
প্রিন্ট: ০১ মে ২০২৫, ০১:০৬ এএম

কূটনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০১৮, ০৫:৩৮ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করাকে বাংলাদেশের জন্য এক বড় মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব হাওলিয়াং সু।
তিনি বলেছেন, এই উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য যুগপৎ চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের সৃষ্টি করেছে। শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা হারানোর ফলে রফতানি ক্ষতির মুখে পড়বে।
তবে বিনিয়োগকারীদের কাছে এই বার্তা যাবে যে, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ উপযুক্ত স্থান। এলডিসি থেকে উত্তরণ ঘটায় দাতারা বাংলাদেশকে সাহায্য দেবে না। তবে উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দেবে।
হাওলিয়াং সু রোববার রাজধানী ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিমত ব্যক্ত করেন। তিনি চার দিনের সফরে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সফরে আসেন। তিনি এলডিসি থেকে উত্তরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দান অনুষ্ঠানে যোগদান করেন।
তিনি এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ আয়োজিত এক কর্মশালায় যোগ দেন। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
সফরের অংশ হিসেবে তিনি রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করতে টেকনাফ সফর করেছেন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর তার প্রভাব সম্পর্কে জেনেছেন।
এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের জন্য মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুর দশা থেকে উন্নয়ন ঘটানোর শর্ত রয়েছে। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশ উত্তরণের এ সব শর্তই পূরণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের এখনও আরও অনেক কিছু করার রয়েছে। তবে অব্যাহতভাবে প্রত্যাশিত শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে বাংলাদেশ এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এই যোগ্যতা ধরে রাখতে পারলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।’
এলডিসি থেকে উত্তরণ কোনো ফাঁদ নয়। তবে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে উত্তরণ একটি বড় ফাঁদ। একে বলে মধ্যম আয়ের ফাঁদ। চীন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশ এই ফাঁদ থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারছে না। বাংলাদেশ ২০৪১ সালে উন্নত বিশ্বে রূপান্তরের টার্গেট নিয়েছে।
জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হল মধ্যম আয়ের ফাঁদ থেকে উত্তরণ ঘটানো। এক্ষেত্রে কাঠামোগত পরিবর্তন, উদ্ভাবনী, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং শাসন ব্যবস্থার উত্তরণ ও বৈষম্য দূরীকরণ জরুরি। নির্বিঘ্ন উত্তরণ ঘটাতে আমাদেরকে কাজ করতে হবে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়নের মাধ্যমে তা অর্জন করতে হবে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করতে হবে। টেকসই নগরায়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
সামাজিক বৈষম্য দূর করতে হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য আনয়ন করতে হবে। এসব প্রয়োজন ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের জন্য।
বাংলাদেশকে প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধন করে উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ মানবসম্পদ উন্নয়ন বিশেষ করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সহস্রাব্দ লক্ষ্য অর্জনে খুব ভালো করেছে। এখন দক্ষতা অর্জন, উদ্যোক্তা হওয়ার যোগ্যতা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার উন্মেষ ঘটাতে হবে।
জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব হাওয়ালিয়াং সু রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সেখানে বনজ সম্পদ ধ্বংস হয়ে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়ছে।
এই প্রভাব এখনই দৃশ্যমান। স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের রোহিঙ্গাদের দেখভাল করতে প্রচুর সময় দিতে হচ্ছে। জাতিসংঘ এসব প্রভাবের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। তবে তিনি এও বলেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের কারণে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণে বড় কোনো সমস্যা হবে না।
এলডিসি থেকে উত্তরণে বাংলাদেশ সঠিক পথে আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সঠিক পথেই আছে। এ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিগত অনেক বছর ধরেই ৬ শতাংশ। বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে বাংলাদেশ রফতানিতে শুল্ক ও কোটা সুবিধা হারানোর ফলে যে ক্ষতি হবে সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৪ সালের পর এসব সুবিধা হারাবে এটা ঠিক।
তবে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার কারণে বেশ কিছু সুবিধাও লাভ করবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের ভালো ধারণা সৃষ্টি হবে।
বাংলাদেশ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণার ফলে এই বার্তা যাবে যে, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশই সঠিক স্থান। দাতারা আরও কোনো সাহায্য দেবে না। তবে কারিগরি সহায়তা দেবে অংশীদার হিসেবে।