যুগান্তরের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে নান্দাইল পৌরসভার মেয়র: সব এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছি
এনামুল হক বাবুল, নান্দাইল (ময়মনসিংহ)
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
নান্দাইল পৌরসভার মেয়র রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া্। ফাইল ছবি
ময়মনসিংহ জেলা সদরের ৪৫ কিমি. দক্ষিণে নান্দাইল পৌরসভার অবস্থান। একটি ব্যক্তি মালিকানাধীন ভবনে ভাড়ায় অস্থায়ী কার্যালয়ে ১৯৯৭ সালে পৌরসভাটির যাত্রা শুরু। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত পৌরসভাটির আয়তন ২৩ বর্গকিমি.।
এখানে ৩৩ হাজারের বেশি মানুষের বাস। মোট ভোটার ২৩ হাজার ২২৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১০ হাজার ৬২৯ জন ও নারী ভোটার ১০ হাজার ৭৭৬ জন। ২০১৯ সালে পৌরসভাটি ‘খ’ থেকে ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। বর্তমানে মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রফিক উদ্দিন ভূইয়া। ২০১৫ সালের ৩০ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র আজিজুল ইসলাম পিকুলকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন।
দায়িত্ব নিয়ে তিনি উন্নয়নমূলক অনেক কাজ করেছেন। ওয়ার্ডগুলোর বিভিন্ন রাস্তা পাকাকরণসহ প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছেন। এ কাজের জন্য তিনি পৌরবাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছেন। এরপরও রয়ে গেছে অনেক সমস্যা। কিছু কিছু রাস্তার অবস্থা এখনও খারাপ। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো নয়। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।
নান্দাইল সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক প্রভাষক অরবিন্দ পাল অখিলের অভিযোগ, ‘প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে এখানে যেসব নাগরিক সুবিধা থাকা দরকার তা নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই। জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও শিশুদের জন্য বিনোদনের কোনো পার্ক নেই।’
১নং ওয়ার্ডের ভোটার হাজী মো. রফিকুল ইসলাম খোকনের অভিযোগ, ‘ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ হাইওয়ের পাশে নরসুন্দা ব্রিজের কাছে নদীতে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে ও দুর্গন্ধে জনসাধারণকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক এলাকায় সড়ক বাতি নেই। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেই।’ এসব অভিযোগের জবাব দিতে যুগান্তরের মুখোমুখি হয়েছিলেন মেয়র রফিক উদ্দিন ভূইয়া। তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে শত ভাগ বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে পৌরসভা থেকে অন্ধকার দূর করেছি। দায়িত্ব নেয়ার পর এ পর্যন্ত প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন রাস্তা নির্মাণ ও সংস্কার করেছি। কিছু কাজ চলমান আছে। পৌরসভায় গ্রামীণ জনপথ থাকায় অধিকাংশ রাস্তা কাঁচা। পর্যায়ক্রমে এসব রাস্তা পাকা করা হচ্ছে। পাকা করা হচ্ছে ড্রেনও।’
বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা না থাকা প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি টেন্ডারের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে পৌর এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সমস্যা থাকবে না।’
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত ও গতিশীল করার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা করব। একটি নির্দিষ্ট স্থান চিহ্নিত করে সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করব।’
রফিক উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘পৌরসভার ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নরসুন্দা নদী খনন ও নদীর পাড় বাঁধাই করে সৌন্দর্য বর্ধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ আনোয়ারুল আবেদীন খান তুহিন এমপিকে অবহিত করেছি।’
তিনি বলেন, ‘পৌরবাসীর প্রাণের দাবি ত্রিমোহনী ব্রিজ নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পৌর অডিটোরিয়াম ও পৌর গণপাঠাগার স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।’
বিনোদন পার্ক নির্মাণের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘পার্ক নির্মাণের জন্য ৩ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কাজ শিগগিরই শুরু হবে। অর্থের সংকটের কারণে জায়গা কিনে খেলার মাঠ করা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারি বরাদ্দ পাওয়া গেলে জমি ক্রয় করে একটি বড় ধরনের খেলার মাঠ করার পরিকল্পনা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ডেঙ্গু মশা নিধনে ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। প্রতিটি এলাকায় মশক নিধন অভিযান চালানো হবে। এছাড়া নরসুন্দা নদীর দুই পাড়ে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
মেয়র বলেন, ‘পৌরসভার নিজস্ব কার্যালয় এখনও করতে পারিনি। এটা আমার ব্যর্থতা। তবে কার্যালয় নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন সম্পর্কে রফিক উদ্দিন ভূইয়া বলেন, ‘নির্বাচনের সময় যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। তার ৭৫ শতাংশই ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। বাকিগুলো আগামী নির্বাচনের আগেই বাস্তবায়ন করতে পারব বলে আশা করছি।’