প্রশ্নফাঁসের ঘটনা
সরকারি ৫ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ ওঠায় সরকারি পাঁচটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
৬ নভেম্বর এ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম পরীক্ষা বাতিলের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এ সম্পর্কিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় পাঁচ ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) ২০১৮ সালের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের ১৫১১টি শূন্য পদের সরকারি নিয়োগের জন্য ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত পরীক্ষা অনিবার্য কারণবশত বাতিল করা হলো।
পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ ও সময় নির্ধারণ হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। এর আগে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে তা বাতিলের দাবি করে আসছেন প্রার্থীরা। এ কারণে ৬ নভেম্বর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত গোয়েন্দা তেজগাঁও বিভাগের জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় প্রশ্নফাঁসে জড়িত একটি চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পাশাপাশি বৃহস্পতিবারও দুইজনকে একই অপরাধে গ্রেফতার করা হয়।
তিন ব্যাংকের পরীক্ষা স্থগিত : এদিকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় সরকারি তিন ব্যাংকের দুই পদের লিখিত পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পৃথক আরেক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৩ ও ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সোনালী, জনতা ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের দুটি পদের লিখিত পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হলে সবাইকে জানানো হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় আহছানউলাহ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি আপাতত সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নিতে পারবে না। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টি যেসব কাজ পেয়েছিল তা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। তাই ১৩ ও ২০ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় তিন ব্যাংকের দুই পদের লিখিত পরীক্ষাও সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে।
দুটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা আজ যথারীতি হবে : অপরদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক পদের নিয়োগ পরীক্ষা আজ যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে। পাশাপাশি ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংকের অফিসার পদের নিয়োগ পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে।
দুই ব্যাংক কর্মকর্তাসহ তিনজন রিমান্ডে : পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আরও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগ। তারা হলেন-জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার এমদাদুল হক খোকন, সোহেল রানা ও ঢাকা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী এবি জাহিদ। বুধবার রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এই তিনজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় এ নিয়ে মোট আটজন গ্রেফতার হলো।
বৃহস্পতিবার দুপুরে তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন তেজগাঁও জোনাল টিমের টিম লিডার অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. শাহাদত হোসেন সুমা। তিনি বলেন, সোহেল রানা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দিয়ে নিজেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাস্টারমাইন্ড হয়ে ওঠেন। অর্থাৎ ক্রেতা থেকে বিক্রেতা হয়ে যান। তিনি এর আগেও দু’বার গ্রেফতার হয়েছিলেন।
ডিবি আরও জানায়, এ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হলো। আগে গ্রেফতারদের মধ্যে তিনজন দুই দিনের রিমান্ডে আছেন। তারা হলেন- মোক্তারুজ্জামান, শ্যামল ও মিলন।
বাকি দুজনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
শনিবার দুপুর ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এক হাজার ৫১১টি পদের বিপরীতে পরীক্ষায় অংশ নেন এক লাখ ১৬ হাজার ৪২৭ জন। বাংলাদেশ ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির আওতায় পাঁচ ব্যাংকের অফিসার (ক্যাশ) নিয়োগে এ পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষার পর চাকরি প্রত্যাশীদের অনেকেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ তোলেন।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত কমিশনার কেএম হাফিজ আক্তার বুধবার বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নসহ পরীক্ষা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল বেসরকারি আহছানউল্লা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির আইসিটি বিভাগ। সেখান থেকেই ফাঁস হয় প্রশ্নপত্র। এ কাজের মূলহোতা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির আইসিটি টেকনিশিয়ান মোক্তারুজ্জামান রয়েল।
তার সহযোগিতায় সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা একটি চক্র অনৈতিক এই কাজের মাধ্যমে পকেটে তোলে ৬০ কোটি টাকা।