Logo
Logo
×

শেষ পাতা

বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে

Icon

মুসতাক আহমদ

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২০, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে

দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু ও আহতের ঘটনা বাড়ছে। এপ্রিল থেকে প্রায় প্রতিদিনই বজ্র দুর্যোগে মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত গত দু’মাসে ১৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে এপ্রিলে ৭০ জন ও মে মাসে ৬০ জন। শনিবার সিলেটে একদিনেই মারা গেছে ৯ জন। প্রতি একটি মৃত্যুর সঙ্গে অন্তত ১০ জন আহত হয়ে থাকে বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। বজ্রপাতে আহতরা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পৃথিবীতে বজ পাতে যত মানুষ মারা যায়, তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। হাওর, বাঁওড় ও বিল এলাকার জেলাগুলোয় বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি। ঝড়-বৃষ্টির সময় খোলা মাঠ, নৌকা ও পথঘাটে যারা চলাচল করে তারাই এর শিকার। বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে বজ পাতের ঘটনা ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগবিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, বিশ্বে বজ্রপাতে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু বাংলাদেশে। ‘আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম’ (প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা) ও লাইটেনিং অ্যারেস্টর (বজ্রপাত নিরোধক) স্থাপনের মাধ্যমে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নেয়া যায়। কাজটি সরকারকেই করতে হবে। বেশি দরকার সচেতনতা। কালো মেঘ দেখা দিলে

উন্মুক্ত প্রান্তরে আর কাজ করা যাবে না। বাসাবাড়িতে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা ও মাঠে-ঘাটে গাছ রোপণ (যা উঁচু হবে) এ ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। ওড়িশায় আর্লি ওয়ার্নিং সিস্টেম বেশ কাজে লেগেছে বলে জানান তিনি।

সূত্র বলছে, শনিবার শুধু সিলেট বিভাগে একদিনে বজ পাতে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। বৃহস্পতিবার ১০ জেলায় মারা যায় ২১ জন। শিক্ষক ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ নঈম গওহর ওয়ারা যুগান্তরকে বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত যে, বজ পাতে একটি মৃত্যু হলে আরও ১০-১৫ জন আহত হন। অন্য দুর্ঘটনায় আহত আর বজ্রাঘাতে আহতের মধ্যে পার্থক্য আছে। এই দুর্ঘটনায় আহতরা স্থায়ীভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে যায়। সাধারণত এই দুর্যোগের শিকাররা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সবচেয়ে কর্মক্ষম ব্যক্তি। মৃত ব্যক্তির পরিবারকে ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়ে শেষ করা গেল। তিনি বলেন, বজ পাত হাতে গোনা কিছু জেলায় ঘটে। বিশেষ করে হাওর, বাঁওড় ও বিল এলাকার জেলাগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। লাইটেনিং অ্যারেস্টর স্থাপনই মূল সমাধান।

ডিজাস্টার ফোরাম নামে একটি সংগঠনের গণমাধ্যম পর্যবেক্ষণ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯ মে পর্যন্ত বজ াঘাতে ৭৩ জনের মৃত্যু ও ২৮ জন আহত হয়েছেন। ২০১৮ সালে নিহতের ঘটনা ২৭৭টি। দেশি-বিদেশি গবেষণা বলছে, দেশে গত কয়েক বছরে কালবৈশাখীর পাশাপাশি বজ পাত বেড়েছে। বজ পাতে মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় ২০১৬ সালের ১৭ মে বজ পাতকে দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. একেএম সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটারে অন্তত ৪০টি বজ পাত হয় বলে আন্তর্জাতিক গবেষণায় উঠে এসেছে। পৃথিবীর বজ পাতপ্রবণ অঞ্চলের একটি বাংলাদেশ। বিশ্বে বজ পাতে যত মানুষ মারা যায় তার এক-চতুর্থাংশই বাংলাদেশে। বিগত বছরগুলোয় অন্তত ১৫ শতাংশ বেড়েছে বজ পাত। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বজ পাতে মৃত্যু নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।

বজ্রপাতের কারণ : বজ পাতে মৃত্যু নিয়ে একক কোনো কারণ চিহ্নিত করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি) সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগে অনেকটাই ধারণানির্ভর তথ্য জানা গেছে। তারা মনে করছেন, তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, জনজীবনে ধাতব পদার্থের ব্যবহারের আধিক্য, মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ পাত বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর এই সব কটির সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক আছে। বুয়েটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিশ্বখ্যাত সায়েন্স পত্রিকার নিবন্ধে ১ ডিগ্রি তাপমাত্রা বেড়ে গেলে বজ পাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাসে বজ পাত বেশি হয়ে থাকে। এই সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতাও থাকে। মূলত জলবায়ু বৃদ্ধির কারণে এই দুটি দুর্যোগই বাড়ছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম