Logo
Logo
×

শেষ পাতা

শিক্ষার মান বাড়াতে ঢাবিকে এগিয়ে আসতে হবে: রাষ্ট্রপতি

Icon

ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শিক্ষার মান বাড়াতে ঢাবিকে এগিয়ে আসতে হবে: রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা বিভাগের সংখ্যার চেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে শিক্ষা ও গবেষণার মান।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের চাহিদা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে শিক্ষার মান ও শিক্ষার্থীদের সক্ষমতা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি আশা করি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ যাত্রাপথে নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকবে। বুধবার ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ কে আজাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) এএসএম মাকসুদ কামাল ও উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানান ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং। অনুষ্ঠানের শুরুতে শতবর্ষের তথ্যচিত্র প্রদর্শন এবং ‘থিম সং’ পরিবেশন করা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ছয়টি গ্রন্থ ও ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাঙালি জাতির শিক্ষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য, গবেষণা-উদ্ভাবন, মুক্তবুদ্ধিচর্চা, প্রগতিশীল ভাবনা, জাতি-গঠন ও দেশাত্মবোধের চেতনার এক তেজোদীপ্ত আলোকবর্তিকা; বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার এক অনন্য বাতিঘর।

জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সঙ্গে একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের এ মাহেন্দ্রক্ষণ অনুষ্ঠানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ বছরের গৌরবময় ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববাংলায় মুসলিম নেতাদের ক্ষোভ প্রশমনের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত হলেও জন্মলগ্ন থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল অসাম্প্রদায়িক এবং অনন্য বৈশিষ্ট্যের এক গৌরবময় বিদ্যাপীঠ। সূচনালগ্ন থেকেই এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে মুক্তবুদ্ধিচর্চা শুরু হয়।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় শিক্ষা ও জ্ঞানানুশীলনের পটভূমিতে ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিমনের সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুরু থেকেই এ বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে উপমহাদেশে স্বাধীনতাকামী মানুষের উদারনৈতিক মুক্তচেতনানির্ভর ও সামষ্টিক জ্ঞানানুশীলনের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ফলে ঔপনিবেশিক মানসিকতামুক্ত নতুন শ্রেণি সৃষ্টির পথও প্রশস্ত হয়। আর সেই পথ ধরেই এই বিশ্ববিদ্যালয় শেষ পর্যন্ত বাঙালির স্বাধীনতাসংগ্রামেরও সূতিকাগার হয়ে উঠেছিল। প্রতিষ্ঠার প্রথম ২০ বছরের মধ্যে এই বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

এ সময়ে পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে যৌথভাবে আবিষ্কার করেন ‘বোস-আইনস্টাইন কোয়ান্টাম তত্ত্ব’; অন্যদিকে বহুভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমাণ করেন যে, বাংলা ভাষার উৎসস্থল গৌড়ীয় প্রাকৃত ভাষায়, যেটি ছিল বাংলা ভাষার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অবদান।

শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি অর্জনের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মান অর্জন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আব্দুল হামিদ বলেন, বর্তমান শতাব্দীতে উন্নয়নশীল বিশ্বে উচ্চশিক্ষার গতিপ্রকৃতি নিয়ে আমাদের নানাভাবে ভাবতে হচ্ছে।

বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় বিস্ফোরণে সৃষ্ট ডিজিটাল বিভক্তি, উন্নত বিশ্বের সঙ্গে উন্নয়নশীল বিশ্বের যে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে তার মোকাবিলা এবং পুঁজি ও শ্রমনির্ভর অর্থনীতি থেকে জ্ঞাননির্ভর অর্থনীতিতে উত্তরণ এখন শিক্ষার প্রধান বিবেচ্য। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজ্ঞানের সঙ্গে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেতনার সমন্বয় ঘটানোই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হওয়া উচিত। 

ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, আমি গর্বিত, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, যে বিদ্যাপীঠ অনন্তকাল ছাত্ররাজনীতির গৌরব ও ঐতিহ্যকে মাইলফলক হিসাবে ধারণ করে এগিয়ে যাবে। আমি গর্বিত, আমি আইন অনুষদের ছাত্রী, কারণ বঙ্গবন্ধু এই অনুষদের ছাত্র ছিলেন।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শুরুর এক দশকের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেভাবে বিশ্বদরবারে সুনাম অর্জন করেছিল, দুঃখজনক হলেও সত্য সে অগ্রযাত্রার গতি নানা কারণে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার মান নিয়ে নতুন করে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চিন্তা করতে হচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন একাডেমিক মহাপরিকল্পনা। 

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বাজেট দিলে, বড় বড় বিল্ডিং দিলেই অধ্যবসায় বাড়বে, সেটা নয়। অ্যারিস্টটল, সক্রেটিস কিংবা মার্শালের বড় বড় অট্টালিকা ছিল না; কিন্তু তাদের অধ্যবসায় ছিল। জ্ঞানের প্রচেষ্টা ছিল। আমি আশা করব, আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা আছেন, তারাও সেই দিকে অগ্রসর হবেন। আমি গর্ব করে বলতে পারি-আমার বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ।

সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, নির্মিত হচ্ছে শতবর্ষ স্মৃতিস্তম্ভ ‘সেন্টিনারি মনুমেন্ট’-মনুমেন্ট অব ইনফিনিটি রিফ্লিক্টেং ভাস্টনেস, ইনক্লুসিভনেস অ্যান্ড ম্যাগনানিমিটি।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে স্থাপনাটি মানবতাবাদী, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণের উল্লিখিত বার্তা পৌঁছে দেবে যুগে যুগে। একুশ শতকের শিল্পবিপ্লবের যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির ফলে উদ্ভূত নানাবিধ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযুক্ততা অর্জন আমাদের প্রধান লক্ষ্য।
 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম