করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ছুঁইছুঁই
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারীতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে।
৯ লাখ ৩২ হাজার ৭১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ২ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৪ জন। শরতকালে ইউরোপের দেশগুলোতে করোনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ফের শুরু করলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে মৃতের সংখ্যা ৮০ হাজার ছাড়িয়েছে।
মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস দাবি করেছেন করোনা বিশ্বকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। করোনার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এদিকে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে চীনের তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা। ইন্দোনেশিয়ায় করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতাল-কবরস্থানেও ঠাঁই মিলছে না। বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স, এপি, আনন্দবাজার ও আল-জাজিরা।
ওয়ার্ল্ডওমিটারসের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৯। মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার জনের।
আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৯১৪। এর মধ্যে ৮০ হাজার ৮০৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৩ লাখ ৪৯ হাজার ৫৪৪। এর মধ্যে ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। উৎপত্তিস্থল চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫ হাজার ২০২। এর মধ্যে ৪ হাজার ৬৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১ হাজার ৫৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে কোভিড-১৯ এ ৮০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সকালে করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ও মারা যাওয়ার তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, এ সময়ে আরও ৮৩ হাজার ৮০৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
এতে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ লাখ ছাড়িয়েছে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ১০ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে করোনা ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ায় বিশ্বজুড়ে ট্রায়াল বন্ধ করে দেয় ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা। কয়েক দিনের বিরতিতে বিশ্বজুড়ে ভ্যাকসিনের এ ট্রায়াল আবারও শুরু হলেও যুক্তরাষ্ট্রে তা স্থগিত রাখা হয়েছে। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।
এর আগে, শনিবার ব্রিটিশ-সুইডিশ ওষুধ প্রস্তুতকারক জায়ান্ট কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকা জানায়, একজন স্বেচ্ছাসেবীর দেহে ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়ার ঘটনা পর্যালোচনা শেষে ব্রিটেনে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল পুনরায় শুরু হয়েছে।
কিন্তু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা মার্কিন খাদ্য এবং ওষুধ প্রশাসন ও অপর একটি সুরক্ষা প্যানেল তদন্ত না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিনটির ট্রায়াল স্থগিত থাকবে বলে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক হানস ক্লুগ বলেছেন, করোনাভাইরাস আরও কঠিন হচ্ছে। অক্টোবর ও নভেম্বরে আমরা আরও বেশি মৃত্যু দেখতে পাব। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ ইউরোপীয় সমাজের দুর্বলতা ও শক্তির বিষয়টি আমাদের সামনে স্পষ্ট করেছে।
এটি সুস্পষ্টভাবে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাস্তব অবস্থাকে প্রকাশ করেছে।
ট্রায়াল শুরু হওয়ার ৬ সপ্তাহের মাথায় করোনার টিকা জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। করোনা রোগীদের সরাসরি সংস্পর্শে আসতে হয় এমন চিকিৎসাকর্মীরা এ টিকা পাবেন বলে সোমবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। আমিরাতে তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে থাকা এ টিকাটির উন্নয়ন করেছে চীনের উহান ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল প্রডাক্টস। সংবাদ সম্মেলনে আমিরাতের ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি ক্রাইসিস অ্যান্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অথোরিটি (এনসিইএমএ) জানিয়েছে, ৩১ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর ওপর টিকার ট্রায়াল চালানো হয়েছে।
চীনা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার রয়টার্স জানায়, চীনের উন্নয়ন করা করোনার চারটি টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের শেষ ধাপে রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত তিনটি টিকা জুলাইয়ে চিকিৎসকসহ জরুরি কর্মীদের দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়। সিডিসির জৈব নিরাপত্তা বিভাগের প্রধান গুইঝেন উ জানিয়েছেন, তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাবলীলভাবে শেষ হয়েছে। নভেম্বর বা ডিসেম্বরে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হতে পারে এ টিকা।
করোনাভাইরাস আষ্টেপৃষ্ঠে আঁকড়ে ধরেছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তাকে। চিকিৎসকরা হুশিয়ারি দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হাসপাতাল আর কবরস্থানগুলো ভরে যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি ও লাশে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণে মানুষ মারা গেছেন ইন্দোনেশিয়ায়। এখন পর্যন্ত সেখানে মৃতের সংখ্যা ৮ হাজার ছাড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছেই। করোনা সংক্রমণের ফলে এপ্রিলে বিধিনিষেধ আরোপ করে ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু জুনে এসে তা শিথিল করে।