ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান
প্রতারণা ও অর্থ লোপাট ঠেকাতে আইন হচ্ছে
মতামত নিতে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক আজ * ইভ্যালির কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে প্রতিযোগিতা কমিশন
মিজান চৌধুরী
প্রকাশ: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রতারণা ও অর্থ লোপাট ঠেকাতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের জন্য পৃথক আইন হচ্ছে। আইন, স্বরাষ্ট্র ও তথ্য মন্ত্রণালয়কে নিয়ে আইনের খসড়া তৈরি করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আইন প্রণয়নের প্রাথমিক অংশ হিসাবে আজ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। গ্রাহক এবং তাদের অর্থের নিরাপত্তা সর্বোচ্চ নিশ্চিত করা হবে এ আইনের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।
বহুল আলোচিত অর্থ লোপাটকারী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বাজার কারসাজির প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে ইভ্যালির বিরুদ্ধে শিগগিরই রায় দিতে পারে কমিশনের আদালত। তবে বাজারে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী প্রতিযোগী আইন বিরোধী কার্যক্রম পরিচালনা করলে যে কোনো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মঙ্গলবার ই-কমার্স প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম এ সতর্কতা জারি করেছেন।
আইন প্রণয়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ই-কমার্স সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. হাফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, গ্রাহকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য পৃথক আইন প্রণয়নের কথা ভাবছে সরকার। সে লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করা হবে। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের আইন আছে। এসব আইন দিয়ে তারা ই-কমার্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে। তিনি আরও বলেন, ই-কমার্সের জন্য পৃথক একটি আইন থাকলে এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রতারণা হবে না। একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের মাধ্যমে চলবে।
সূত্র জানায়, ইভ্যালিসহ ১১টি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অর্থ লোপাটের ঘটনা বেরিয়ে আসার পর সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়েছে। এরপরই এ আইন প্রণয়নের প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে বর্তমান ১ হাজার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চলছে কোনো ধরনের নিবন্ধন ছাড়াই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে এসব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন নেওয়ার কথা। কিন্তু একটি প্রতিষ্ঠানেরও নিবন্ধন নেই। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, প্রযুক্তির সিস্টেম নষ্ট হওয়ায় তাদের নিবন্ধন দেওয়া যাচ্ছে না। শিগগিরই তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ২০২০ সালে বাংলাদেশে ই-কমার্স বাজারের আকার ১৬৬ শতাংশ বেড়েছে। বর্তমান প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে এ খাতে। ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের ই-কমার্স খাত ২৫ হাজার কোটি টাকার ওপরে পৌঁছবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। কোভিড-১৯ মহামারিকালীন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে এ খাতের মোট উদ্যোক্তার মধ্যে মাত্র ৭ থেকে ৮ শতাংশ উদ্যোক্তা ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সাফল্য পেয়েছেন। এসব নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
এদিকে ইভ্যালি নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের তদন্তে বেশ কিছু অনিয়ম ও বাজার কারসাজির প্রমাণ মিলছে। এ নিয়ে সোমবার কমিশনের আদালতে ইভ্যালিকে নিয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে ইভ্যালির সিইও ও চেয়ারম্যান গ্রেফতারের পর আটক থাকায় তাদের পক্ষে একজন আইনজীবী শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। ১৩ অক্টোবর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য আছে।
প্রতিযোগিতা কমিশন সূত্র জানায়, ইভ্যালির অস্বাভাবিকভাবে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম ২০২০ সালে ধরা পড়ে কমিশনের দৃষ্টিতে। ঈদ ধামাকা নামে পণ্যের ওপর ৮০ শতাংশ থেকে ১৫০ শতাংশ পর্যন্ত ক্যাশব্যাক অফার দেওয়া হয়। পরে কমিশন অনুসন্ধান করে দেখতে পায় ইভ্যালির কতিপয় কার্যক্রম প্রতিযোগিতা আইন-২০১২, এর ১৫ ও ১৬ ধারা লঙ্ঘন করছে। এরপর কমিশন স্ব-প্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেছে মামলা নম্বর-০৩/২০২০। মামলার কয়েক দফা শুনানির পর ১৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়া হয়। ওই আদেশে ইভ্যালিকে বাজারে প্রতিযোগিতা আইনের বিরোধী এবং বিরূপ প্রভাব সৃষ্টিকারী কার্যক্রম পূর্ণাঙ্গ রায় না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর কমিশন অধিক তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটি তদন্ত প্রায় শেষ করেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান মো. মফিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ইভ্যালি নিয়ে প্রথমে আমরা স্ব-প্রণোদিত হয়ে একটি মামলা করেছি। ওই মামলার চূড়ান্ত রায় আশা করি শিগগিরই হবে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন রায়ে তাদের কিছু অস্বাভাবিক অফার পরবর্তী আদেশ না দেওয়ার পূর্ব পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে আসছে। আশা করছি শিগগিরই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত রায় দেওয়া সম্ভব হবে।