
প্রিন্ট: ০৬ মার্চ ২০২৫, ১০:১১ পিএম
ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভারের উদ্যোগ বাতিল
রাজউকের ঝিলমিল প্রকল্পের স্বপ্নভঙ্গ
পরামর্শক বাবদ ৩ কোটি টাকাই পানিতে * যথাসময়ে কাজ শুরু না হওয়ায় প্রকল্প বাতিল হয়েছে -ইকবাল হাবিব

মতিন আব্দুল্লাহ
প্রকাশ: ০১ মার্চ ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাতিল করেছে সরকার। এতে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্পের প্রায় ১৫ লাখ বাসিন্দার ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। যদিও বলা হচ্ছে, ইনার ও আউটার রিং রোড উন্নয়নের মাধ্যমে ওই এলাকার যোগাযোগ সহজ করা হবে। সে প্রকল্প বাস্তবায়নও বহুদূরের বিষয়। ২০৩০ থেকে ২০৩৫ সালের আগে ওই দুটি বৃত্তাকার
সড়ক যোগাযোগ গড়ে তোলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময় পর্যন্ত কেরানীগঞ্জের পরিকল্পিত ‘ঝিলমিল’ আবাসিক প্রকল্পের বাসিন্দাদের পুরান ঢাকার দুঃসহ যানজট মাড়িয়েই ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
জানা যায়, গত ১০ নভেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় গৃহীত ‘শান্তিনগর থেকে ঢাকা-মাওয়া রোড (ঝিলমিল) পর্যন্ত প্রকল্পটি বাতিল করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি একই কমিটি প্রকল্পটি অনুমোদন করে। আর ২০১৭ সালের ২৩ এপ্রিল ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অর্থরিটির (ডিটিসিএ) নবম বোর্ড সভায় ওই ফ্লাইওভার লে-আউট অনুমোদন করা হয়।
ওই সভায় ফ্লাইওভারের অবস্থান-শান্তিনগর থেকে ঝিলমিলের পরিবর্তে ফকিরাপুল থেকে চুনকুটিয়া পর্যন্ত অবস্থান করা হয়। এ ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। প্রকল্পটি (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত ছিল সরকারের। এ প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় চিন্তা করা হয়েছিল ১ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।
আরও জানা যায়, ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দুদফা পরামর্শক নিয়োগ করা হয়। প্রথমে রাজউকের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে (বুয়েট) এ কাজ দেওয়া হয়। প্রায় দেড় যুগ আগে করা বুয়েটের ওই প্রতিবেদনে ফ্লাইওভার নির্মাণের ব্যাপারে ইতিবাচক মতামত দেওয়া হয়। কয়েক বছর পর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পিপিপি শাখা থেকে বুয়েটকে দিয়ে পুনরায় ওই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তখনো ইতিবাচক সুপারিশ করেছে বুয়েট। দুদফা পরার্শক বাবদ সরকারের প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।
ঝিলমিল প্রকল্পের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজতর করার ক্ষেত্রে এ ফ্লাইওভার বড় ভূমিকা রাখবে এমনটি মনে করা হতো। রাজউকও ঝিলমিল প্রকল্পের গ্রাহকদের এমন আশার কথা শোনাত। প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে দীর্ঘসময় নষ্ট হওয়ায় এরই মধ্যে সরকারের অন্যান্য সংস্থা বেশ কিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যে কারণে রাজউকের এ ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে স্থপতি ও নগর বিশেষজ্ঞ ইকবাল হাবিব যুগান্তরকে বলেন, রাজউকের অদক্ষতা ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারার কারণে ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভার প্রকল্প বাতিল হয়েছে। এ কারণে ঝিলমিল আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দাসহ ওই করিডরে চলাচলকারীদের যানজটের দুর্বিষহ ধকল সামলাতে হবে।
তিনি বলেন, বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হলে ওই করিডরমুখো চলাচলকারীদের দুর্ভোগ অনেকাংশে লাঘব করা সম্ভব হবে। তবে ইনার রিং রোড বা আউটার রিং রোড কবে নাগাদ পূর্ণতা পাবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ও রাজউকের ফ্লাইওভার প্রকল্পের পরামর্শক ড. সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, রাজউকের প্রস্তাবিত ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া পর্যন্ত ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বর্তমানে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। কেননা ঢাকা থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়া করিডরে বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কিছু দৃশ্যমান এবং কিছু অল্পসময়ের ব্যবধানে দৃশ্যমান হবে। এজন্য ওই করিডরে আর ফ্লাইওভার করা বাস্তবসম্মত হবে না। এজন্য আমরা রাজউকের ফ্লাইওভার প্রকল্পটি বাতিল করতে সরকারকে সুপারিশ করেছি।
তিনি বলেন, ওই করিডরের অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঝিলমিল আবাসিক প্রকল্প বা ওই সড়কে চলাচল করা মানুষের ঢাকার সঙ্গে সহজ যোগাযোগ সহজ করবে না। তবে ভবিষ্যতে পুরোপুরিভাবে ইনার ও আউটার বৃত্তাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হলে, বিদ্যমান সমস্যার অনেকাংশে সমাধান হতে পারে। সেটিও অনেক সময়ের ব্যাপার।
এ প্রসঙ্গে রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন) মেজর ইঞ্জিনিয়ার সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.) যুগান্তরকে বলেন, রাজউক ফকিরাপুল থেকে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া পর্যন্ত ফ্লাইওভার করতে কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল। তবে সরকারের অন্যান্য সংস্থার প্রকল্পের সঙ্গে প্রকল্পটি সাংঘর্ষিক হওয়ায় এ প্রকল্পটি বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাজউক যে উদ্দেশ্যে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল, সরকার হয়তো অন্যান্য সংস্থার প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সে সমস্যার সমাধানে ভূমিকা রাখবে। ওই করিডরে বর্তমানে রাজউক আর কোনো ফ্লাইওভার নির্মাণ করার চিন্তা করছে না।
রাজউক সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রস্তাবিত ‘ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া’ ফ্লাইওভার প্রকল্পের প্রথমে দৈর্ঘ্য ছিল ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার। আর সংশোধিত হওয়ার পর ফ্লাইওভারের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করা ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। সংশোধিত নকশার ফকিরাপুল স্টার্ট পয়েন্ট ধরে ফ্লাইওভারের এন্ডিং পয়েন্ট ঝিলমিল থাকলে নির্মাণ খরচ হতো ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আর সংশোধিত এন্ডিং পয়েন্ট কদমতলী ইন্টারসেকশন হওয়ায় খরচ অন্তত ৪০০ কোটি টাকা বাড়ত।
ওই অবস্থায় ফ্লাইওভারের চার লেনের দৈর্ঘ্য হতো ৭ দশমিক ২২ কিলোমিটার। এছাড়া দুই লেন র্যাম্পের দৈর্ঘ্য করা হতো ৪ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার। চার লেন ফ্লাইওভারের প্রস্থ ধরা হয়েছিল ১৫ দশমিক ৮ মিটার। আপ (উঠা) র্যাম্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫টি। এছাড়া ডাউন (নামার) র্যাম্পের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫টি। এছাড়া টোল প্লাজা নির্ধারিত হয়েছিল ৩টি।