
প্রিন্ট: ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৩১ পিএম

যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ফাইল ফটো
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রুদ্ররূপ ধারণ করছে প্রকৃতি। প্রায় প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও বজ ঝড় ও বজ বৃষ্টি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি প্রাক-মৌসুম নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আবহাওয়া ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা।
চলতি মার্চে তারা দুই থেকে তিনটি হালকা থেকে মাঝারি এবং মাঝারি থেকে তীব্র মাত্রার কালবৈশাখী হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ মেয়াদি পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী এপ্রিলে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিুচাপ সৃষ্টি এবং এর রেশ ধরে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বৈশাখ আসার আগেই চরম গরম পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জলবায়ু বিশেষজ্ঞ বুয়েটের পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক ড. একেএম সাইফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিস্থিতি রুদ্ররূপে আবির্ভূত হয়েছে। যখন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়, তখন বৃষ্টি হচ্ছে। নানা দুর্যোগও তৈরি হচ্ছে।
তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরের নিনো থ্রিপয়েন্টফোর অঞ্চলের পানির তাপমাত্রার ভিত্তিতে বিশ্ব জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রিত হয়। যদি সেখানকার পানির তাপমাত্রা ৩০ বছরের গড় উষ্ণতার চেয়ে বেড়ে যায় তখন এল নিনো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ অংশে আবহাওয়া স্বাভাবিকের চেয়ে অস্থির আচরণ করে। এল নিনো পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ঝড়-বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, আকস্মিক বন্যা বেড়ে যায়।
এবার প্রশান্ত মহাসাগরের নিনো অঞ্চলের পানির তাপমাত্রা দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এটা পাঁচ মাস পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ সময় উষ্ণতা নিুগামী না হলে এল নিনোর ঘোষণা আসতে পারে।
রোববার আবহাওয়া অধিদফতর (বিএমডি) স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মার্চে ক্রমান্বয়ে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হবে।
মার্চের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু মাসের শেষের দিকে দেশের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ওপর দিয়ে একটি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি ধরনের (৩৮-৪০ ডি সে) তাপপ্রবাহ বয়ে যাবে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কাও আছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, চলতি মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দু’দিন মাঝারি অথবা তীব্র কালবৈশাখী বা বজ -ঝড় ও দেশের অন্যত্র তিন থেকে চার দিন হালকা বা মাঝারি কালবৈশাখী বা বজ -ঝড় হতে পারে।
বিএমডির এক কর্মকর্তা জানান, মার্চ এভাবে পার হলেও এপ্রিল হতে পারে আরও রুদ্র। এ মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দুটি নিুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এ ছাড়া দুই থেকে তিন দিন দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চলে তীব্র কালবৈশাখী বজ -ঝড় ও দেশের অন্যত্র চার থেকে পাঁচ দিন হালকা-মাঝারি কালবৈশাখী বজ ঝড় হতে পারে।
একই সঙ্গে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এপ্রিলে একটি তাপ প্রবাহও হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়। মঙ্গলবার প্রায় সারা দিন ঢাকার আকাশ ছিল মেঘলা। দিনের তাপমাত্রাও কম ছিল। শুধু ঢাকা নয়, দেশের অন্য স্থানেও আকাশ মেঘলা ছিল, আবার কোথাও ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশ এলাকা পর্যন্ত বিরাজ করছে।
এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। মঙ্গলবার সকালে বিএমডির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগের ২৪ ঘণ্টায় ময়মনসিংহে সবচেয়ে বেশি (৩৩ মিলিলিটার) বৃষ্টি হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়- খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জাগায়, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ সহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি কমতে পারে। বিএমডির অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সাতটি অঞ্চলের নদী বন্দরগুলোতে ২ নম্বর সতর্ক সংকেত জারি করেছে। এগুলো হল- খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার।
এসব অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ বৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্য এলাকাগুলোতে পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি ও বজ বৃষ্টিসহ দমকা ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদী বন্দরে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।