Logo
Logo
×

শেষ পাতা

জমির উদ্দীনেই আস্থা বিএনপিতে নতুন মুখ চায় আওয়ামী লীগ

Icon

এসএ মাহমুদ সেলিম, পঞ্চগড়

প্রকাশ: ২১ মে ২০১৮, ০২:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জমির উদ্দীনেই আস্থা বিএনপিতে নতুন মুখ চায় আওয়ামী লীগ

জেলা সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসনে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে। এলাকায় বিএনপির একটা শক্ত অবস্থান থাকলেও অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে আগামী নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া দলটির জন্য কঠিন হতে পারে। তাছাড়া দুই টার্ম ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির মধ্যে কমিটি নিয়ে বিরোধও এখন প্রকাশ্য।

তবে শাসক দল আওয়ামী লীগেও যে বিরোধ নেই তা নয়। শাসক দলের বিদ্যমান বিরোধ এবং মনোনয়নপ্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেশি হলেও বিএনপির মতো অতটা কট্টর অবস্থানে নেই আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী। তবে প্রার্থীদের প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।

দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক ছাড়াও দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেয়া, এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগদান করে নিজেদের তুলে ধরার একটা প্রবণতা রয়েছে প্রার্থীদের মধ্যে। নির্বাচনী এলাকার মোড়ে মোড়ে ঝুলছে প্রার্থীদের ছবি সংবলিত পোস্টার-ব্যানার। প্রার্থীদের তৎপরতা দেখে ভোটারদের মধ্যেও কিছুটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে পঞ্চগড়ে বিএনপিতে কোনো কমিটি না থাকায় দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কোনো রাজনৈতিক তৎপরতাও নেই দীর্ঘদিন ধরে। অন্যান্য উপজেলার অবস্থা তথৈবচ। মূলত কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপিতে বিরোধের সূত্রপাত হলেও দলের হাইকমান্ড দীর্ঘদিনেও বিরোধ নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

বিএনপির শক্তিশালী এ দুই গ্র“পের একটির নেতৃত্বে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলাম। আরেক গ্র“পের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার। বিএনপির মধ্যে বিদ্যমান এ বিরোধের জন্য তৃণমূল বিএনপি দায়ী করছে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকারের একগুঁয়েমিকেই।

এ আসনে বিএনপির একটি শক্ত অবস্থান রয়েছে। বিশেষ করে নব্বইয়ের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এ আসনে বিজয়ী হন প্রয়াত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা গোলাম হাফিজ, ’৯৬ সালে বিজয়ী হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক স্পিকার ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার।

২০০১ সালে ফের বিজয়ী হন জমির উদ্দীন সরকার। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজাহারুল হক প্রধান। সবশেষ নির্বাচনে বিজয়ী হন ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হক প্রধান। আগামী নির্বাচনেও তিনি নৌকা প্রতীকে জোটের প্রার্থী হতে চাইছেন।

বিএনপিতে অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকলেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকারের পাল্লাই ভারি। তবে কোনো কারণে যদি তিনি মনোনয়ন না পান, সেক্ষেত্রে তার ছেলে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার মোহাম্মদ নওশাদ জমির ধানের শীষে মনোনয়ন চাইবেন।

পঞ্চগড় পৌরসভার পাঁচবারের নির্বাচিত মেয়র জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও পৌর বিএনপির সভাপতি মো. তৌহিদুল ইসলামও নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে রয়েছেন। অপরদিকে ২০ দলীয় জোট থেকে এ আসনে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) প্রয়াত সভাপতি শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে জাগপা কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুঁই মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

তিনিও ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। জাগপার প্রয়াত নেতা শফিউল আলম প্রধানের বড় একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে পঞ্চগড়-১ আসনে। শফিউল আলমের মৃত্যুর পর বাবার জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে চান তার মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান জুঁই।

এদিকে পঞ্চগড়-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, তা নিয়ে নানা হিসাব চলছে। মনোনয়ন নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়িও কম হচ্ছে না। এ প্রশ্নে সবাই তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যারা মনোনয়ন পেতে চাইছেন তাদের মধ্যে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্পের জনপ্রেক্ষিত বিশেষজ্ঞ পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার বলরামপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. নাঈমুজ্জামান মুক্তা। সম্প্রতি নাঈমুজ্জামান মুক্তা উপস্থাপন করেন পঞ্চগড়ের এক স্বপ্নমালা- ‘শুধু রাজনীতি নয়, স্বপ্নের পঞ্চগড় কেমন হবে?।’

শেরেবাংলা পার্কে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে ব্যতিক্রমী ওই অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন প্রকল্পে কাজের সুবাদে মুক্তার একটি পরিচ্ছন্ন ইমেজ গড়ে উঠেছে এলাকায়। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের প্রার্থী হতে আগ্রহী।

এটুআই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকায় পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, জেলা তথ্য বাতায়ন, অনলাইন ভাতা ব্যবস্থাপনা, অনলাইনে জমির পর্চাসহ ডিজিটাল সেবা চালুতে প্রশাসনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করায় ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে পঞ্চগড় জেলা পরপর তিনবার জাতীয়ভাবে সেরা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে এসবই মুক্তার জন্য প্লাস পয়েন্ট। এরই মধ্যে তিনি গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন নিজস্ব স্টাইলে, ব্যতিক্রমী ভঙ্গিতে।

মুক্তা ছাড়াও আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হচ্ছেন- সাবেক এমপি মো. মজাহারুল হক প্রধান, সাবেক স্পিকার ও আইনমন্ত্রী প্রয়াত মির্জা গোলাম হাফিজের জামাতা আটোয়ারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মো. মুনির হোসেন, পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড় সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট। এছাড়া পঞ্চগড়-১ আসনের এমপি বাংলাদেশ জাসদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা তুখোড় ছাত্রনেতা নাজমূল হক প্রধান মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।

মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে মজাহারুল হক প্রধান বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ও জোটের স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছিলাম। আগামী নির্বাচনে তিনি আমাকেই নৌকা প্রতীক দেবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। কথা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা উপকমিটির সহ-সম্পাদক নাঈমুজ্জামান মুক্তার সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে আছি। ভোটাররা আমাকে সেভাবেই দেখছেন। তাদের মনে ঠাঁই দিয়েছে। তারা মনে করছেন, আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে নৌকার জয় সুনিশ্চিত।

নির্বাচনী ভাবনা নিয়ে কথা হয় বর্তমান এমপি নাজমূল হক প্রধানের সঙ্গে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় আছি। গত সাড়ে চার বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছি। ভোটাররা আমার কাজ দেখে আগামী দিনে আমাকে ভোট দেবে। আমি ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। মাঠে আছি, ভোটারদের কাছে দোয়া চাইছি। তিনি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী। তবে কোনো কারণে যদি তিনি নৌকা প্রতীক না পান, তবে দলীয় প্রতীক নিয়েই মাঠে থাকবেন বলে জানা গেছে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর এলাকার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি গণবিচ্ছিন্ন। একমাত্র তার কারণেই দীর্ঘদিনেও জেলা বিএনপির কোনো কমিটি নেই। তাকে মনোনয়ন দেয়া হলে বিএনপির ভরাডুবি হবে।

জাতীয় পার্টি থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সালেক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জোটের প্রার্থী হিসেবে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু সালেক মনোনয়ন পান। কিন্তু তিনি সামান্য ভোটে জাসদের নাজমূল হকের কাছে হেরে হন। পঞ্চগড়-০১-এ জাতীয় পার্টির অর্থাৎ লাঙ্গল প্রতীকের নির্দিষ্ট ভোট রয়েছে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রসঙ্গে আবু সালেক বলেন, ‘গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ভোটে অংশ নিয়েছিলাম।’

জাতীয় পার্টি যেহেতু ক্ষমতাসীন জোটে আছে, সে হিসেবে পঞ্চগড়-১ আসনে এবারও তিনি জোটের মনোনয়ন চাইবেন। তবে জোটের মনোনয়ন না পেলে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপি ও জামায়াতের জোটবদ্ধভবে নির্বাচন না হলে জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আবদুল খালেক স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম