
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ০৭:৪১ এএম

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২২, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ছবি
আরও পড়ুন
উচ্চ মাধ্যমিকে অর্থাৎ একাদশ শ্রেণিতে (কলেজ ও মাদ্রাসা) ভর্তির লক্ষ্যে অনলাইনে আবেদন আজ শুরু হচ্ছে। একইসঙ্গে বিভিন্ন ডিপ্লোমা প্রোগ্রামে ভর্তির আবেদনও নেওয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠানে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শিক্ষার্থীদের আসন বণ্টন করা হবে। এ ছাড়া নিজস্ব উদ্যোগে পরীক্ষার মাধ্যমে চার্চ পরিচালিত কলেজগুলোতেও আবেদন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকার সেন্ট যোসেফ, হলিক্রস, সেন্ট গ্রেগরি ও নটর ডেম কলেজ আছে।
এদিকে এই ভর্তি নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। কেননা, এবার পৌনে ২ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। প্রায় সবার লক্ষ্য একটি ভালোমানের প্রতিষ্ঠানে সুযোগ পাওয়া। কিন্তু ভালো ফলাফলকারীদের তুলনায় আসন নিতান্তই কম। তাই পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারবে কিনা-সেই দুশ্চিন্তা সবাইকে ঘিরে ধরেছে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, এটা ঠিক যে দেশব্যাপী কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেশি থাকে। কিন্তু ওইসব প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যার তুলনায় প্রার্থী থাকে বেশি। যেহেতু সরকারিভাবে আয়োজিত কেন্দ্রীয় পদ্ধতির প্রক্রিয়ায় নম্বরের ভিত্তিতে আসন বণ্টন করা হবে, তাই সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি মাথায় রেখে কলেজ পছন্দ করা উচিত। নইলে দেখা গেছে, অনেকে পছন্দের তালিকায় ভুল করার কারণে জিপিএ-৫ পেয়েও কলেজ বরাদ্দ পায় না।
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি : কলেজ ও মাদ্রাসায় আসনের কোনো সংকট নেই। ২১ লাখ শিক্ষার্থী এবার এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি-ভোকেশনাল উত্তীর্ণ হয়েছে। আর মোট ৮৮৬৪টি কলেজ ও মাদ্রাসা এবং সাড়ে ৫শ’ কারিগরি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে ২৬ লাখ। এরপরও এখানে ভর্তি নিয়েই বেশি উদ্বেগ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
সূত্রমতে, কলেজ ও মাদ্রাসায় আসন ২৪ লাখ ৪০ হাজার ২৪৯টি, আর পলিটেকনিকে আছে ১ লাখ ৬৯ হাজার। মোট উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এসএসসিতে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ২১১জন, দাখিলে ২ লাখ ৭২ হাজার ৭২২ জন আর কারিগরি শাখা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬১৩ জন আছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে ৯ হাজার কলেজ, মাদ্রাসা ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় থাকে হাতেগোনা আড়াইশ প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে প্রায় ২শ কলেজ ও মাদ্রাসা এবং ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এ ছাড়া প্রায় ৫শ বেসরকারি পলিটেকনিক থাকলেও হাতেগোনা ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে আসন আছে সর্বোচ্চ এক লাখ। কিন্তু এবার এসএসসির সর্বোচ্চ সাফল্য হিসাবে বিবেচিত জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৮৩ হাজার ৩৪০ শিক্ষার্থী। এছাড়া জিপিএ-৫ এর নিচে কিন্তু জিপিএ-৩.৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী আছে আরও ১০ লাখ ১হাজার ৫১৩ জন। এসব শিক্ষার্থীরও ভালোমানের প্রতিষ্ঠানের দিকে ছুটতে দেখা যায়। ফলে ভর্তি নিয়ে একধরনের তুমুল প্রতিযোগিতা অপেক্ষা করছে। আর এ থেকেই অনেকের মধ্যে দুঃশ্চিন্তা ভর করেছে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, শিক্ষার্থীরা সাধারণ শিক্ষার ক্ষেত্রে যেসব কলেজের দিকে আকৃষ্ট হয় সেগুলোর প্রায় সবই রাজধানী ও বিভাগীয় শহরে। ওইসব কলেজে আসনের চেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বেশি আবেদন করে থাকে। ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা পর্যন্ত ছিটকে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মধ্যম মানের কলেজে বা শিক্ষার্থী যেই প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তীর্ণ হয়েছে তা স্কুল ও কলেজ হলে সেটিও পছন্দের তালিকায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এদিকে আবেদনের জন্য অনলাইনে আজ কখন সার্ভার খুলে দেওয়া হবে তা নির্দিষ্ট করে কেউই কিছু জানাতে পারেননি। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সচিব তপন কুমার সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, সকাল ৯টার পর যে কোনো সময়ে খুলে দেওয়া হবে। বিষয়টি বুয়েট দেখছে। তারা এখন পর্যন্ত কিছু জানায়নি। একই কথা বলেছেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামান।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন নেওয়া হবে। পরে তিন ধাপে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হবে। এবার শুধু অনলাইনে আবেদন নেওয়া হবে। এর আগে এসএমএসেও আবেদন নেওয়া হতো। আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের ভর্তির ওয়েবসাইট xiclassadmission.gov.bd-তে ঢুকতে হবে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সর্বনিম্ন পাঁচটি ও সর্বোচ্চ ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করবে। ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যারা এসএসসি পাশ করেছে তারা আবেদন করতে পারবে। তবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএসসি পাশ করা যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবে। আর যেসব শিক্ষার্থী এসএসসি ও দাখিলের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করবে তারা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে আবেদন করলেও ফল পরিবর্তনকারীরা ২২ ও ২৩ জানুয়ারি আবেদন করতে পারবে। ২৪ জানুয়ারি পছন্দক্রম পরিবর্তনের সুযোগ দেওয়া হবে। আর ২৯ জানুয়ারি প্রথম দফায় নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে। ভর্তি সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে নীতিমালা আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ভর্তির ওয়েবসাইটেও পাওয়া যাবে।
ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে হয়েছে বলা হয়, ৩০ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে তাকে পুনরায় ফিসহ আবেদন করতে হবে। ৭ ও ৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদন নেওয়া হবে। পছন্দক্রম অনুযায়ী প্রথম মাইগ্রেশনের ফল এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১০ ফেব্রুয়ারি। ১১-১২ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে। ১৩ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ের আবেদন নিয়ে পছন্দক্রম অনুযায়ী দ্বিতীয় মাইগ্রেশনের ফল এবং তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনের ফল প্রকাশ করা হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি। ১৬ ও ১৭ ফেব্রুয়ারি তৃতীয় পর্যায়ে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের সিলেকশন নিশ্চয়ন করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে সিলেকশন নিশ্চয়ন না করলে আবেদন বাতিল হবে।
আবেদন ও নির্বাচন পর্ব শেষে ১৯ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ভর্তি করা হবে। এবার আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ টাকা। নীতিমালায় ঢাকা ও জেলা পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ভর্তি ফিসহ সব ব্যয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুযায়ী, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি ভার্সনে ৫ হাজার টাকা, ঢাকা মহানগরের বাইরে ৩ হাজার, জেলা পর্যায়ে ২ হাজার আর উপজেলা ও মফস্বলে ১ হাজার ৫০০ টাকা আদায় করা যাবে। নির্ধারিত ফির বেশি অর্থ আদায় করা যাবে না। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সেশনচার্জ ও ভর্তি ফি গ্রহণ করা যাবে। উন্নয়ন ফি আদায় করা যাবে না।
ঢাকার চার কলেজ : এদিকে চার্চ পরিচালিত ঢাকার চার কলেজে আজ আবেদন কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী নেবে। এগুলোর মধ্যে নটর ডেম কলেজে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে আবেদন নেওয়া হচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া সেন্ট যোসেফ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হলিক্রস কলেজ ১১ জানুয়ারি এবং সেন্ট গ্রেগরি ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত আবেদন নেবে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কলেজগুলোর ওয়েবসাইটে পাওয়া যাচ্ছে।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ড : এবার ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাশাপাশি টেক্সটাইল, কৃষি, ফিশারিজ, ফরেস্ট্রি এবং লাইভস্টক শিক্ষাক্রমেও এবার ভর্তি করা হচ্ছে। ১৭ মার্চ পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে (www.btebadmission.gov.bd) পাওয়া যাবে।