ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগ
শীর্ষ চার পদের তিনটিতেই ভারপ্রাপ্ত, গতিহীন সংগঠন
থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ * নানা করণে হয়নি সম্মেলন
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে এক দশক আগে ২০১২ সালে। রেওয়াজ অনুযায়ী জাতীয় কংগ্রেসের আগেই উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কিন্তু ২০১৯ সালে সর্বশেষ কংগ্রেস শেষ হওয়ার দুই বছরের বেশি সময় পার হলেও এখনো সম্মেলন হয়নি এই দুই শাখার। ফলে আসছে না নতুন নেতৃত্ব।
যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শীর্ষ চার পদের তিনটিতেই ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে দীর্ঘদিন। ভারপ্রাপ্ত নেতৃত্ব রুটিন ওয়ার্কের বাইরে তেমন কোনো কাজ করেন না। সে কারণে সংগঠনের গতিশীলতাও নেই। বেহাল অবস্থা ঢাকা মহানগরের থানা-ওয়ার্ড কমিটিগুলোরও। ফলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ এ দুই শাখা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি-ক্যাসিনোকাণ্ডে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও নগরের শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতার ফেঁসে যাওয়ায় সবকিছুই ঝুলে যায়। পরে করোনাসহ নানা কারণে এই সংগঠন দুটির আর সম্মেলন হয়নি। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
সংগঠনের নেতাকর্মীদের চাওয়া সংগঠনকে গতিশীল করতে এবং ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে উত্তর-দক্ষিণে দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতাদের দায়িত্ব দিতে হবে। একই সঙ্গে ক্যাসিনো, মাদক ও টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে সম্পৃক্ত বিতর্কিত কেউ যাতে সংগঠনের কমিটিতে ঠাঁই না পান-সে জন্যও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
জানতে চাইলে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল শুক্রবার বিকালে যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলন করাটা জরুরি। কিন্তু করোনার কারণে আসলে হয়ে উঠেনি। করোনার সময় আমরা তো মানবিক কাজেই বেশি ব্যস্ত ছিলাম। আপনারা দেখেছেন আমরা জেলা সম্মেলনগুলো শুরু করেছি। আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার) নির্দেশনা পেলেই আমরা ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন করব।
২০১২ সালের ১৪ জুলাই যুবলীগের ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের আগে সে বছরের ৩ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ এবং ৮ জুলাই উত্তরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন উত্তরে মাইনুল হোসেন খান নিখিল সভাপতি ও ইসমাইল হোসেন সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট সভাপতি ও ওয়াহিদুল আলম আরিফ সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান।
এরপর ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর যুবলীগের সপ্তম জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশকে চেয়ারম্যান ও ঢাকা উত্তর শাখার সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু তখন জাতীয় কংগ্রেসের আগে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি।
২০১৩ সালে মিল্কী হত্যার পর আত্মগোপনে যান ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ। পরে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান এইচএম রেজাউল করিম রেজা। ক্যাসিনোকাণ্ডে ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট গ্রেফতার হলে মাইনউদ্দিন রানাকে দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্যদিকে উত্তরের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল কেন্দ্রীয় যুবলীগে পদ পাওয়ায় জাকির হোসেন বাবুল ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান।
যুবলীগ নেতারা বলছেন, কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের (সম্মেলন) আগে মহানগর সম্মেলন হয়। কিন্তু ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানান বিতর্কে এবার সেটি হয়নি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি, শুদ্ধি অভিযান ও শীর্ষ পদে ভারপ্রাপ্তের কারণে নগর যুবলীগের সাংগঠনিক কাজে ভাটা পড়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে তারা শুধু রুটিন ওয়ার্ক করছেন। এর বাইরে কমিটি গঠন, ভাঙা বা অন্য কোনো সাংগঠনিক কাজে তারা নেই। যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণে ২৪টি থানা এবং ৭৫টি ওয়ার্ড এবং উত্তরে ২৭টি থানা এবং ৬৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই মেয়াদোত্তীর্ণ।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলনের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে আমরা এখনো কোনো নির্দেশনা পাইনি। দীর্ঘ দিন সম্মেলন না হওয়া এবং শীর্ষ পদে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলায় সংগঠন গতি হারাচ্ছে কী-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো হচ্ছেই। আমরা এখন বলা চলে শুধু দিবসভিক্তিক কর্মসূচি বা রুটিন ওয়ার্ক করে যাচ্ছি।
ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমরা এখনো ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলনের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে আমরা থানা-ওয়ার্ডগুলোর সম্মেলনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। যেগুলোর সম্মেলন বাকি আছে, সেগুলোর সম্মেলন করছি। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পেলে ঢাকা মহানগর উত্তরের সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতিও শুরু করবো।
এদিকে দিনক্ষণ ঠিক না হলেও ঢাকা মহানগর যুবলীগের পদপ্রত্যাশীরা নিজেদের উপস্থাপন করছেন বিভিন্ন মাধ্যমে। সংগঠনটিকে আমূল পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। তবে ভেতরে ভেতরে দৌড়ঝাঁপ করলেও প্রকাশ্যে এ নিয়ে তারাও কথা বলেন না। দায়িত্বে থাকা নেতারাও সম্মেলনে উদ্যোগী নন। সবাই ওপরের নির্দেশনা পেলে কাজ করার পক্ষে।
যুবলীগের পদপ্রত্যাশী নেতারা বলছেন-তারা যুবলীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষায় এবং সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে সৎ, শিক্ষিত, ত্যাগী ও ছাত্রলীগ করে আসা সাবেক নেতাদের নতুন নেতৃত্বে নিয়ে আসার পক্ষে।