Logo
Logo
×

শেষ পাতা

পিআরই-বিশ্বব্যাংক গ্রুপের যৌথ সম্মেলন

আঞ্চলিক বাণিজ্যে দেশের জিডিপি ২ ভাগ বৃদ্ধি সম্ভব

আমাদের রাজস্ব নীতি ব্যবসাবান্ধব নয়-ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ * টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ -সালমান এফ রহমান

Icon

যুগান্তর রিপোর্ট

প্রকাশ: ১৩ মে ২০১৯, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আঞ্চলিক বাণিজ্যে দেশের জিডিপি ২ ভাগ বৃদ্ধি সম্ভব

ছবি: সংগৃহীত

টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে আঞ্চলিক বাণিজ্য বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির তাগিদ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানো গেলে দেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ১-২ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।

বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটলেও এ অঞ্চলে তার পরিমাণ খুবই কম। শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণও জরুরি এবং নীতিমালায়ও আনতে হবে পরিবর্তন।

রোববার পলিসি রিসার্স ইন্সটিটিউট (পিআরই) এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ‘লিভারজিং গ্রোথ অপরচ্যুনিটিস ইন দ্য নেইবারহুড’ শীর্ষক সম্মেলনে এ তাগিদ দেয়া হয়েছে।

রাজধানীর বনানীতে পিআরই কার্যালয়ে সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান ড. জাহিদী ছাত্তারের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডাইরেক্টর ড্যান ড্যান চ্যান। এছাড়া প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের রিজিওনাল ইন্টিগ্রেশন, মাইক্রোফিন্যান্স, ম্যাক্রোইকোনমিস, ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট গ্লোবাল প্র্যাকটিসের লিড ইকোনমিস্ট এবং কো-অর্ডিনেটর সঞ্জয় কাঠুরিয়া। আলোচক ছিলেন, বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) পরিচালক মো. আসিফ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ এমপ্লয়ারস ফেডারেশনের (বিইএফ) প্রেসিডেন্ট কামরান টি. রহমান প্রমুখ।

এদিকে দুপুরে পৃথক দুটি সেশনে পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার ‘বাংলাদেশ ট্রেড রিজিম অ্যান্ড ট্রেড পলিসি- দ্য ওয়ে ফরোয়ার্ড’ এবং বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. সঞ্জয় কাঠুরিয়া ‘ইন্টারন্যাশনাল এক্সপেরিয়েন্স অন ট্রেড লিবারালাইজেশন’ শীর্ষক দুটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, আমাদের রাজস্বনীতি ব্যবসাবান্ধব নয়। প্রতি বছর কিছু সমস্যা দেখা দেয়, পরে তা সমাধান হয়। আবার নীতি স্থায়ী হয়নি। ব্যবসার স্বার্থে অন্তত ৫ বছর মেয়াদি নীতি গ্রহণ করা উচিত।

তিনি বলেন, অনেক নিত্যপণ্যের ওপর বিলাসবহুল পণ্যের চেয়ে বেশি সম্পূরক শুল্ক আরোপিত আছে। এগুলো ভোক্তাদের জন্য ক্ষতিকর। পাশাপাশি ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতাও তৈরি হয় না। নীতি গ্রহণের এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখা দরকার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সালমান এফ রহমান বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রীও মনে করেন, বেসরকারি খাত নির্ভর প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন। সরকারের সুযোগ-সুবিধা বেসরকারি খাত কাজে লাগিয়ে প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। এক সময় একটি মোবাইল কোম্পানি ছিল। আ’লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক, টেলিভিশন স্টেশন, বিদ্যুৎ এবং বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন খাত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের জন্য খুলে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য, বস্ত্র ও পাট, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা। এটি দক্ষিণ এশিয়ায় উদাহরণ। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছি। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে অবশ্যই প্রতিবেশীদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে হবে। রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ প্রয়োজন। আগামী বাজেটে ইস্যুটি থাকবে। পোশাক খাতের পাশাপাশি অন্য খাতেও সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। ওয়ানস্টপ সার্ভিস সেন্টারসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়িত হচ্ছে। তাছাড়া ব্যবসায় দক্ষতা উন্নয়ন অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আওতায় স্কিল ডেভেলপমেন্ট অথোরিটি স্থাপনের কাজ চলছে।

আঞ্চলিক বাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়া বিশ্বের যে কোনো এলাকার চেয়ে পিছিয়ে উল্লেখ করে ড. সঞ্জয় কাঠুরিয়া তার গবেষণা প্রতিবেদনে বলেছেন, এ অঞ্চলে বিদেশি বাণিজ্যের মাত্র ৫ শতাংশ হচ্ছে নিজেদের মধ্যে। আসিয়ান দেশগুলো বহির্বাণিজ্যের ২৬ শতাংশ করে নিজেদের মধ্যে। ইইউতে আঞ্চলিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৬০ শতাংশ। আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়াতে ‘সাফটা’ ভূমিকা রাখতে পারেনি। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের মধ্যে ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্যের সম্ভাবনা আছে। অথচ হচ্ছে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার।

এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য আড়াই গুণে উন্নীত হতে পারে। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে ১ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার মূল্যের বাণিজ্য করতে পারে। বিপরীতে হচ্ছে মাত্র ৭৬০ কোটি ডলার। ভারতের সঙ্গে হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গেও বাণিজ্য অন্তত ৫৪ কোটি ডলার, শ্রীলংকার সঙ্গেও আরও ৪২ কোটি ডলারের বাণিজ্য বৃদ্ধি সম্ভব। উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়িয়ে বাংলাদেশের ভোক্তা, উদ্যোক্তাসহ সংশ্লিষ্ট সবাই লাভবান হতে পারেন। ড. জাহিদী ছাত্তার বলেন, বাংলাদেশ তিনটি শর্ত পূরণ করেই এলডিসি থেকে উত্তরণ করতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নই নয়, মানবসম্পদ ও সামাজিক উন্নয়নেও অগ্রগতি হয়েছে। দারিদ্র্যও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক বাণিজ্য বৃদ্ধির সুযোগ থাকলেও তা বিস্তৃত হয়নি। নানা বাধা রয়েছে। অন্যান্য পণ্য রফতানি বাড়ানোর সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

ড্যান ড্যান চ্যান বলেন, বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বিশ্বের দুটি বড় অর্থনীতির দেশ ভারত ও চীন। ফলে প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ কাজে লাগানোর প্রয়োজন। আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমলাতান্ত্রিকতাসহ নানা নন ট্যারিফ বাধা আসে। ট্রেড পলিসি ইস্যু একটি বড় বিষয়। মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে রফতানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কমছে। রোগীদের চিকিৎসা সহজ করতে ঢাকা-চেন্নাই সরাসরি বিমান চালু করা দরকার। কামরান টি. রহমান বলেন, রফতানি পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। তবে ভারতে অ্যান্টি ডাম্পিং শুল্ক আরোপের কারণে আমাদের পাটজাত পণ্য রফতানিতে সমস্যা হচ্ছে।

বিকালের সেশনে মূল প্রবন্ধে ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, দেশে উৎপাদিত প্রায় ৯৫ শতাংশ পণ্য আমদানিতে সুরক্ষা দেয়া রয়েছে। ফলে তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা গড়ে উঠছে না।

ড. সঞ্জয় কাঠুরিয়া বলেন, বাণিজ্য উদারীকরণের মাধ্যমে বিশ্বের অনেক দেশ লাভবান হয়েছে। চিলি, মেক্সিকো ও ভিয়েতনাম অন্যতম। ১৯৯৪ সালে যেখানে ভিয়েতনামে রাজস্ব আয়ের ৩০ দশমিক ৬ শতাংশ আসত প্যারা ট্যারিফ (সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট) থেকে, সেখানে বাংলাদেশ ২০০২ সালে ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ আদায় করত। বাণিজ্য সহজীকরণের ধারাবাহিকতায় ২০০০ সাল ভিয়েতনামে প্যারা ট্যারিফ থেকে ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ রাজস্ব আদায় হতো, আর ২০১৬ সালে বাংলাদেশে ২৮ দশমিক ৯ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে।

মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অংশ নেন বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্স ফেলো ড. মনজুর হোসেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম