Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বরিশালে করোনার চিকিৎসা

আইসিইউর জন্য হাহাকার

দেড় কোটি মানুষের জন্য মাত্র ১২টি আইসিইউ বেড * শয্যা সংকটে মেঝেতে রোগী

Icon

আকতার ফারুক শাহিন, বরিশাল

প্রকাশ: ০৫ এপ্রিল ২০২১, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আইসিইউর জন্য হাহাকার

ফাইল ছবি

করোনার উচ্চ সংক্রমণের এলাকা বরিশালে প্রতিদিনই আশঙ্কাজনক হারে শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। রোববার আরটিপিসিআর ল্যাব সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এখানে শনাক্তের হার ২০ শতাংশের ওপর। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ৬ জেলায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৭ জন। একই সময়ে আরটিপিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হওয়া ১৭৪ জনের মধ্যে ৩৭ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিনই গড়ে ২২ থেকে ২৫ জন করোনার উপসর্গ নিয়ে শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে এই হাসপাতালে এখন আর রোগী ভর্তি করার মতো কোনো শয্যা খালি নেই। তাই মেঝেতে রাখা হচ্ছে রোগী। এভাবে আর কদিন রাখা যাবে তা বলা মুশকিল। সবচেয়ে ভয়ানক বিপদ দেখা দিয়েছে আইসিইউ বেড না থাকা নিয়ে। বিভাগের ৬ জেলা এবং পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর ও শরীয়তপুর মিলিয়ে একমাত্র এ হাসপাতালেই করোনা রোগীদের জন্য রয়েছে মাত্র ১২টি আইসিইউ বেড। এই বেডগুলো পূর্ণ। আইসিইউর অপেক্ষায় রয়েছে আরও অন্তত ২৫ রোগী। চলমান পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে করোনা ওয়ার্ড এবং আইসিইউর শয্যা সংখ্যা বাড়ানো না হলে বড় বিপদের মুখোমুখি হতে হবে।

গেল বছর দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরপরই বরিশালে ১৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ড চালুর ঘোষণা দেন শেবাচিম হাসপাতালের তৎকালীন পরিচালক ডা. বাকির হোসেন। মুখে ঘোষণা দিলেও এখানে ১৫০টি বেড কখনোই ছিল না। সত্যিকার অর্থে সাধারণ করোনা রোগীদের জন্য এখানে বেড ছিল সর্বোচ্চ ৬০-৭০টি। এর সঙ্গে ১২টি আইসিইউ বেড মিলিয়ে সর্বমোট ৮০-৮২টি বেড নিয়ে যাত্রা শুরু করা এ ওয়ার্ডে এখনো সেই সংখ্যকই আসনই রয়েছে। এদিকে বর্তমানে এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন গড়ে ভর্তি হচ্ছে ২৩ থেকে ২৫ জন করে রোগী। শুক্রবার করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয় ১৯ জন। বৃহস্পতিবার এ সংখ্যা ছিল ২৫। শনিবারও ২৩ জন রোগী ভর্তি হয় করোনা ওয়ার্ডে।

হাসপাতাল সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, রোববার পর্যন্ত এই ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি থাকা রোগীর সংখ্যা ১১৮। এরমধ্যে পরীক্ষায় ২৬ জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে করোনা। বাকিরা রয়েছে পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার অপেক্ষায়।’

এদিন সরেজমিন করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাধীন রোগীদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪০ জনই রয়েছেন ওবজারভেশন কক্ষের মেঝেতে ঢালা বিছানায়। পুরো ওয়ার্ডে সাকুল্যে ৬০-৭০টির বেশি বেড চোখে পড়েনি। বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কার করোনা আছে বা কার নেই তা না বুঝে সবাইকে সরাসরি করোনা ওয়ার্ডে নিলে তো যার করোনা নেই তারও আক্রান্তের আশঙ্কা থাকে। এ কারণে উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের প্রথমে অবজারভেশন রুমে রাখা হয়। করোনা পরীক্ষার পর তাদের ব্যাপারে নেওয়া হয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত।’

১৫০ শয্যার করোনা ওয়ার্ডের কথা বলা হলেও বাস্তবে ৬০-৭০টির বেশি বেড না থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদের হাতে বেড আছে, তবে বসানো হয়নি। খুব শিগগিরই বেডগুলো বসিয়ে নেব।’

সাধারণ শয্যার এ সংকটের পাশাপাশি এখানে আইসিইউ নিয়েও চলছে হাহাকার। হাসপাতালের ইনডোর ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সুদীপ হালদার বলেন, ‘এখানে থাকা ১২টি আইসিইউ বেডের মধ্যে সব পূর্ণ। আরও অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন রোগী রয়েছেন যাদের আইসিইউতে রাখা জরুরি হলেও আমরা তাদের তা দিতে পারছি না। তাছাড়া করোনা ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতালে মোট ২২টি আইসিইউ বেড থাকলেও আইসিইউ স্পেশালিস্ট নেই। একজন ডাক্তারের নেতৃত্বে কয়েকজন নার্স পরিচালনা করে আইসিইউ।’

বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. বাসুদেব কুমার বলেন, ‘বিভাগের ৬ জেলার মধ্যে একমাত্র শেবাচিম হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ১২টি আইসিইউ বেড রয়েছে। এছাড়া আর কোথাও আইসিইউ বেড নেই।’

বরিশাল নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব ডা. মিজানুর রহমান বলেন, ‘২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের লোকসংখ্যা ছিল ৮৩ লাখ ২৫ হাজার ৬৬৬ জন। বর্তমানে তা অবশ্যই এক কোটি ছাড়িয়ে গেছে। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর ও শরীয়তপুর জেলার মানুষও চিকিৎসা সেবা নিতে শেবাচিম হাসপাতালে আসেন। এই দুই জেলার লোকসংখ্যাও প্রায় ৪০ লাখ। সব মিলিয়ে প্রায় দেড় কোটি মানুষের চিকিৎসার ভরসাস্থল শেবাচিম হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংখ্যা মাত্র ২২। তার ওপর নেই কোনো আইসিইউ স্পেশালিস্ট। এটা কার ব্যর্থতা? গেল বছরের মার্চে যখন করোনার প্রকোপ শুরু হলো তখনও এইসব সংকটে পড়ে শেবাচিম হাসপাতাল। এক বছর পরও যদি একই অবস্থা থাকে তাহলে স্বাস্থ্য সেক্টরের কি পরিবর্তন হলো?

পুরো বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে শেবাচিম হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘প্রথমেই বলব আমার সীমাবদ্ধতার কথা। আমি ভারপ্রাপ্ত। সবরকম ক্ষমতা আমার নেই। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানকার সমস্যা নিয়ে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিচ্ছি। তারপরও যদি সমস্যার সমাধান না হয় তাহলে কি করার আছে? এটা ঠিক যে করোনা ওয়ার্ডে আইসিইউ বেড রয়েছে মাত্র ১২টি। কিন্তু আমাদের হাতে অতিরিক্ত আরও ২৪টি আইসিইউ বেড রয়েছে। সেগুলো বসানোর জন্য এক্সপার্ট পাঠাতে আমরা ঢাকায় চিঠি দিয়েছি। তারা এসে বসিয়ে দিলে সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হবে। আমাদের চেষ্টায় কোনো ত্রুটি নেই।’ বরিশালের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার বলেন, ‘হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের নানা সমস্যা নিয়ে প্রতিনিয়তই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। সমস্যা সমাধানে যথেষ্ট চেষ্টাও রয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে পারব।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম