Logo
Logo
×

শেষ পাতা

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মীজানুর রহমান: মেধাবীদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে জবি

তদবির করে কেউ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পারে না * ২০২১ সাল থেকে পিএইচডি ছাড়া কেউ অধ্যাপক হতে পারবে না * ১১ জানুয়ারি প্রথম সমাবর্তন, গাউন ও ক্যাপ উপহার দেয়া হবে গ্র্যাজুয়েটদের

Icon

মুসতাক আহমদ ও হুমায়ুন কবির

প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ০৬:০০ পিএম

প্রিন্ট সংস্করণ

একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. মীজানুর রহমান: মেধাবীদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে জবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। ফাইল ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভাবমূর্তি উন্নয়ন। নিবিড় চেষ্টায় সেটা সম্ভব হয়েছে। সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে- ইতিমধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের সবচেয়ে ভালো শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের বিগত দিনের একাডেমিক ফলাফল, বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরি অর্জনে সংখ্যাগত আধিপত্য দ্বারা মেধাবী শিক্ষার্থীদের সমাহারের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়া শিক্ষকদের একাডেমিক যোগ্যতা-দক্ষতা ও বিদেশে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় তাদের অংশগ্রহণই শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে।

যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বৃহস্পতিবার এসব কথা বলেন। ঐতিহ্যবাহী কলেজ থেকে ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয় এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। আগামী ১১ জানুয়ারি এর প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।

পুরান ঢাকার আরেকটি ঐতিহ্যবাহী মাঠ ধূপখোলায় আয়োজন করা হয়েছে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। প্রথম সমাবর্তন সামনে রেখে যুগান্তরের মুখোমুখি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের এই অধ্যাপক ও বিশিষ্ট বাজার বিশেষজ্ঞ।

অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি প্রকৃত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে আমাকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। তা সাধ্যমতো আমি পালন করার চেষ্টা করছি। আমার প্রথম লক্ষ্য হচ্ছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের ও দেশের মধ্যে আধুনিক মানসম্মত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

এজন্য প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি উন্নয়ন। সেটা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সেশনজট ও অনির্ধারিত ছুটির কবল থেকে মুক্ত করা জরুরি ছিল। সরকারের পাশাপশি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সহায়তায় সেটা সম্ভব হবে।

আমি মনে করি, দেশের মধ্যে একটি সুনামধারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার সূচনা সম্ভব হয়েছে। হয়তো আমরা আমাদের পাঠাগার, ল্যাবরেটরি, সেমিনারসহ অন্যান্য সুবিধা এখনও সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারিনি। তবে আজকে মেধাবী শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আমাদের অনেকদূর যেতে হবে। 

আকর্ষণের কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার দৃষ্টান্ত তুলে ধরতে গিয়ে ভিসি বলেন, সৌভাগ্যের ব্যাপার হচ্ছে- ঢাকা শহরে বা পুরনো ইমেজ পরিবর্তন করার কারণে দেশের সবচেয়ে ভালো ছাত্রছাত্রী ভর্তির জন্য আবেদন করছে। একেকটি আসনের বিপরীতে ৫০ জন পর্যন্ত ভর্তির লড়াই করছে।

শিক্ষার্থী ভর্তিতে কঠোর পরীক্ষা পার করতে হয়। প্রকৃত মেধাবীকে বেছে নিতে এবং জালিয়াতি রোধ করতে আমরাই প্রথম লিখিত পরীক্ষা প্রবর্তন করি। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এ দৃষ্টান্ত গ্রহণ করেছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিসিএস থেকে শুরু করে দেশে যেসব চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হচ্ছে তাতে এ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় স্থানে থাকে। ঢাকার বাইরের যেসব পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় আছে তারা বর্তমানে চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আমাদের সঙ্গে আসতে পারে না। সবমিলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের রেকর্ড দেখলে সবাই বুঝবে, এ বিশ্ববিদ্যালয় কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।

অপরদিকে, অন্য পুরনো বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে অনেক শিক্ষক এখানে যোগ দিচ্ছেন। বিভাগে প্রথম-দ্বিতীয় হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এখানে যোগ দিচ্ছে। আমরা সবচেয়ে ভালো ফলা করা শিক্ষার্থীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করি। এসএসসি-এইচএসসি মিলে জিপিএ ৯-এর কম পাওয়া কেউ আবেদন করতে পারে না।

অনার্স-মাস্টার্স পর্যায়ে সিজিপিএ ৩.৫-এর কম পাওয়া কেউ আবেদন করতে পারে না। এমন ফলাফল চাওয়ার কারণে অনেক সময়ে একটি পদের জন্য ১-২ জনের বেশি প্রার্থীই পাওয়া যায় না। তবে বেশি প্রার্থী থাকলে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। তদবির করে কেউ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হতে পারে না। শিক্ষক নিয়োগে কোনো অনিয়ম নেই।

তিনি বলেন, বর্তমানে ১২০ জনের বেশি শিক্ষক নিউজিল্যান্ড, জাপান, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে ডিগ্রি শেষ করে দেশে ফিরেছেন। বাকিরা ফিরে এলে গবেষণা ও শিক্ষায় একটা আন্তর্জাতিক মানসম্মত শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হবে প্রতিষ্ঠানে।

পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিকীকরণ আরও বিস্তৃত হবে। তিনি বলেন, এছাড়া শিক্ষকের মানে এ বিশ্ববিদ্যালয় আরও এগিয়ে। ১০৪ অধ্যাপকের মধ্যে ১০১ জনই পিএইচডি ডিগ্রিধারী। আমাদের একটা লক্ষ্য আছে। সেটি হচ্ছে, চাকরির বয়স যাই হোক আর অন্য যতই যোগ্যতা থাকুক না কেন, ২০২১ সালের জুন থেকে পিএইচডি ডিগ্রি না থাকলে কেউ অধ্যাপকের জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

এ ধরনের বিধান ইতিমধ্যে সিন্ডিকেট অনুমোদন করেছে। তার মতে, শুধু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধরনের বিধান নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেকে অধ্যাপক হয়েছেন যার পিএইচডি নেই। স্বচ্ছতার সঙ্গে কর্মকর্তাও নিয়োগ দেয়া হয় বলে জানান তিনি। পাশাপাশি শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।

মীজানুর রহমান বলেন, যোগদানের পর আমি চিন্তা করি এ বিশ্ববিদ্যালয়কে পুরান ঢাকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে পরিণত করব। পহেলা বৈশাখসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে এখানকার অধিবাসীরা শাহবাগ এলাকায় গিয়ে থাকেন। আমরা এখানে মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রবর্তন করি। গত ৬ বছরে এটা এ এলাকার অন্যতম আকর্ষণীয় ইভেন্টে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবশ্যই দরকার। কিন্তু এসবের মানবিকতার সম্মিলন ঘটানোও অত্যাবশ্যক। আমি এসে দেখি অনেক বিভাগ আছে। কিন্তু সুকুমারবৃত্তি চর্চার বিভাগ নেই। এরপর নাট্যকলা, সঙ্গীত, চারুকলা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আইনসহ বিভিন্ন বিভাগ চালু করা হয়।

বর্তমানে এখানে ৩৮টি বিভাগ রয়েছে। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা ছিল, শিক্ষাজীবন শেষ করে শিক্ষার্থীরা এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে সংস্কৃতিবান হয়ে বের যায়। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। বর্তমানে অনুমতিপ্রাপ্ত ২২টির বেশি সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। 

ড. রহমান বলেন, এছাড়া ক্রীড়া কর্মকাণ্ডও নিয়মিত পরিচালিত হচ্ছে। ধূপখোলা মাঠের একটি অংশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের, যেটা ক্যাম্পাস থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। তারপরও আমাদের নিয়মিত ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন নিয়মিত আন্তঃবিভাগ টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়।

এ ছোট্ট জায়গার মধ্যে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইনডোর গেমসের আয়োজন করা হয়েছে। খেলাধুলার ক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে থাকার একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, সম্প্রতি নেপালে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মারজানা স্বর্ণপদক পেয়েছে। জাতীয়ভাবে পরিচয় দেয়ার মতো এমন আরও অনেক খেলোয়াড় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে।

বিভিন্ন ইভেন্টে তারা অংশগ্রহণও করছে। এছাড়া দু’বার বড় বড় সঙ্গীত উৎসব ও নাট্যোৎসব এবং আন্তর্জাতিক সেমিনার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের ৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে। যার ফলাফল হচ্ছে, আমাদের গ্র্যাজুয়েটরা ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছে। এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীনসহ কয়েকটি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উল্লেখ করেন। 

ভিসি বলেন, গবেষণা আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। ২০১৩ সালের দিকে এ খাতে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৫ লাখ টাকা। বর্তমানে গবেষণা বাবদ বরাদ্দ ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এছাড়া বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি, পরিবেশ অধিদফতর এসব থেকে শিক্ষকরা ব্যক্তিগত বা যৌথভাবে যোগাযোগ করে বর্তমানে ৫ কোটি টাকা গবেষণা প্রকল্প চলছে। চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ইলিশ মাছের ওপর গবেষণা চলছে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত সমস্যা একটি বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল। আমি ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০০ কোটি টাকার একটা বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রকল্প আবার চালু করেছি। নতুন ভবনের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ৭৩০ আসনবিশিষ্ট ছাত্রী হল নির্মাণ করা হয়েছে। কেরানীগঞ্জে ২০০ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে।

ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোনো গ্র্যাজুয়েটের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও বড় প্রাপ্তি হচ্ছে সমাবর্তন। দেশে-বিদেশে সব জায়গায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া শেষে সনদটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরের কাছ থেকে পেতে চায়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও গত ১৫ বছরে একটি সমাবর্তনও হয়নি, আয়োজন করা যায়নি। যথেষ্ট কারণ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সব চ্যালেঞ্জ জয় করে আগামী ১১ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন হচ্ছে।

তিনি বলেন, দুটি পর্বে বিভক্ত থাকবে সমাবর্তন। প্রথম পর্বে রাষ্ট্রপতি গ্র্যাজুয়েটদের ডিগ্রি প্রদান করবেন। দ্বিতীয় পর্বে থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সকাল ১০টায় সমাবর্তন শুরু হবে প্রথম পর্ব ধূপখোলা মাঠে। দ্বিতীয় পর্ব হবে মূল ক্যাম্পাসে কলাভবনের সামনে। সেখানে স্টেজ নির্মাণ করা হচ্ছে। সঙ্গীত বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান লাইসা আহমেদ লিসার নেতৃত্বে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।

ভিসি বলেন, এতবড় আয়োজনের আনুষঙ্গিক সহায়ক বিষয়টি যোগাড় করা ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ। সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমাবর্তন করে থাকে ধার করা গাউন আর ক্যাপ দিয়ে। কিন্তু সবক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গাউন নিয়ে এলেও ২০ হাজার হবে না। একই পরিস্থিতি ক্যাপের ক্ষেত্রে।

এগুলো সংগ্রহের পর ফেরত দেয়া আরেক চ্যালেঞ্জ। এনে সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ আছে। এসব কারণে আমরা ঠিক করলাম, নতুন গাউন ও ক্যাপ তৈরি করব। সেটা আর ফেরত নেব না। উপহার হিসেবে গ্র্যাজুয়েটদের দেব, যেটা তারা স্মৃতি হিসেবে রাখতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে এটা বাংলাদেশে প্রথম এবং নতুন ঘটনা হবে।

এই বড় চ্যালেঞ্জ আমরা উতরাতে পেরেছি। গাউন, ক্যাপ ছাড়াও আমরা উপহার হিসেবে কিছু জিনিস দিচ্ছি। এগুলো হচ্ছে, স্যুভেনির, টাই, অফিসে ব্যবহারের জন্য একপি পেনহোল্ডার, বাসায় রাখার জন্য প্লেট, কলম। এসব উপহার থাকবে একটি উন্নতমানের ব্যাগের মধ্যে।

সমাবর্তন সবার দৃষ্টিগোচর করতে চারুকলার সহযোগী অধ্যাপক ইমাম হোসেন বিনা পারিশ্রমিকে একটি দৃষ্টিনন্দন লোগো তৈরি করে দিয়েছেন। উপহার সামগ্রীতে লোগো এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোগ্রাম থাকবে।

তিনি বলেন, সমাবর্তনের প্রধান অনুষঙ্গ হচ্ছে শিক্ষার্থীর হাতে মূল সনদ তুলে দেয়া। প্রত্যেক সনদে ভিসিকে স্বাক্ষর করতে হয়। আমরা সেটাও ইতিমধ্যে শেষ করেছি। প্রায় ২৫ হাজার স্যুভেনির ছাপা শেষে চলে এসেছে। স্যুভেনিরে প্রত্যেক গ্র্যাজুয়েটের নাম থাকবে। আমরা ১৭ জনকে এমফিল-পিএইচডি ডিগ্রি দিচ্ছি।

তাদের সনদগুলো শুধু রাষ্ট্রপতি হাতে হাতে তুলে দেবেন। প্রথম এই আয়োজনে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পদার্থবিজ্ঞানী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস অরুন কুমার বসাক।

ভিসি বলেন, বিদেশে সমাবর্তনে সাধারণত গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে বাবা-মা যোগ দেন। স্থান সংকুলানের কারণে হয়তো আমরা মূল ভেন্যুতে বাবা-মাকে জায়গা দিতে পারব না। তবে তারা ওইদিন সন্তানের সঙ্গে আসবেন। এসে মূল ক্যাম্পাসে অবস্থান নেবেন। সন্তানের নিজের বিভাগে যেতে পারবেন।

সমাবর্তনে নিবন্ধিত শিক্ষার্থীসহ শিক্ষক এবং প্রায় আড়াই হাজার অতিথি যোগ দেবেন বলে আমরা আশা করছি। শিক্ষা পরিবারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে শিক্ষামন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকারের মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, সচিব, রাষ্ট্রদূত, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, ইউজিসি-পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্য, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি-কোষাধ্যক্ষ, সংবাদপত্রের সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট নাগরিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্র্যাজুয়েটরা ইতিমধ্যে অনলাইনেই রঙিন ছবি সংবলিত প্রবেশপত্র পেয়ে গেছে। তিন অংশের এই প্রবেশপত্রের একটি দিয়ে গাউন এবং উপহার সামগ্রী নেবে। আগামী ৭ থেকে ১০ জানুয়ারি নিজ নিজ বিভাগ থেকে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।

১০ জানুয়ারি সকালে সমাবর্তন মহড়া অনুষ্ঠিত হবে। এতে মূলত সমাবর্তন অনুষ্ঠানের একটি ডামি মঞ্চায়ন হবে। কিভাবে রেজিস্ট্রার ঘোষণা করবেন, বক্তব্য কিভাবে হবে, গ্র্যাজুয়েটরা কিভাবে রাষ্ট্রপতির সামনে আসবেন সনদ গ্রহণের জন্য ইত্যাদির মহড়া হবে। এতে এসএসফ, ফায়ার ব্রিগেড এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য সদস্যরা থাকবেন।

 

ড. মীজানুর রহমান জবি

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম