চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর যুবলীগ
ছয় সভাপতি-সম্পাদক পদে আগ্রহী দুই শতাধিক নেতা
নেতৃত্বে আসবে যোগ্যরাই * চাপিয়ে দেওয়া কমিটি হবে না
শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১০ এপ্রিল ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামে যুবলীগের তিনটি সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছয়টি পদের জন্য দুই শতাধিক আগ্রহী নেতা বায়োডাটা জমা দিয়েছেন। যুবলীগের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি গঠনে বায়োডাটা জমা নেওয়া হলেও সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। মে মাসের শেষের দিকে এ সম্মেলন হবে।
পদপ্রত্যাশী নেতারা জানান, কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি যেভাবে ‘চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে’ তেমন কোনো কমিটি যুবলীগে হোক- তা চান না সংগঠনের সাধারণ নেতাকর্মীরা। তারা বলেন-এমন কমিটি হলে ত্যাগী নেতারা বাদ পড়বেন। টাকার বিনিময়ে পদ কেনা-বেচা হলে সংগঠনের প্রতি নেতাকর্মীরা আস্থা হারাবেন।
জানা গেছে, আগে সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে যারা নেতৃত্বে ছিলেন না তাদের বায়োডাটা জমা দেওয়ার সুযোগ এবার রাখা হয়নি। এ কারণে গণহারে বায়োডাটা জমা পড়েনি। আবার নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর নতুন করে কেউ বায়োডাটা জমা দেওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন না। বর্তমান নেতৃত্বের এমন কঠোর মনোভাবের কারণে আগামীতে যুবলীগে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে এবং গণতান্ত্রিক চর্চার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের চট্টগ্রাম মহানগর কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। দুইটি গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রায় এক হাজার বায়োডাটা জমা পড়েছিল। কোনো দিন স্বেচ্ছাসেবক লীগ করেননি, আবার কখনও সংগঠনের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন না-এমন ব্যক্তি নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এ নিয়ে সাধারণ নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হন। এ ক্ষেত্রে মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ। তাই চট্টগ্রামে যুবলীগের তিন সাংগঠনিক ইউনিট থেকে নেতাদের বায়োডাটা আহ্বান করার পর থেকে সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, চট্টগ্রামে তিনটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহীদের বায়োডাটা আহ্বান করে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ২ এপ্রিল থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত তিন দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। তিন দিনে দুই শতাধিক বায়োডাটা জমা পড়েছে। মহানগর যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ১০৮ নেতা বায়োডাটা জমা দেন। এর মধ্যে সভাপতি পদে ৩৫ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৭৩ জন বায়োডাটা জমা দেন। দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে ১৩ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ৩৯ জন বায়োডাটা জমা দেন। একইভাবে উত্তর জেলায় সভাপতি পদে ৯ ও সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন বায়োডাটা জমা দেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দুই শতাধিক নেতা বায়োডাটা জমা দিলেও প্রতিটি ইউনিটে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিযোগিতা হবে। ত্যাগী নেতারা প্রতিযোগিতার অগ্রভাগে থাকবেন।
চট্টগ্রাম নগর যুবলীগের শীর্ষ দুই পদে বায়োডাটা জমা দেওয়া উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে রয়েছেন-সভাপতি পদে এম আর আজিম, সুমন দেবনাথ, হাসান মুরাদ বিপ্লব, দিদারুল আলম, আবদুল মান্নান ফেরদৌস, শেখ নাছির আহমদ এবং সাধারণ সম্পাদক পদে ইঞ্জিনিয়ার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, দেবাশীষ পাল দেবু, মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, সাজ্জাত হোসেন, নুরুল আজিম রনি, ফজলে রাব্বি সুজন, মাহবুব আলম আজাদ প্রমুখ।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলায় সভাপতি পদে রয়েছেন-নুরুল মোস্তফা মানিক, ইঞ্জিনিয়ার হাসান মুরাদ, এস এম রাশেদুল আলম, নাসির হায়দার বাবুল, মজিবুর রহমান স্বপন, আবুল বশর, গোলাম কিবরিয়া, রাজিবুল আহসান সুমন। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন-আবু তৈয়ব, রাশেদ খান মেনন, এসএম আল নোমান, মুজিবুল হক স্বপন প্রমুখ।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায় সভাপতি পদে রয়েছেন-সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ ফারুক, পার্থসারথী চৌধুরী, নাসির উদ্দিন মিন্টু, মাহবুবুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন- মর্তুজা কামাল মুন্সী, আখতার হোসেন, সাইফুল ইসলামসহ ২৬ জন সিভি জমা দিয়েছেন।
নগরে সভাপতি পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সুমন দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্র থেকে কিছু নিয়ম নির্ধারণ করে দেওয়ায় গণহারে কেউ বায়োডাটা জমা দিতে পারেননি। এটা সংগঠনের জন্য সুখবর। সুস্থ প্রতিযোগিতার ধারা সৃষ্টি করতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে সবাই একবাক্যে সাধুবাদ জানাচ্ছে।
নগরে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, অতীতে যুবলীগ নিয়ে সারা দেশে অনেক সমালোচনা ছিল। টাকা দিয়ে কমিটি বেচা-কেনার খারাপ নজিরও ছিল। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে যুবলীগের যে মানবিক কর্মকাণ্ড, সাংগঠনকি গতিধারা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে-তাতে মনে হয় না কমিটিতে কালোবাজারিদের কারও ঠাঁই হবে। অথবা পেছনের দরজা দিয়ে কেউ ভিন্ন উপায়ে পদ বাগিয়ে নেবে। বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি সবার আস্থা আছে। সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি হবে তা মেনে নিতে সবাই প্রস্তুতও আছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণে সভাপতি পদপ্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফারুক যুগান্তরকে বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন। আগামীতে দলকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবেন এমন সব ব্যক্তিকেই নেতৃত্বে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস। দুঃসময়ে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন তাদের হাতে নেত্বত্ব আসবে বলে বিশ্বাস করি।