
প্রিন্ট: ০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:৩৯ এএম
বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত: দুর্গত এলাকা থেকে নামছে বানের পানি
১২ জেলা এখনো বন্যা কবলিত * ঢাকা জেলা ও রাজধানীর আশপাশের পানি কমছে

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
দুর্গত এলাকা থেকে নেমে যাচ্ছে বানের পানি। আরও অন্তত তিন দিন এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। ৯ আগস্টের পর ভারতের আসাম, মেঘালয়সহ আশপাশের রাজ্যগুলোতে ফের ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। এ কারণে এবারের মৌসুমের চতুর্থ ধাপের বন্যার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র (এফএফডব্লিউসি) বলছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও আপার মেঘনা অববাহিকার নদনদীগুলো থেকে পানি দ্রুত গতিতে কমছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় আরও ৭২ ঘণ্টা পানি হ্রাসের ধারা অব্যাহত থাকবে। আর গঙ্গা-পদ্মা ও আপার মেঘনা অববাহিকায় আরও ৪৮ ঘণ্টা পানি নেমে যাওয়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে। পানি নেমে যাওয়ার গতি বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা জেলা ও রাজধানীর আশপাশের নদনদীর পানিও কমছে। এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।
যুগান্তরের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, পানি নেমে যাওয়ার গতি বাড়লেও এখনও দুর্গত এলাকাগুলো আছে পানির নিচে। বর্তমানে ১২টি জেলা বন্যাকবলিত। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।
এফএফডব্লিউসি দেশের ১০১ স্থানে নদ-নদীর পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে। এর মধ্যে ৭৬ স্থানেই ২৪ ঘণ্টায় পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। আর বেড়েছে মাত্র ২১ স্থানে। বর্তমানে ১২টি নদী ১৬ স্থানে বইছে বিপদসীমার উপরে। এগুলো হচ্ছে- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গুড়, আত্রাই, ধলেশ্বরী, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, কালিগঙ্গা, বংশী ও আড়িয়াল খাঁ। এগুলোর মধ্যে কেবল ঢাকার মিরপুরে তুরাগ নদে ১ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। আর সব নদীর পানিই ২৪ ঘণ্টায় কমেছে।
বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গত কয়েকদিন ভারতের পূর্বাঞ্চলে উল্লেখ করার মতো বৃষ্টিপাত হয়নি। বিপরীত দিকে বঙ্গোপসাগরে পানি নেমে যাওয়ার হার বেড়েছে। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির দৃশ্যমান উন্নতি হচ্ছে। তবে ৯ আগস্টের পর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে ৭০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আছে। এতে ফের বন্যা হতে পারে।
বন্দর (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্দরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে বন্দর খেয়াঘাট সংলগ্ন বাজার, দোকানপাট ও বিভিন্ন ঘাটের যাত্রী পারাপারের জেটি। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে যাত্রীদের। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে নদীর তীরবর্তী এলাকার ঘরবাড়ি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। অধিকাংশ এলাকায় ড্রেন দিয়ে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। পানি বাড়ায় নদীতে তীব্র স্রোত দেখা দিয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্ক কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী শীতলক্ষ্যার পানি বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুইয়া বলেন, আগামী ২-১ দিন পানি সামান্য বাড়তে পারে। তারপর সেভাবে আর বেশি বাড়বে না। মোটামুটি দুই-একদিন বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত অবস্থায় থাকবে। তারপর আস্তে আস্তে পানি কমতে শুরু করবে।
এদিকে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিচু জমি তলিয়ে গেছে। এতে সবজিসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কলাগাছিয়া, শান্তিনগর, মদনগঞ্জ, হরিপুর প্রভৃতি এলাকার নদী সংলগ্ন সবজি ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে। শান্তিনগর এলাকার হাশেম মিয়া বলেন, নদীর তীরবর্তী জমিতে তিনি পুঁইশাক, লাউশাক বুনেছিলেন। সেগুলো এখন পানির নিচে চলে গেছে। এছাড়া বন্দর রুপালী, একরামপুর, সোনাকান্দা, লক্ষণখোলা, ঢাকেশ্বরী প্রভৃতি এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ড্রেন দিয়ে পানি সরতে পারছে না। ফলে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এলাকাবাসী।