৪১টি দেশে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা, শক্তিশালী পাসপোর্ট তালিকায় বাংলাদেশের উন্নতি
ইকবাল হোসেন
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিশ্বের শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নাগরিকত্ব ও পরিকল্পনা বিষয়ক সংস্থা দ্য হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্স প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে এ তথ্য উঠে এসেছে। কোন দেশের পাসপোর্ট কত শক্তিশালী তা নিয়ে প্রতি বছর এ সূচক প্রকাশ করে সংস্থাটি। তাদের ২০২০ সালের র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে ৯৮তম অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০০৬ সালে এ র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট ছিল ৬৮-তে। এরপর থেকে ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে। ২০১৮ সালে নেমে আসে ১০০তম অবস্থানে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৯৯তম।
একটি দেশের পাসপোর্ট দেখিয়ে কতটি দেশে ভিসা ছাড়া বা অন অ্যারাইভাল ভিসা নিয়ে ভ্রমণ করা যায় তার ওপর ভিত্তি করে র্যাংকিংটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, র্যাংকিংয়ে উন্নতি হলেও বাংলাদেশকে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা দেয়া দেশের সংখ্যা একই রয়েছে। বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ৪১টি দেশে ভিসা ছাড়াই প্রবেশ করা যায়। এশিয়ায় এ সুবিধা দেয় ভুটান, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, শ্রীলংকা ও পূর্ব তিমুর। এছাড়াও আফ্রিকার ১৬টি, ওশেনিয়া অঞ্চলের ৭টি ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ১২টি দেশে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘ভিসা ফ্রি’ সুবিধা মেলে।
বাংলাদেশ সম্প্রতি ই-পাসপোর্ট বা ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট যুগে প্রবেশ করেছে। দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম এবং বিশ্বে ১১৯তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ই-পাসপোর্টের প্রচলনের কারণে বাংলাদেশের অবস্থান আগামীতে আরও শক্তিশালী হবে। অন্যদেশে ভ্রমণের ক্ষেত্রে বন্দরের ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আরও অনেক সহজ হবে।
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, পাসপোর্টের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে নাগরিকত্বের মূল্যায়নই করা হয়। এই র্যাংকিংয়ের মাধ্যমে জানা যায়- আপনার দেশ সম্পর্কে বা আপনার পাসপোর্ট সম্পর্কে তাদের মূল্যায়নটা কী। পাসপোর্টের এ র্যাংকিংটা দেশের অর্থনীতি, শাসন ব্যবস্থা ও দেশের মানুষের অবস্থাসহ অনেক বিষয় বিবেচনা করে তৈরি করা হয়।
তিনি বলেন, কোন দেশের পাসপোর্টের দাম বেশি বা কম, সে বিষয়ে কিছু স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে র্যাংকিংটা করা হয়। কোন দেশের পাসপোর্টের মূল্য কত, তা নির্ভর করে ওই পাসপোর্টের কী গুণাগুণ রয়েছে তার ওপর। যেমন মনে করেন- ব্রিটিশ বা আমেরিকান পাসপোর্ট জাল করা খুব কঠিন, সে তুলনায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট জাল করা বেশ সহজ। যেই দেশগুলোর পাসপোর্টের মূল্য বেশি, মনে করা হয় যে ওই দেশগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোগুলো শক্তিশালী, তাদের অর্থনীতি ভালো, তাদের গভর্ন্যান্স (শাসনপদ্ধতি) ভালো এবং বিশ্বের কাছে ওই দেশগুলোর একটা ইতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে।
পাসপোর্টের র্যাংকিং উপরের দিকে থাকার প্রধান সুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, আপনি একটু ভালো ব্যবহার পাবেন। কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলে হয়তো কিছুটা নমনীয়ভাবে দেখা হয়। আর র্যাংকিংয়ে নিচের দিকে থাকলে ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে পাসপোর্টধারী সম্পর্কে প্রয়োজনের অতিরিক্ত খোঁজখবর নেয়া থেকে শুরু করে ভিসার আবেদন নাকচও করতে পারে কোনো দূতাবাস।
তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে মালদ্বীপ। র্যাংকিংয়ে দেশটির অবস্থান ৬১। দেশটির পাসপোর্ট ৮৫টি দেশে ভিসাবিহীন প্রবেশের সুযোগ দেয়। এ অঞ্চলে তাদের পরে ৮৪তম অবস্থানে রয়েছে ভারতের পাসপোর্ট। তাদের রয়েছে ৫৮টি দেশে ভিসাবিহীন ভ্রমণের সুযোগ। শ্রীলংকার পাসপোর্ট ৯৭তম, নেপাল ১০১তম আর পাকিস্তান রয়েছে ১০৪তম অবস্থানে।
এ সূচকে মোট ১০৭টি দেশের পাসপোর্ট রয়েছে। এ তালিকায় ধারাবাহিকভাবেই শীর্ষে রয়েছে জাপান। ১৯১টি দেশে জাপানের পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারেন। গত বছর এ সংখ্যাটি ছিল ১৯০। জাপানের পরেই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের পাসপোর্ট। ১৯০টি দেশে তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসার সুযোগ রয়েছে। তৃতীয়তে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার পাসপোর্টে সুযোগ রয়েছে ১৮৯টি দেশে। শক্তিশালী পাসপোর্টের তালিকায় পরবর্তী ১৩টি দেশ ইউরোপের।
১৮৯টি দেশে অন অ্যারাইভাল ভিসার সুবিধা নিয়ে জার্মানির পাসপোর্ট দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে। চতুর্থে আছে ইতালি ও ফিনল্যান্ড। পঞ্চম শক্তিশালী পাসপোর্ট তিনটি দেশের- স্পেন, লুক্সেমবুর্গ ও ডেনমার্ক। ষষ্ঠ অবস্থানে সুইডেন ও ফ্রান্স। এরপরের অবস্থানে আছে সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডসসহ ৫টি দেশ। তালিকায় যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে অষ্টম অবস্থানে। দেশটির পাসপোর্টে ভিসা ছাড়া যাওয়া যায় ১৮৪টি দেশে। যুক্তরাজ্যও আছে একই অবস্থানে।