Logo
Logo
×

শেষ পাতা

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহার

পণ্য ও তেলবাহী জাহাজের শ্রমিকদের ভাতা নির্ধারণ নির্ধারণ হয়নি লঞ্চ শ্রমিকদের ভাতা * নৌপথে পণ্য পরিবহনে তিন দিনের অচলাবস্থার অবসান

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট প্রত্যাহার

নৌপথে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন নৌযান শ্রমিক নেতারা। ধর্মঘটের তৃতীয় দিনে মালিকেরা শ্রমিকদের খোরাকি ভাতা দিতে রাজি হন। এর পরই পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়।

বৃহস্পতিবার রাতে শ্রম মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে এসব ঘোষণা আসে। এর মধ্য দিয়ে মূলত তিন দিন ধরে চলা নৌধর্মঘটের ফলে তৈরি হওয়া অচলাবস্থার অবসান হল।

ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণার পর দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজ শুরু করেন শ্রমিকেরা। তবে চট্টগ্রামের নৌশ্রমিকরা বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মেনে কাজে যোগ দেন। 

বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানিয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে উপস্থিত সবার সমঝোতার ভিত্তিতে কার্গো ও তেলবাহী জাহাজের খোরাকি ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এক হাজার টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজের শ্রমিকরা মাসে এক হাজার টাকা খোরাকি ভাতা পাবেন। এক হাজার এক টন থেকে এক হাজার ৫০০ টন পর্যন্ত জাহাজের শ্রমিকরা এক হাজার ২০০ টাকা ও এক হাজার ৫০১ টন থেকে এর ঊর্ধ্বের ধারণক্ষমতার জাহাজের শ্রমিকরা এক হাজার ৫০০ টাকা হারে খোরাকি পাবেন।

চলতি অক্টোবর মাস থেকেই এ ভাতা কার্যকর হবে। সভায় যাত্রীবাহী লঞ্চের শ্রমিকদের খোরাকি ভাতা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও টাকার পরিমাণ নির্ধারণ হয়নি। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মালিক ও শ্রমিকপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে লঞ্চ শ্রমিকদের ভাতা নির্ধারণ করবেন। 

খোরাকি ভাতাসহ ১১ দফা দাবিতে সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে পণ্যবাহী নৌযান ধর্মঘটের ডাক দেয় বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন। এতে চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরসহ অভ্যন্তরীণ নৌপথে পণ্য পরিবহনে স্থবিরতা দেখা দেয়।

শিল্প-কারখানার পণ্য পরিবহনে চরম বিঘ্ন ঘটে। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বন্দরগুলোতে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবারও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কার্গো জাহাজসহ কয়েকটি মালিক সংগঠনের নেতারা সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘট প্রত্যাহার করলে শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলে জানান। এর কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যায় তারা খোরাকি ভাতা দেয়ার বিষয়ে সম্মত হন। 

এর আগে দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী শ্রমিকদের খোরাকি ভাতা ন্যায্য মন্তব্য করে এদিনই ধর্মঘট সমস্যা সমাধানের ইঙ্গিত দেন। ওই সময় তিনি বলেন, নৌশ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে মূল দাবি খোরাকি ভাতা। এটা অবশ্যই তাদের ন্যায্য দাবি, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।

নৌ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহন অধিদফতর ও বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। আশা করি, এটা আজকের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে সমাধান হবে।

ধর্মঘটে পণ্য খালাসে জটের কী হবে- এমন প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ সমস্যার সমাধান হয়ে গেলেই পণ্যজট সমস্যারও সমাধান হবে। এর আগে প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নতুন হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দ্বিরাইস্বামী সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এরপরই ধর্মঘটের বিষয়ে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা জানান, নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন এক হাজার ৫০০ টনের বেশি ধারণক্ষমতার জাহাজের শ্রমিকদের পাঁচ হাজার টাকা, এক হাজার এক টন থেকে এক হাজার ৫০০ টনের জাহাজের শ্রমিকদের চার হাজার ও এক হাজার টন পর্যন্ত জাহাজের শ্রমিকদের তিন হাজার টাকা খোরাকি ভাতা দাবি করে আসছিলেন।

অপর দিকে মালিকরা আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকার কথা জানিয়ে কোনো খোরাকি ভাতা দেবেন না বলেও বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন। সকালে রাজধানীর বিজয়নগরে কার্গো ভেসেল মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর খোরাকি ভাতার বিষয়ে আলোচনায় বসবেন বলে জানান।

তবে সরকারের মধ্যস্থতায় দিনভর বৈঠকের পর মালিকরা খোরাকি ভাতা দিতে রাজি হয়েছেন। শ্রমিকরা চাহিদার চেয়েও কম ভাতা পেয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে রাজি হন। তবে ১১ দফার বাকি ১০ দফা দিয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি।

শ্রম মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো. শাহ আলম বলেন, শ্রমিকদের যে ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি অনুধাবন করে এ ভাতাই মেনে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলাম।

এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, তিন দিনের ধর্মঘটে পণ্য পরিবহনে ক্ষতি হয়েছে, রাষ্ট্র বিব্রত হয়েছে এজন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। শ্রমিকদের অনুরোধ করব, দ্বিগুণ উৎসাহে কাজ শুরু করুন। মালিকদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করবেন না। 

সভায় মালিকরা নৌসেক্টরে শ্রমিক ও মালিকদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার দাবি জানান। লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার প্রেসিডেন্ট মাহবুবউদ্দীন আহমদ বীরবিক্রম বলেন, সরকারের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিকপক্ষের সমঝোতা হয়েছে। সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।  

মালিক-শ্রমিক নেতাদের বক্তব্যের পর সভাপতির বক্তব্যে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, ধর্মঘট প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে জনজীবনের ভোগান্তির অবসান হল। এ ধর্মঘট নিরসনে নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর উদ্যোগের প্রশংসা করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

এ সভায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কেএম আবদুস সালাম, শ্রম অধিদফতরের মহাপরিচালক একেএম মিজানুর রহমানসহ মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন। 

যুগান্তর ব্যুরো, স্টাফ রিপোর্টার ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

চট্টগ্রাম : ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মেনে কাজে যোগ দিয়েছেন চট্টগ্রামের নৌশ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে তারা কাজে যোগ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নবী আলম মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমাদের ১১ দফা দাবি ছিল।

এর মধ্যে যতটুকু মানা হয়েছে, তা খুবই সামান্য। এ নিয়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। তাই কাজে যোগ দেব কি না এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা মেনে নিয়েছি। লাইটারেজ শ্রমিকরাও কাজে যোগ দিয়েছেন। 

অভয়নগর (যশোর) : যশোরের নওয়াপাড়ায় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিক্ষোভ মিছিল ও সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকালে নওয়াপাড়া পুরাতন বাসস্ট্যান্ড থেকে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নওয়াপাড়া শাখার উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বক্তারা বলেন, দু’জন নৌযান শ্রমিক নেতার অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। 

মোংলা (বাগেরহাট) : নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার কর্মবিরতিতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে মোংলা সমুদ্র বন্দর। এ বন্দরে বিদেশ থেকে মাদার ভ্যাসেলে আনা পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন শ্রমিক-কর্মচারীসহ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা। তবে সন্ধ্যা ৭টায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসে। 

আশুগঞ্জ (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ধর্মঘটের কারণে তিনদিন ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আটকা পড়েছে শতাধিক সার, সিমেন্ট, ধান, গম, তেল ও পণ্যবাহী জাহাজ। বৃহস্পতিবার হাজার হাজার নৌযান শ্রমিক অলস সময় পার করেছেন। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসও সম্ভব হয়নি। তবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর আজ শুক্রবার পণ্য লোড-আনলোড শুরু হবে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম