সিপিডি ও অক্সফামের প্রতিবেদন
করোনায় কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান ঝুঁকিতে

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

করোনার প্রভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে ১ কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য যা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের। এক্ষেত্রে প্রণোদনা প্যাকেজ পর্যাপ্ত নয়। প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে তেমন সুবিধা নেই। এমনকি এসএমই উদ্যোক্তারাও আশানুরূপ সহায়তা পাচ্ছেন না। পরিস্থিতি উত্তরণে শিল্প ও সেবা খাতে আরও বেশি প্রণোদনার প্রয়োজন।
সিপিডি-অক্সফাম আয়োজিত সংলাপে বৃহস্পতিবার এই তথ্য তুলে ধরা হয়। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এসডিজিবিষয়ক নাগরিক প্ল্যাটফরম এই আয়োজনে সহায়তা করেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম, সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন এবং সিনিয়র রিসার্স ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান।
সিপিডির গবেষণায় বলা হয়, করোনায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে জীবন ও জীবিকায়। যারা কাজ হারিয়েছে, তাদের নতুন করে কর্মক্ষেত্রে নিয়ে আসাটা বেশ চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুসারে দেশে দরিদ্র মানুষের হার মোট জনশক্তির ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ। করোনার কারণে এ বছর তা ৩৫ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। এর মানে হল, অতিরিক্ত ১ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসবে। এছাড়া করোনার কারণে ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানের ঝুঁকিতে রয়েছে, যা দেশের শ্রমশক্তির ২০ শতাংশ। এর মধ্যে ১৭ লাখ যুবক কাজ হারাতে পারে। এ ছাড়াও এপ্রিল থেকে জুনে ৩ লাখ গার্মেন্ট কর্মী কাজ হারিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নীতি ও কাঠামোগত সহায়তা দরকার। যাতে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। সীমিত পরিসরে চলা সেবা ও শিল্প খাতে ঘুরে দাঁড়াতে কার্যকর প্রণোদনার ব্যবস্থা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়েছে সিপিডি। সংস্থাটির অভিযোগ, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনা প্যাকেজে তেমন সুবিধা নেই। এমনকি এসএমই উদ্যোক্তারাও আশানুরূপ সহায়তা পাচ্ছেন না। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, করোনা মোকাবেলায় ১ লাখ ১৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। ডলারের হিসাবে যা ১ হাজার ২০৭ কোটি ডলার। এই প্রণোদনা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ । এশিয়ার ৩১টি দেশের মধ্যে যা ২২তম। এ ছাড়াও এই প্রণোদনা মাথাপিছু ৭৪ দশমিক ৮৬ ডলার। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যা ২৩তম অবস্থানে। অন্যদিকে ভারতে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ৩৭ হাজার ২৩৮ কোটি ডলার, ভিয়েতনামে ২ হাজার ৬৫০ কোটি, পাকিস্তানে ১ হাজার ৫৭৭ কোটি, কম্বোডিয়ায় ২২১ কোটি ডলার প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তা যথেষ্ট নয়। এরপরও বণ্টন ব্যবস্থায় অনেক সমস্যা রয়েছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, করোনা মোকাবেলায় ৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তা এসেছে। যদিও এটি অন্যান্য দেশের তুলনায় কম। বিশেষ করে ভারতের তুলনায়। কিন্তু কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে এই বৈদেশিক সহায়তার প্রভাব কী, তা পরিষ্কারভাবে আমরা পাইনি। আগামী দিনে এটি আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসার কথা শোনা যাচ্ছে। এটি এলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে কী করা হবে, সেটি আগে থেকে নজর দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারি প্রণোদনার তিনটি বিষয়। আয়তন, বিন্যাস ও বাস্তবায়ন। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে বোঝা যায়, আয়তনের ক্ষেত্রে ঘোষিত প্রণোদনা যথেষ্ট নয়। এর অন্যতম কারণ হল দুর্নীতি সক্ষমতার ক্ষেত্রে প্রণোদনা উপযুক্ত মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়নি। এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। দুর্নীতির কারণে এ পর্যন্ত স্থানীয় সরকারের ১২৫ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে হয়েছে। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, প্রণোদনা বণ্টনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তির পরিবর্তে প্রশাসনিক শক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রণোদনা বিতরণে স্বচ্ছতা ও প্রচারণায়ও ঘাটতি ছিল। এসব সমস্যা সমাধানে আগামী দিনে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান একটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।