Logo
Logo
×

শেষ পাতা

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির বাজার

এবার আলুর দাম ঠিক করে দিল সরকার

আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এবার আলুর দাম ঠিক করে দিল সরকার

সিন্ডিকেটের কারসাজি রোধ করতে সরকারের পক্ষ থেকে এবার আলুর দাম নির্ধারণ করে দেয়া হল। হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ এবং খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দাম নির্ধারণ করে বুধবার সকালে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। পাশাপাশি এই দরে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসক ও বাজার কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই আদেশ অমান্য করে বেশি দাম রাখলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে দাম নির্ধারণ করার পরও রাজধানীর খুচরা বাজারে এদিন প্রতি কেজি আলু ৫০ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের পক্ষ থেকে মিল পর্যায়ে চালের দাম নির্ধারণ করা হলেও মিলাররা সরকারের আদেশ অমান্য করছে। তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে চাল বিক্রি করছে। যে কারণে পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমেনি। এখনও ভোক্তারা প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা বাড়তি দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই সরকারের আলুর দাম নির্ধারণের পর হিমাগার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কঠোর মনিটরিং করতে হবে। যাতে সরকার নির্ধারিত দামে আলু কিনে ভোক্তারা উপকৃত হতে পারেন।

চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদফতর জানায়, দেশে গত মৌসুমে প্রায় ১ দশমিক ৯ কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ দশমিক ৯ লাখ টন। অর্থাৎ, গত বছর ৩১ দশমিক ৯১ লাখ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। কিছু আলু রফতানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা নেই।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, এ মৌসুমে একজন চাষীর প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ৮ টাকা ৩২ পয়সা। আর আলুর মৌসুমে যখন হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে তখন প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ দাম ছিল ১৪ টাকা। প্রতি কেজি আলু হিমাগার ভাড়া বাবদ ৩ দশমিক ৩৬ টাকা, বাছাই খরচ শূন্য দশমিক ৪৬ টাকা ও ওয়েট লস শূন্য দশমিক ৮৮ টাকা, মূলধন সুদ ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২ টাকা ব্যয় হয়। অর্থাৎ, উৎপাদন থেকে শুরু করে অন্য খরচ ধরে এক কেজি আলু হিমাগার পর্যন্ত সংরক্ষণে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ২১ টাকা। এ ক্ষেত্রে হিমাগার পর্যায়ে বিক্রিমূল্যের ওপর ২-৫ শতাংশ লভ্যাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ৪-৫ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১০-১৫ শতাংশ লভ্যাংশ ধরে হিমাগারের আলুর দাম ২৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আলু সংরক্ষণকারীর লাভ হয় কেজিপ্রতি ২ টাকা। অন্যদিকে আড়তদারি, খাজনা ও লেবার খরচ বাবদ ৭৬ পয়সা খরচ হয়। সে ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে দাম পড়ে ২৩ দশমিক ৭৬ টাকা। এর সঙ্গে মুনাফা ধরে ২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর ভোক্তা পর্যায়ে সেটা ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে সংস্থাটি। কিন্তু খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়-যা অযৌক্তিক। কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলু ২৩ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ টাকা এবং খুচরা বা ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপপরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, আলুর দাম নজরদারি করতে অধিদফতরের টিম হিমাগার থেকে শুরু করে পাইকারি ও খুচরা বাজারে তদারকি করছে। আশা করি, সরকারের বেঁধে দেয়া দামে ভোক্তারা আলু কিনতে পারবেন। আর কোনো অনিয়ম পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ১১ সেপ্টেম্বর সারা দেশের হিমাগার মালিকদের কাছে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন। এতে বলা হয়: বাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও হিমাগারে সংরক্ষণকারী কৃষক, বেপারি ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় আলু ছাড়ছেন না। কোনো কোনো অঞ্চলে হিমাগার থেকে ধীরগতিতে আলু সরবরাহ হচ্ছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাজারদর নিয়ন্ত্রণ ও ভোক্তা সাধারণের সুবিধার্থে হিমাগার থেকে প্রয়োজনীয় আলু সরবরাহ করতে পরামর্শ দেয়া হল। একইসঙ্গে আলুর দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠার পর আলু মজুদ করে কৃত্রিম সংকট না করার বিষয়ে হিমাগার মালিকদের সতর্ক করেছে কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম