Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বদলে গেছে জীবনযাত্রার মান

বিদ্যুতের আলোয় ৯৯.৯৯% মানুষ

Icon

মুজিব মাসুদ

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদ্যুতের আলোয় ৯৯.৯৯% মানুষ

দেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত। চর কুকড়ি-মুকড়ি থেকে দুর্গম পাহাড়ের কোথাও আর আঁধার নেই।

সাগরের তলদেশে সাবমেরিন ক্যাবল বিছিয়ে দুর্গম সন্দ্বীপে পৌঁছানো হয়েছে বিদ্যুৎ। সন্ধ্যা নামার আগেই গভীর রাতের নীরবতা নেমে আসত যে দ্বীপে, সেই চর কুকড়ি-মুকড়িতে বিজলি বাতি জ্বলবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি সেখানকার মানুষ।

পদ্মার ওপারে পাবনার সুজানগরের দুর্গম চর রামকান্তপুরও পাল্টে গেছে বিদ্যুতের আলোয়। সেখানে এখন ছোট আকারে ধানকল থেকে শুরু করে হাঁস-মুরগির খামার, যন্ত্রচালিত যানে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। বদলে গেছে চরের হতদরিদ্র মানুষের জীবনযাত্রার মান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা দেশগুলোর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ ও পাহাড়বেষ্টিত ভুটানে শতভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে ২০১৯ সালে।

পাকিস্তানে ৭৩.৯ শতাংশ, আফগানিস্তানে ৯৭.৭ শতাংশ ও ভারতে ৯৭.৮ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় রয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় এসেছে। বাকি মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে চলতি বছরের মধ্যেই।

৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শেষ করেছে সরকার। বাকি দশমিক ১ শতাংশ এলাকার মধ্যে অতি দুর্গম হিসাবে পরিচিত তিন পার্বত্য জেলার কিছু এলাকা রয়েছে এখনো বিদ্যুৎবিহীন। এসব এলাকাও দ্রুত বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে। সে লক্ষ্যে কাজ চলছে।

গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, গ্রামে বিদ্যুৎ যাওয়ার ফলে কৃষি অর্থনীতিতে পড়েছে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব। কৃষি উৎপাদনে বেড়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার। এতে নতুন নতুন জীবিকার পথ তৈরি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন হলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে আরও বড় অবদান রাখবে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ যুগান্তরকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্ত আর বিস্তারিত পরিকল্পনার অংশই বিদ্যুৎ খাতের এ বিশাল সাফল্য। তার অ্যাগ্রেসিভ সাহসই আজকের ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমাদের দল ২০০৮-এর নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দিয়েছিল, সেখানে বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছিল। সরকার গরিব-মধ্যবিত্ত-মেহনতি মানুষের জীবনের পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে। কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ গেলে সেটা এই খেটে খাওয়া শ্রেণির মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে বড় প্রভাব ফেলে, তা ইতোমধ্যে প্রমাণিত।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ১২ বছরে ২ কোটি ৯৯ লাখের বেশি নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছে। এর ফলে দেশের ৯৯.৯৯ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। বেড়েছে বিদ্যুতের মাথাপিছু ব্যবহারও, যা প্রায় ১৪৬ শতাংশ। ২০০৯ সাল পর্যন্ত এই হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ।

২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুতের উন্নয়নে ৪০ বছর মেয়াদি একটি মহাপরিকল্পনা (পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান) করে। সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ নতুন গ্রাহককে সংযোগ দেওয়ার বিস্তারিত পরিকল্পনা করা হয়।

আর ২০১৬ সালে নেওয়া হয় ক্রাশ প্রোগ্রাম ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় ২০২১ সালের মধ্যে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কথা। প্রকল্পটি শেষ হবে চলতি বছরে। তবে টার্গেট পিরিয়ডের আগেই দেশের শতভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

অবশ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করলেও এখনো কম দামে ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীও বলেন, এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো এবং তা সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছি। এরপরই টার্গেট সাশ্রয়ীমূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ। বেশকিছু প্রকল্পের কাজ চলছে, সেগুলো শেষ হলে শহরের মতো দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতে আরও উন্নত সেবা পাবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ সেক্টরে যে উন্নয়ন হয়েছে তা এক কথায় অবিশ্বাস্য। বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে দেশে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন হতো ৩২৬৮ মেগাওয়াট। ২০২১ সালে সেই উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯২ মেগাওয়াট। ১২ বছরে বেড়েছে ১০ হাজার ৫৪২ মেগাওয়াট।

উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট। সেটিও বেড়ে হয়েছে ২৫ হাজার ২৩২ মেগাওয়াট। ১২ বছরে বেড়েছে ২০ হাজার ২৯৩ মেগাওয়াট। একইভাবে ২০০৯ সালে যেখানে বিদ্যুতের গ্রাহক ছিল মাত্র ১ কোটি ৮ লাখ, সেখানে ১২ বছর পর বিদ্যুতের গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭ লাখে।

দুর্গম চরে বিজলির চমক

দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চরকুকড়ি-মুকড়ি। সবুজ ম্যানগ্রোভ ও নাম না জানা পাখির অভয়ারণ্য এ দ্বীপটি ভোলা থেকে ১২০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তবেই পৌঁছাতে হয়। বাহন একমাত্র ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এখানকার জনপদে অধিকাংশ মানুষ সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন।

সৌন্দর্যের এ লীলাভূমিতেও সাগরের তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেব্লের মাধ্যমে পৌঁছে গেছে বিজলি বাতি। একইভাবে কিশোরগঞ্জের মিঠামইনের কাটখাল ইউনিয়নের মুর্শিদপুর হাওড়বেষ্টিত দুর্গম গ্রামের মানুষও চলে এসেছে বিদ্যুতের আওতায়। সরেজমিন এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সর্বত্র বিদ্যুতের ঝিলিক। এসব দুর্গম এলাকায় কখনো বিদ্যুৎ যাবে এটি স্বপ্নেও ভাবেননি সেখানকার বাসিন্দারা।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যমুনার চরে দেশের চারটি জেলা পড়েছে- টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ ও পাবনা। এখানে যমুনার চর ও মূল যমুনা ভরা বর্ষায় আলাদা করা সম্ভব নয়। বিশাল বিশাল এসব চরে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের সীমাহীন কষ্টের সঙ্গে ছিল অভাবও। সম্প্রতি এসব চরেও সাবমেরিন কেব্ল দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা বলেছেন, আধুনিক সভ্যতার সুযোগ-সুবিধার বাইরে থাকা এসব দুর্গম চরাঞ্চলে এখন জ্বলবে বিজলি বাতি।

ভোলা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে অফগ্রিড এলাকার ১৬টি চরের মানুষকেও বিদ্যুতের আওতায় আনা হচ্ছে। এসব চরে প্রায় ৪০ হাজার পরিবারের বসবাস। পটুয়াখালী রাঙ্গাবালী উপজেলাটি বঙ্গোপসাগর তীরে। দুই পাশে পায়রা ও আন্ধার মানিক নদী। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা।

এলাকার মানুষের কাছে সূর্য ডুবে যাওয়া মানে যেন ঘুমের ঘরে ডুব দেওয়া। এ এলাকাটির মানুষ কখনো বিজলি বাতির স্বপ্নই দেখেনি। সেই রাঙ্গাবালিতেই সম্প্রতি পৌঁছে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ। পল্লী বিদ্যুতের শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে এ অঞ্চলগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করায় বিদ্যুৎ সুবিধা পেতে যাচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকার প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার গ্রাহক।

২০১৮ সালের ১৫ নভেম্বর দেশের ইতিহাসে প্রথমবার সন্দ্বীপে বিদ্যুৎ পৌঁছায় সাবমেরিন কেব্লে। এক-দুই কিলোমিটার নয়, সীতাকুণ্ড থেকে সন্দ্বীপ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ দেশের প্রথম বিদ্যুৎ সঞ্চালন সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করা হয় পাবনা সদরের হেমায়েতপুর ইউনিয়নের দুর্গম চরাঞ্চল ভবানীপুর ও রতনপুর।

সরেজমিন এসব চরে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে ধানছাঁটা কল, তেল ভাঙানোর মেশিন, ছোট ছোট লেদ কারখানা ও পোলট্রি শিল্পের ছোট ছোট খামার গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটিতে ৫ থেকে ৩০ জন শ্রমিককেও কাজ করতে দেখা গেছে। এতে এলাকার মানুষের আয়-রোজগার যেমন বেড়েছে, তেমনি স্থানীয় অর্থনীতির পরিসরও বেড়েছে।

সৌরবিদ্যুতে আলোকিত রাজশাহীর প্রত্যন্ত অঞ্চল

রাজশাহীর সদর থেকে শহররক্ষা বেড়িবাঁধ থেকে নৌকায় যেতে হয় চরখিদিরপুর। ঘণ্টাখানেক লাগে দুর্গম এ চরে যেতে। নৌকাই একমাত্র ভরসা। এ চরটির দুই পাশে ভারত। চরখিদিরপুরে সরকার বিনামূল্যে পৌঁছে দিয়েছে ঘরে ঘরে সৌরবিদ্যুৎ।

চরের বাসিন্দা লাবণী সরকার বলেন, এখনকার কেউ আগে সন্ধ্যার পর পড়াশোনা করত না। হারিকেনের তেল পুড়িয়ে পড়ালেখা করাতে চাইতেন না বাবা-মা। এখন বাতির আলোয় জেগে জেগে এসব এলাকার শিশু-কিশোর পড়ালেখা করছে নিজ উদ্যোগে। সারা দেশে বর্তমানে ৫৫ লাখ পরিবার সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। এ ব্যবহারের হারের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান এক নম্বর।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি নেসকো সম্পূর্ণ বিনামূল্যে উত্তরাঞ্চলে ১২ হাজার ৬৯০ পরিবারের ঘরে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে আলো জ্বেলে দেওয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। আরেক বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকো মেঘনার মোহনায় জেগে ওঠা মনপুরায় সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে। এটিই হবে দেশে জীবাশ্ম জ্বালানিমুক্ত শতভাগ বিদ্যুতায়নের এলাকা।

নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী জাকিউল ইসলাম বলেন, বিতরণ এলাকা রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের একদিকে পদ্মা নদী আর বাকি তিনদিক ভারতীয় সীমান্তঘেরা। রাজশাহী শহর থেকে বিচ্ছিন্ন এ চরের বাসিন্দাদের ঘরে চলছে টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্যান ও বৈদ্যুতিক চুলায় রান্না করছে মানুষ। সেখানে সৌরবিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে নেসকো।

তিনি বলেন, চর আষাড়িয়াদহে সৌরবিদ্যুতের আওতায় এসেছে ১ হাজার ৩৫০ জন গ্রাহক। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে এখন দেশে ৫৫ লাখ পরিবার বিদ্যুতের সুবিধায় এসেছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে এতসংখ্যক পরিবারে সৌর প্যানেল স্থাপনের নজির নেই। ২০০৯ সালে দেশে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করত ৯৬ হাজার পরিবার।

গ্রামে গ্রামে পল্লী বিদ্যুতের ফেরিওয়ালা

দেশে এখন ৪ কোটি ৭ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এর বড় অংশই গ্রামের। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন উন্নয়ন বোর্ডের (আরইবি) ৮০টি সমিতি। আরইবির গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ১৬ লাখ। ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তারা ২ কোটি ৪০ লাখ গ্রাহকের ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে। দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা আরইবির কার্যক্রম

রয়েছে ৬১ জেলার ৪৬২টি উপজেলায়। এসব এলাকার ৮৪ হাজার ৮০০ গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। ইতোমধ্যে ৮৪ হাজার ৫০৭টি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।

আরইবি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, দেশে শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রধান চ্যালেঞ্জ দুর্গম চরাঞ্চল ও দ্বীপগুলো। এমন দুর্গম চর ও দ্বীপের ১১৪৬টি গ্রাম চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে নদীর ভেতর বিতরণ খুঁটি স্থাপন (রিভার ক্রসিং) ও নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন কেবল স্থাপন করতে হবে।

এসব গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেলে দেশের কোনো মানুষই আর বিদ্যুতের সুবিধার বাইরে থাকবে না। আরইবি ৩ লাখ ৩৯ হাজার কিলোমিটার নতুন বিতরণ লাইন নির্মাণ করেছে, ৬৪২টি নতুন সাবস্টেশন করেছে। দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের মধ্যে আরইবি সর্বোচ্চ ৭ হাজার ২০০ মেগাওয়াট একাই সরবরাহ করে।

জিডিপিতে বিদ্যুতের ভূমিকা

গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের মতে, বাংলাদেশে ১০ লাখ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পেলে এর প্রভাব সামষ্টিক অর্থনীতিতেও পড়ে। এতে অর্থনীতিতে বাড়তি যোগ হয় প্রায় ৪ কোটি ৬০ লাখ থেকে ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বিআইডিএসের গবেষণা মতে, ২০১০ সালের আগে দেশে চাল আমদানিতে প্রতিবছর প্রায় ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় হতো, সেচ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে, এখন চাল আমদানির প্রয়োজন হয় না।

এ ছাড়া শিল্প ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারার কারণে। বেড়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের পরিমাণ। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎচালিত সেচ নলকূপ ছিল ২ লাখ ৩৪ হাজার। এখন সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৬ হাজারে। বিআইডিএসের গবেষণা বলছে, ডিজেলচালিত সেচযন্ত্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ খরচ ৪৭ টাকা ১৮ পয়সা। যেখানে সেচের বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি মূল্য ৪ টাকা।

সাশ্রয়ী মূল্যে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ এখন মূল চ্যালেঞ্জ

পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিট ২ টাকা ৬১ পয়সা। এ ব্যয় এখন ৬ টাকা ২৫ পয়সায় গিয়ে ঠেকেছে। এ সময় বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ১৩৯ শতাংশ। দ্রুত বিদ্যুৎ উৎপাদনের নীতি নেওয়ায় সরকার রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল (ভাড়া ও দ্রুত ভাড়াভিত্তিক) বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের অনুমতি দিয়েছিল। সে কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে বলে মনে করেন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)-এর জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।

তিনি বলেন, সরকারের উচিত এখন এসব রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়া। তার মতে, সব থেকে সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যায় দেশীয় গ্যাসে। এর উৎপাদন ব্যয় ইউনিটপ্রতি মাত্র ২ টাকা ৮০ পয়সা। তবে গ্যাস সংকটের কারণে দেশে গড়ে ১৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকে। তিনি আরও বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়ার বড় উপায় সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ওপর জোর দেওয়া। সাগরে তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় কমে যাবে। গত ১০ বছরে এ বিষয়ে তেমন অগ্রগতি হয়নি।

মুজিব মাসুদ : সাংবাদিক

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম