যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার
উন্নয়নের সুফল জনগণ পাচ্ছে: ঘোড়াশাল পৌরসভার মেয়র
মো. জাহাঙ্গীর কবির, পলাশ, নরসিংদী
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
মো. শরীফুল হক। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় ঘোড়াশাল পৌরসভার অবস্থান। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ২৭.৫ বর্গকিলোমিটার। এখানে ১ লাখ ১২ হাজার লোকের বাস। মোট ভোটার সংখ্যা ৫৮ হাজার ৩শ’ জন। শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত ঘোড়াশাল শিল্প এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এখানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, ইউরিয়া সার কারখানা, জুট মিল, ইস্পাত ও পেট্রোলিয়াম কারখানা রয়েছে। ঘোড়াশাল একটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. শরীফুল হক।
২০১৬ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী জাহাঙ্গীর হোসেনকে পরাজিত করে তিনি দ্বিতীয়বারের জন্য মেয়র নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সময় মেয়রের দায়িত্বে থেকে তিনি রাস্তাঘাট নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রতিটি সড়কের পাশে বাতি স্থাপন, আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম, পৌর কেন্দ্রীয় মসজিদ, পৌর ঈদগাহ নির্মাণসহ দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছেন। তবে কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাসহ কিছু সমস্যা এখনও রয়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক জনপ্রতিনিধির অভিযোগ, ‘সুযোগ-সুবিধার তুলনায় প্রতি বছর পৌরকরের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছে। পয়ঃনিষ্কাশন ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ত্রুটি রয়েছে। এ কারণে ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বেশ কয়েকটি রাস্তা চলাচলের অযোগ্য। চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য রয়েছে। কিন্তু প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।’
এসব অভিযোগের জবাব ও নিজের সফলতার কথা জানাতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র মো. শরীফুল হক। তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীর দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দেয়ার জন্য নিজেকে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত রেখেছি। গত ৭ বছরে যেসব উন্নয়ন কাজ করেছি তার সুফল এখন পৌরবাসী পাচ্ছেন।
আগে সামান্য বৃষ্টি হলেই মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারত না। শুকনো মৌসুমেও অনেক এলাকায় পানি আটকে থাকত। ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট জায়গা ছিল না। অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা ছিল। রাতে পৌর এলাকার পথগুলো ঘুটঘুটে অন্ধকার থাকত। নির্বাচিত হয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছি।
ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য ডাম্পিংয়ের জায়গা ক্রয় করেছি। এডিপি, ইউজিপ-২সহ বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থায়নে পৌরসভার রাস্তাঘাট নির্মাণ, প্রতিটি ওয়ার্ডে সড়কবাতির ব্যবস্থা করেছি। আমার স্বপ্ন ছিল পৌরবাসীর জন্য একটি আধুনিক পৌর অডিটোরিয়াম কাম কমিউনিটি সেন্টার, একটি পৌর ঈদগাহ, একটি আধুনিক পৌর মসজিদ নির্মাণ করা।
এ তিনটি কাজ সম্পন্ন করেছি। পৌরসভার সৌন্দর্য বর্ধনে ঘোড়াশাল চত্বর এবং পলাশ বাসস্ট্যান্ড চত্বর নির্মাণ করেছি। বর্তমানে ওটওউচ-২ প্রকল্পের আওতায় পৌরসভায় প্রায় ৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। সম্প্রতি রেলস্টেশনের পাশে থাকা ঝোপঝাড় পরিষ্কার করে ফুলের বাগান করে শহরের প্রবেশমুখে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার কাজ চলছে।
ইতিমধ্যে বড় বড় ৬টি ড্রেনসহ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ৭, ৮, ৯নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি রাস্তা সংস্কার ও ড্রেন নির্মাণের পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছি। শিগগিরই টেন্ডারের মাধ্যমে কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। ফলে এসব ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতাসহ অনেক সমস্যার সমাধান হবে।’
ঘুষ, দুর্নীতি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের স্থান আমার ও আমার এমপির কাছে নেই। পৌর এলাকার যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ, বিচার-সালিশ নিজে তদারকি করি।’ সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। পলাশের এমপি ডা. আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপের সহযোগিতায় পৌরসভাকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদকমুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছি।’
পৌরসভার একাধিক পয়েন্টে মাদক বেচাকেনার অভিযোগের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘মাদক একটি সামাজিক ব্যাধি। একদিনে এ সমস্যা নির্মূল করা সম্ভব নয়। তবে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। পৌরসভায় যারা মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ধরার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছি।’
হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র শরীফুল হক বলেন, ‘অনেকেই আছেন যারা ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা হওয়ার পর পৌর কর দেননি। কর দিয়ে অভ্যস্ত না হওয়ার কারণে এমনটা মনে হচ্ছে। আসলে সরকারিভাবে যা ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক কম ট্যাক্স নির্ধারণ করা হয়েছে।
আধুনিক পৌরসভা ও শতভাগ নাগরিক সুবিধা পেতে হলে অবশ্যই নির্ধারিত হারে ট্যাক্স দিতে হবে।’ শিক্ষার মান উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘২টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ করেছি। পৌর এলাকার প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিত নিশ্চিত করতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছি।
মেয়েরা যাতে নিবিঘ্নে স্কুলে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। চিহ্নিত বখাটেদের ব্যাপারে পরিবার ও পুলিশ প্রশাসনকে অবহিত করেছি।’ মেয়র বলেন, ‘বিএনপি জোট আমলে ঘোড়াশাল পৌরসভার কোনো উন্নয়নই হয়নি। এটি ছিল অবহেলিত একটি পৌরসভা। সেই পৌরসভাকে কোথায় নিয়ে এসেছি তা মানুষই দেখছে।’