নির্মাণকাজে বাধা এড়াতে খসড়া এসওপি প্রণয়ন

কাজী জেবেল
প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য নতুন নির্দেশিকা তৈরি করছে দুই দেশ। এরই অংশ হিসাবে একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিউরের (এসওপি) খসড়া তৈরি করেছে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বাস্থবক)। খসড়াটি চূড়ান্ত করতে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে সম্প্রতি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। প্রাথমিক এসওপিতে ওই এলাকায় অবকাঠামো নির্মাণের স্থান ও উচ্চতা নির্ধারণ এবং অনুমোদনের বিষয়গুলো নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে। অপর দিকে ভারতও একটি খসড়া এসওপি তৈরি করেছে। এর একটি কপিও বাংলাদেশকে দিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো এসব তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে দুই দেশের চার-পাঁচটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ ভারতের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড ফোর্সেসের (বিএসএফ) বাধায় আটকে আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই এসওপি প্রণয়নের কাজ চলছে। বর্তমানে সিলেটের শেওলা, খাগড়াছড়ির রামগড় ও ফেনীর বিলোনিয়ায় অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। এতে দুটি প্রকল্পের কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। হবিগঞ্জের বাল্লা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজও বাধার কারণে বন্ধ ছিল। পরে সেটির কাজ শুরু হয়েছে। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪২৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে।
এসওপির খসড়া প্রণয়নের বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আলমগীর। তিনি বলেন, জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণে বাধাসংক্রান্ত জটিলতা এড়াতেই এসওপি তৈরি হয়েছে। তবে সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। চূড়ান্ত করার জন্য খসড়াটি নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের এসওপির খসড়াও পেয়েছি। এর সঙ্গে মিল রেখেই আমরা এসওপি করছি।
খসড়ায় বলা হয়েছে, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তাব, নকশা ও লে-আউট প্ল্যান আগেভাগেই অপর দেশকে জানাতে হবে। ওই প্রস্তাব পাওয়ার ৪৫ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে পার্শ্ববর্তী দেশ। তবে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন বা অনুসন্ধান থাকলে তা ৩০ দিনের মধ্যে আবেদনকারী দেশকে জানাতে হবে। প্রশ্নের জবাব পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণের অনুমোদন দেবে সংশ্লিষ্ট দেশ। এ প্রক্রিয়ার মধ্যেও সমাধান না হলে দুই দেশই তাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানাবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে সমাধানের উদ্যোগ নেবে।
স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীর জিরো লাইন থেকে ছয় মিটার দূরত্বে হবে এবং প্রাচীরের উচ্চতা হবে সর্বোচ্চ পাঁচ মিটার। স্থলবন্দরের লাইটিং টাওয়ারের উচ্চতা হবে সর্বোচ্চ ১৫ মিটার এবং সীমানাপ্রাচীর থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে স্থাপন করতে হবে। আর ওয়াচ টাওয়ারের উচ্চতা হবে ১২ মিটার। এটি স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের ভেতরে অংশে কর্ণারে বসবে। যাত্রী ছাউনির উচ্চতা হবে সর্বোচ্চ ২০ মিটার এবং সীমানা দেওয়ালের ১০ মিটার দূরত্বে তৈরি করতে হবে। স্থলবন্দরের মূল ভবন হবে বাউন্ডারি লাইন থেকে ২০ মিটার দূরত্বে এবং ভবনের উচ্চতাও হবে সর্বোচ্চ ২০ মিটার। এ ছাড়াও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণেও নির্দিষ্ট উচ্চতা ও দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। তবে ইতোমধ্যে যেসব স্থাপনা নির্মাণ হয়ে গেছে সেগুলোর ক্ষেত্রে এই এসওপি প্রযোজ্য হবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। ওই সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী যৌথ স্টেটমেন্ট দেন। ওই স্টেটমেন্টের ৩৮ নম্বর প্যারায় সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে দুই দেশের স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের স্থাপনা নির্মাণ অগ্রাধিকারভিত্তিতে অনুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো নির্মাণ নিয়ে জটিলতার কারণে এসওপি করা হচ্ছে। তারা আরও জানান, খাগড়াছড়ির রামগড় স্থলবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে এ বন্দরের নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজেই রামগড় স্থলবন্দর পরিদর্শন করেন এবং কাজ শুরুর ঘোষণা দেন। এ স্থলবন্দরের বিপরীতের ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সাবরুম সীমান্ত অবস্থিত। একইভাবে ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দরের সীমান্তের জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশ অংশে কাজ চলমান। এ বন্দরটির বিপরীতে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য রয়েছে। একই অবস্থা সিলেটের শেওলা স্থলবন্দরের। এ স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি সীমান্ত অবস্থিত। এ ছাড়া অন্য জটিলতার কারণে ভোমরা স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১; শেওলা, ভোমরা, রামগড় স্থলবন্দরের উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া ৭৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে আগামী জুনে। এ পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৩০ শতাংশ। এ প্রকল্পের আওতায় শেওলা, ভোমরা ও রামগড় স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়নে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি এবং বিলোনিয়া স্থলবন্দর উন্নয়নে ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে আরেকটি প্রকল্পও চলমান। দুটি প্রকল্পেরই মেয়াদ শেষ হবে জুনে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরে নির্মাণকাজ বন্ধ। বাল্লা স্থলবন্দরে সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে অবকাঠামো নির্মাণকাজ বন্ধ থাকার পর তা আবার চালু হয়েছে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ২৫-৩০ শতাংশ। এটিসহ নানা কারণে সংশ্লিষ্ট অন্য প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে না বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে ‘বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১; প্রকল্পের পরিচালক মো. সারোয়ার আলমের সঙ্গে যুগান্তরের কথা হয়। তিনি বলেন, বাধার কারণে জিরো লাইন থেকে ১৫০ গজের মধ্যে কয়েকটি স্থলবন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধ রয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট সময়ে প্রকল্প শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান হয়ে যাবে। প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ও বাল্লা স্থলবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, দুই দেশের সহযোগিতার মধ্যেই উন্নয়ন কাজ এগিয়ে নিতে হবে। সেই চেষ্টাই চলছে।