সানেমের জরিপ
প্রণোদনার টাকা পায়নি ৭৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং করোনার নতুন ধাক্কা সত্ত্বেও গড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার ৬০ দশমিক ৬ শতাংশ পুনরুদ্ধার হয়েছে। যা পূর্ববর্তী রেকর্ড ৫৭ দশমিক ৪ শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। আর ৭৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো প্রণোদনা প্যাকেজ পায়নি। মাত্র ২৩ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে। যে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রণোদনা পেয়েছে, তাদের মধ্যে ৪০ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের জন্য ওই প্যাকেজ যথেষ্ট নয়। ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে আরও সাহায্য দরকার।
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) পরিচালিত সপ্তম পর্যায়ের জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপর নিয়মিত জরিপ করছে সংস্থাটি। সোমবার ওয়েবিনারে এ ফল তুলে ধরেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান।
তিনি বলেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি একটি উদ্বেগজনক ইস্যু। অর্থায়ন ও অন্যান্য সুবিধাপ্রাপ্তিতে বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলো ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনের প্রভাব নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। ওয়েবিনারে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসার অবস্থা এবং প্রত্যাশার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।
সেলিম রায়হান বলেন, ওমিক্রনের কারণে রপ্তানি কমার ঝুঁকি বেড়েছে বলে জানিয়েছে জরিপে অংশ নেওয়া ৮৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান। ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, ওমিক্রনের জন্য অতিরিক্ত স্বাস্থ্য-সতর্কতামূলক ব্যবস্থা এবং সে সংক্রান্ত খরচ বাড়ার ঝুঁকি বেড়েছে। ৯১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, পুঁজি ও শ্রমের খরচ বাড়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ৯৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির ফলে যানবাহনের খরচ বেড়েছে। ৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, তাদের উৎপাদন শক্তির খরচ বেড়েছে। আগের পর্যায়ের জরিপের মতোই, এ পর্যায়ের জরিপেও দেখা গেছে যে, ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে বন্ধক, দীর্ঘসূত্রতা, ব্যাংক-মক্কেল সম্পর্ক ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়।
সেলিম রায়হান প্রণোদনা প্যাকেজের দ্রুত বিতরণ এবং প্যাকেজ পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজীকরণের ওপর জোর দেন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থপ্রাপ্তিতে এবং জোগান প্রবাহে প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা এবং বাংলাদেশ ব্যাংক গৃহীত ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের প্রচার ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন। রেমিট্যান্সের জন্য নির্ধারিত সরকারি প্রণোদনা ২.৫-৩ শতাংশ বৃদ্ধির পক্ষে মত দেন তিনি।
সানেম তিনটি সূচকের ভিত্তিতে তাদের গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেছে। এগুলো হলো-প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (বার্ষিক), প্রেজেন্ট বিজনেস স্ট্যাটাস ইনডেক্স বা পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) এবং বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স (পরবর্তী তিন মাস)। পিবিএসআইর (বার্ষিক) মাধ্যমে ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের সঙ্গে ২০২০ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক) ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের সঙ্গে ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের ব্যবসার অবস্থার তুলনা করা হয়েছে। আর বিজনেস কনফিডেন্স ইনডেক্স বা বিসিআইর মাধ্যমে ২০২১ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর মাসের তুলনায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ২০২২ সালের জানুয়ারি-মার্চ মাসের জন্য প্রত্যাশা কেমন তা প্রকাশ করা হয়েছে।
জরিপে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় যে, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও ওমিক্রন সংক্রমণের ফলে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকাণ্ডে নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে গত বছরের তুলনায় এবং তিন-মাস অন্তর পরিক্রমাতেও ব্যবসায় উন্নতি হয়েছে। তবে কোভিডের নতুন ধাক্কার কারণে, সামনের তিন মাসের জন্য ব্যবসাগুলোর প্রত্যাশা তুলনামূলক কম। অন্যদিকে সার্বিকভাবে ব্যবসার পরিবেশে উন্নতি হয়েছে।
জরিপে দেখা যায়, পিবিএসআই (বার্ষিক) সূচকের মান ৫৬ দশমিক ৭৯ থেকে ৬০-এ উন্নীত হয়েছে। একইভাবে পিবিএসআই (ত্রৈমাসিক)-এ উন্নতি দেখা গেছে। আগের বছরের তুলনায়, অন্যান্য খাতগুলোর চেয়ে তৈরি পোশাক খাত, টেক্সটাইল, রেস্টুরেন্ট, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও ওষুধ শিল্পের ব্যবসায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়েছে। তবে জানুয়ারি-মার্চ ২০২২ এর জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যাশা আগের চেয়ে কমেছে।
৭ম পর্যায়ের জরিপে ১৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে যে, তাদের মতে দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার জোরদার হয়েছে। যদিও ৬ষ্ঠ পর্যায়ে এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ২১ শতাংশ। ২০২১ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরে সার্বিকভাবে ইবিআই সূচকে কিছুটা পতন হলেও জরিপে দেখা যায় এই সূচকে বর্তমানে উন্নতি হয়েছে এবং গত সাত পর্যায়ের জরিপে এই সূচকে সর্বোচ্চ মান দেখা গেছে। অর্থাৎ ব্যবসার পরিবেশে গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ উন্নতি হয়েছে। তবে কর, দুর্নীতি, দক্ষ শ্রমশক্তি, যানবাহনের মান, বাণিজ্য কাঠামো এবং কোভিড ব্যবস্থাপনায় কিছু অবনতি দেখা গিয়েছে। এছাড়া চামড়া, পাইকারি এবং আবাসন খাতে ইবিআইয়ে কিছু অবনতি হয়েছে।