জ্যাকব টাওয়ার পর্যটন শিল্পে নতুন ধারা যোগ করেছে : রাষ্ট্রপতি
ভোলা হবে সিঙ্গাপুর -তোফায়েল
ভোলা, ভোলা (দক্ষিণ) ও চরফ্যাশন প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় বুধবার জ্যাকব টাওয়ার উদ্বোধন শেষে মোনাজাত করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদসহ অতিথিরা -পিআইডি
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার (জ্যাকব টাওয়ার) উদ্বোধন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বুধবার দুপুর ২টায় তিনি টাওয়ারটি উদ্বোধন করেন। ১৯ তলাবিশিষ্ট ২২৫ ফুট উচ্চতার টাওয়ার উদ্বোধন শেষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ওয়াচ টাওয়ারের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটেছে। সেই চিন্তাধারায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বাধুনিক ও সুউচ্চ জ্যাকব টাওয়ারের মাধ্যমে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে এক নতুনধারা যোগ হয়েছে। এ টাওয়ার দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে ইতিবাচক অবদান রাখবে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষা একটি জাতির উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। তাই দেশকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিতে হলে দেশের প্রতিটি নাগরিককে শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। ২১ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য শিক্ষার গুণগতমান বাড়াতে হবে। সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে।’
চরফ্যাশন পৌরসভার মেয়র বাদল কৃষ্ণ দেবনাথের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন, রাষ্ট্রপতির ছেলে তৌফিক এমপি ও চরফ্যাশন সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কায়সার আহম্মেদ দুলাল বক্তব্য দেন।
এর আগে টাওয়ার উদ্বোধনের সময় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল এবং কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য আফজাল হোসেন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। টাওয়ার উদ্বোধনের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের নবনির্মিত ভবন, বেগম রহিমা ইসলাম ডিগ্রি কলেজের নবনির্মিত ভবন, নজরুল ইসলাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজের নবনির্মিত ভবন এবং রসুলপুর-এওয়াজপুর মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন।
ভোলায় গ্যাস মজুদের প্রসঙ্গ টেনে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সমাবেশে বলেন, ‘ভোলা হবে সিঙ্গাপুর। এখানে শিল্প-কলকারখানা হবে। অবকাঠামোর উন্নয়ন হবে। উন্নয়নের জন্যই দেশের শ্রেষ্ঠ জেলা হবে ভোলা।’
বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব চরফ্যাশনবাসীর পক্ষে রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। এ সময় তিনি চরফ্যাশনকে জেলা ও এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। সুধী সমাবেশের পর রাষ্ট্রপতি সপরিবারে চর কুকরিমুকরি পরিদর্শন করেন।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও চরফ্যাশন পৌরসভার বাস্তবায়নে টাওয়ারটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। চরফ্যাশন পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসান জানান, ১৯ তলাবিশিষ্ট টাওয়ারটির ডিজাইন করেছেন কামরুজ্জামান লিটন। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এর নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। মাটির ৭৫ ফুট নিচ থেকে ঢালাই-পাইলিং ফাউন্ডেশনের ওপর সম্পূর্ণ ইস্পাত দিয়ে নির্মিত টাওয়ারটি ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয়। চূড়ায় উঠার জন্য সিঁড়ির সঙ্গে ১৩ জন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন অত্যাধুনিক ক্যাপসুল লিফট রয়েছে।
পৌরসভা সূত্র জানায়, ওয়াচ টাওয়ারটিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বাইনোকুলার স্থাপন করা হয়েছে। এর সাহায্যে পর্যটকরা চর কুকরীমুকরী, তারুয়া সৈকত এবং বঙ্গোপসাগরের একটি অংশসহ চারপাশে অবস্থিত ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পর্যবেক্ষণ ও উপভোগ করতে পারবেন। এছাড়া এখানে বিশ্রামাগার, প্রাথমিক চিকিৎসাসহ খাবারের সুব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে চরফ্যাশনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আগমনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে গোটা এলাকা। রাষ্ট্রপতি রাতে চরফ্যাশনের চর কুকরীমুকরীতে একটি মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি সেখানকার রেস্ট হাউসে রাতযাপন করেন।
আজকের কর্মসূচি : রাষ্ট্রপতি আজ সকালে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্ক ও জেলা সদরের বাংলাবাজারে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় নির্মিত স্বাধীনতা জাদুঘর উদ্বোধন করবেন। এছাড়া বাংলাবাজার ফাতেমা খানম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে সুধী সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।