগামী জুন (বাকি চার মাসে) পর্যন্ত ৩ লাখ ৭০ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা খরচ করতে হবে।

ওই হিসাবে দৈনিক ব্যয় হবে ৩ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিপুল অঙ্কের টাকা প্রতিদিন ব্যয় করা কঠিন। ফলে শেষ পর্যন্ত বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। যদিও প্রতিবছর শতভাগ বাজেট বাস্তবায়ন হয় না। তবে ধারণা করা হচ্ছে এ বছর আরও কম হবে।

গতানুগতিক অন্যান্য বছরের মতো এবারও বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছে ১০ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। বছরের শুরুতে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করলেও শেষদিকে সংশোধিত বাজেট দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়। বিশেষ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের পণ্য ও সেবা কেনাকাটা, সম্পদ সংগ্রহ ও পূর্তকাজ, শেয়ার ও ইকুইটিতে বিনিয়োগ এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) থেকে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। এডিপি কাটছাঁট করা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। সংশোধিত এডিপি হচ্ছে ২ লাখ ৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।

এ বছর রাজস্ব খাত থেকে কোনো কাটছাঁট করা হচ্ছে না। অর্থ বিভাগের ধারণা, শুরুতে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, সেটি অর্জন সম্ভব। তবে বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের মূল্য বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। ফলে বছরের শুরুতে ৫ দশমিক ৪ শতাংশের ঘরে রাখার যে ঘোষণা, সেটি সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ করা হয়। কিন্তু সেখানেও রাখা সম্ভব হয়নি। বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ২২ শতাংশ বিরাজ করছে।

এছাড়া কৃষকের সার, জ্বালানি তেল ও খাদ্যের দাম বেড়েছে বিশ্ববাজারে। বেশি দামে আমদানি করে কম মূল্যে ভোক্তার দোরগোড়ায় পৌঁছাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বেশি। চলতি বছরে খাদ্যে ভর্তুকি ৫ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। বেশি মূল্যে জ্বালানি ও এলএনজি গ্যাস কিনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহারের কারণে এ খাতে ভর্তুকি বেড়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। বছরের শুরুতে বিদ্যুতে ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি থাকলেও এখন গুনতে হচ্ছে ১২ হাজার কোটি টাকা।

এছাড়া অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বেড়েছে ৫ হাজার কোটি টাকা। শুরুতে অন্যান্য খাতে ১০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এখন দেওয়ার হচ্ছে ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। মূল্যবৃদ্ধির কারণে কৃষকের সারে অতিরিক্ত ভর্তুকি বেড়েছে ২৫০০ কোটি টাকা। শুরুতে ৯৫০০ কোটি টাকা দেওয়া হলেও এখন বরাদ্দ বাড়িয়ে ১২ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, এ বছর ভর্তুকি, প্রণোদনা খাতে মোট ৫৩ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা রাখা ছিল। এখন সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। এ খাতে মোট বেড়েছে ১২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা।

এ বছর সরকারি বেতনভাতা খাতে বরাদ্দের চেয়ে আরও অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৫০০ কোটি টাকা। এটি বেড়েছে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে ডাক্তার, নার্সসহ নতুন জনবল নিয়োগের কারণে। করোনাভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্য খাতের সংকট পুরোপুরি ফুটে উঠেছিল। সারা দেশে নার্স ও চিকিৎসকের সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খায় হাসপাতালগুলো।

এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৪ হাজার চিকিৎসক, ১৪০০ মিডওয়াইফারি, ৮১২৮ জন সিনিয়র নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। এই মিডওয়াইফারি ও সিনিয়র নার্সদের বেতনভাতা আগামী জুন পর্যন্ত প্রয়োজন হবে ২১৬ কোটি টাকা। আর চিকিৎসকের বেতন বাবদ গুনতে হবে ২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা প্রতিমাসেই পরিশোধ করা হচ্ছে। এছাড়া অন্যান্য ব্যয়সহ মোট প্রয়োজন ৪১০ কোটি ১১ লাখ টাকা। এছাড়া প্রশাসনে নতুন জনবল নিয়োগের কারণে এ ব্যয় বেড়েছে। করোনার কারণে গত দুই বছর স্থগিত ছিল জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া।

এসব কারণে এ বছর সরকারের পরিচালনা খাতের ব্যয় বেড়েছে। শুরুতে পরিচালনা বাবদ ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা থাকলে সংশোধিত বাজেটে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। অর্থাৎ নতুন বরাদ্দ বেড়েছে ৭ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা।

এ বছর ঋণের সুদ পরিশোধ খাতে অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা গুনতে হচ্ছে। বছরের শুরুতে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ বাবদ ৬ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৯ হাজার ২৪৪ কোটি টাকায় উঠেছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম