আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে সদিচ্ছা ও যোগ্যতার অভাব: ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা না থাকলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন টেকসই হবে না * ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের পাশাপাশি আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু আর্থিক খাতে সুশাসন নিশ্চিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদিচ্ছা ও যোগ্যতার অভাব রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী, ঋণ, কর ও বিলখেলাপি এবং দুর্নীতিবাজরা যেন অংশগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য নতুন নির্বাচন কমিশনকে দৃঢ় অবস্থান দেখাতে হবে। শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের সদিচ্ছা’ শীর্ষক ছায়াসংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ড. দেবপ্রিয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংকগুলো মধ্যরাতে সভা করে ঋণখেলাপিদের দায়মুক্তি দিয়ে নির্বাচন করার সুযোগ দেওয়া নৈতিকতাবিরোধী। যে পরিমাণ ঋণ আদায় করা হয় তার চেয়ে অনেক বেশি অবলোপন করা হয়। ব্যাংকিং খাতে ১০ শতাংশ ঋণখেলাপির যে তথ্য দেওয়া হয় সেটি সঠিক নয়। কোনো ঋণখেলাপি যাতে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্সের সদস্য হতে না পারে সে বিষয়ে ব্যাংক মালিকদের সতর্ক থাকতে হবে। একই সঙ্গে ঋণখেলাপি ও আর্থিক খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সামাজিক ঘৃণা ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন টেকসই হবে না।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, আর্থিক খাতে বিশৃঙ্খলা দিন দিন ক্যানসারে রূপ নিচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিয়ে সরকার গর্ববোধ করলেও ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা লজ্জিত। দেশে প্রবৃদ্ধি-উন্নয়নের পাশাপাশি মহালুটপাটও হচ্ছে। আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় ক্ষত ঋণ জালিয়াতি ও অর্থ পাচার। অর্থ পাচারে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি সরকারি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও সম্পৃক্ত। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারিকালে দেড় বছরে দুবাইয়ের আবাসন খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে বাংলাদেশিরা। একশ্রেণির বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও আমলারা ২৮৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন।
কিরণ আরও বলেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ থেকে ৩২ জন ২০ লাখ পাউন্ড (২৪ কোটি টাকা) করে বিনিয়োগের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের গোল্ডেন ভিসা সংগ্রহ করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো-গোল্ডেন ভিসার নামে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে এ অর্থ কীভাবে গেল? তিনি বলেন, ঋণ জালিয়াতির সংস্কৃতি থেকেও আমাদের আর্থিক খাত কোনোভাবেই শৃঙ্খলমুক্ত হতে পারছে না। ঋণখেলাপির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ঋণ জালিয়াতি ও বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করলেও দুর্বৃত্তরা নানা কৌশলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তুলে নিচ্ছে। এ থেকে উত্তরণে তিনি ১০ দফা সুপারিশ করেন।
প্রতিযোগিতায় সমান নম্বর পেয়ে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়। অনুষ্ঠান শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র বিতরণ করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এসএম মোর্শেদ, সাংবাদিক রেজাউল হক কৌশিক, কাবেরী মৈত্রেয় ও রিজভী নেওয়াজ।