
প্রিন্ট: ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫ পিএম
মন্ত্রিসভায় উঠছে আজ
হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত: খরচ সামলাতে খাবার ও বাড়ি ভাড়ায় টান
৬,৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রথম প্যাকেজ ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা * নতুন প্যাকেজ আজিজিয়া, ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা * ছয় বছরে বেড়েছে ৭০ হাজার ২৫৫ টাকা

উবায়দুল্লাহ বাদল
প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

প্রতীকী ছবি
আরও পড়ুন
হজের ব্যয় বাড়ছে এবারও। জনপ্রতি সাড়ে ৬ হাজার টাকা বাড়িয়ে এ বছরের হজ প্যাকেজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই প্রথম তিন ধরনের প্যাকেজ প্রস্তাব করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবিত হজ প্যাকেজ-১-এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা, গেল বছর ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। আর নতুন প্যাকেজ-৩-এর ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
গতবারের তুলনায় এ বছর ১০ হাজার টাকা বিমান ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। বিমান ভাড়ার এ ঝাঁজ পুষিয়ে নিতে এবার হজযাত্রীদের খাবার, বাড়ি ভাড়া ও ট্রেন ভাড়ার টাকা কমানো হয়েছে। প্যাকেজ-৩ এর আওতাভুক্ত হজযাত্রীদের হেরেম শরিফ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে রাখা হতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
সূত্র জানিয়েছে, বাড়তি ব্যয়ের হজ প্যাকেজ অনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি ২০২০-এর খসড়াও উপস্থাপন করা হতে পারে। বরাবরই নির্দেশনা থাকে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের হজ প্যাকেজের দাম সরকারি ব্যবস্থাপনার হজযাত্রীদের প্যাকেজগুলোর টাকার কম হতে পারবে না। সূত্রমতে, এবারও তেমন নির্দেশনা থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ধর্ম সচিব মো. নুরুল ইসলাম রোববার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা মানুষের ধর্মীয় অনুভূতি ও সার্বিক দিক বিবেচনা করে ৩টি হজ প্যাকেজের খসড়া চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছি। আশা করি, কাল (আজ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। বিমান ভাড়া ১০ হাজার টাকা বৃদ্ধির কারণে কিছু কিছু খাতের ব্যয় আমাদের কমাতে হয়েছে। এর সবই চূড়ান্ত করবে মন্ত্রিসভা।’
সূত্রমতে, গত বছর প্যাকেজ-১ এর মক্কা-মদিনায় বাড়ি ভাড়া ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৬২ টাকা। এবার তা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার টাকা। অর্থাৎ এ খাতে খরচ কমানো হয়েছে ৬ হাজার ৯৬৮ টাকা। মিনা-আরাফা ও আরাফা-মুজদালিফা-জামারা ট্রেন ভাড়া বাবদ খরচ ধরা হয়েছে ৬ হাজার টাকা।
গত বছর এর পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৮১২ টাকা। এছাড়া হাজীদের খাবার বাবদ খরচ ২ হাজার টাকা কমিয়ে ধরা হয়েছে ২৬ হাজার ৩৫০ টাকা। অন্যদিকে গত বছরের বিমান ভাড়া ১ লাখ ২৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৩৮ হাজার করা হয়েছে। এছাড়া হজ ফি বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন করে ইন্স্যুরেন্স ফি নির্ধারণ করেছে সৌদি সরকার।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী যুগান্তরকে বলেন, ‘বিমান ভাড়া বৃদ্ধি, সৌদি সরকার হজ ফি বাড়ানোয় এবং ইন্স্যুরেন্স ফি প্রবর্তন করায় এবার হাজীদের খাবার, বাড়ি ও ট্রেন ভাড়ার টাকা কম নির্ধারণ করা হয়েছে। হজ ফি বাড়ানো হয়েছে ৩১৫ রিয়াল বা ৭ হাজার ২৪৫ টাকা (এক রিয়াল সমান ২৩ টাকা ধরে), ইন্স্যুরেন্স ফি ১০৪ রিয়াল বা ২ হাজার ৩৯২ টাকা। এ বাড়তি ব্যয় সমন্বয় করতে কিছু ক্ষেত্রে আমাদের ব্যয় কমাতে হয়েছে।’
ছয় বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, হজের ব্যয় বাড়ছে প্রতিবছরই। এ সময়ে জনপ্রতি হজের ব্যয় বেড়েছে ৭০ হাজার ২৫৫ টাকা। প্রতিবছর গড়ে বেড়েছে ১১ হাজার ৭০৯ টাকা। গত বছর প্যাকেজ-১ ছিল ৪ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ টাকা, এ বছর বাড়ানো হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। প্যাকেজ-২ গত বছর ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, এবার বেড়েছে ১৬ হাজার টাকা।
২০১৮ সালে প্যকেজ-১ ছিল ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৯২৯ টাকা। প্যাকেজ-২-এ ৩ লাখ ১৯ হাজার ৩৫৫ টাকা। এর আগে ২০১৭ সালে প্যাকেজ-১ ছিল ৩ লাখ ৮১ হাজার ৫০৮ টাকা, ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৬০ হাজার ২৮ টাকা এবং ২০১৫ সালে ছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭৪৫ টাকা।
যা চলতি বছরের চেয়ে ৭০ হাজার ২৫৫ টাকা কম। ২০১৭ সালে প্যাকেজ-২ ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ২৪০ টাকা, ২০১৬ সালে ৩ লাখ ৪ হাজার ৯০৩ টাকা এবং ২০১৫ সালে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০৬ টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় ৬৩ হাজার ৭৯৪ টাকা কম।
এ বছরই প্রথম তুলনামূলক স্বল্পমূল্যের হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম যুগান্তরকে বলেন, হজ প্যাকেজ-৩ নামের এ প্যাকেজের মূল্য প্রস্তাব করা হয়েছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা।
এ প্যাকেজের আওতায় যাওয়া হজযাত্রীদের মক্কা-মদিনায় হেরেম শরিফ থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের বাড়িতে রাখা হবে। সেখানকার বাড়ি ভাড়া কিছুটা কম। এরই মধ্যে মক্কা-মদিনার আজিজিয়া, নাক্কাসা, রুসাইফা, কুদা ও সৌকিয়ায় বাড়ি দেখা হয়েছে। সম্ভবত সেখানকার বাড়িতেই এ প্যাকেজের হজযাত্রীদের রাখা হবে।
এ বছর বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। গত বছর ছিল ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা। সূত্রমতে, ঢাকা-জেদ্দা-ঢাকা রুটে সাধারণ মানুষ সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকায় যাতায়াত করতে পারেন। বছরের অন্য সময় ওমরায় বিমান ভাড়া সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়া সারা বছরই প্রবাসী শ্রমিক ও অন্যান্য যাত্রী ৪০ হাজার টাকায় ঢাকা থেকে সৌদি আরবের রিটার্ন টিকিটে আসা-যাওয়া করছেন। অথচ হজযাত্রীদের বিমান ভাড়া গুনতে হচ্ছে ১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। একই বিমানে পাশের আসনে বসা সাধারণ যাত্রীর তুলনায় একজন হজযাত্রীকে প্রায় তিনগুণ বা এক লাখ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।
হজের সময় হজ ফ্লাইট ছাড়াও নিয়মিত ফ্লাইটে হজযাত্রী পরিবহন করা হয়। বিমান ভাড়া নিয়ে হজযাত্রী ও হাবের ক্ষোভ রয়েছে। হাব নেতাদের অভিযোগ, তিনগুণ ভাড়া দিয়েও হজযাত্রীরা বাড়তি কোনো সুবিধা পান না। বরং কখনো ফ্লাইট বাতিল, আবার কখনও দীর্ঘ ট্রানজিটে দুর্ভোগে পড়েন। আবার ফ্লাইট বিলম্বের কারণে হজযাত্রীদের দিনের পর দিন হজক্যাম্পে ইহরাম বেঁধে অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হজ হতে পারে। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর মক্কায় করা সৌদি হজ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ২০২০ সালের হজ চুক্তি অনুযায়ী এবার হজে যেতে পারবেন ১ লাখ ৩৭ হাজার বাংলাদেশি। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৯৮ জন যাবেন সরকারি ব্যবস্থাপনায়, ১ লাখ ১০ হাজার হজযাত্রী বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাবেন। মোট হাজযাত্রীর অর্ধেক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, বাকি অর্ধেক সৌদিয়া এয়ারলাইন্স পরিবহন করবে।