ক্যারিয়ার গড়তে পারেন কৃষিতে
সামিরা আহসান
প্রকাশ: ২৯ মার্চ ২০১৮, ০২:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সব বাবা-মা চায় তার সন্তান একটি ভালো মানের চাকরি করুক। কিন্তু কৃষি বিষয়ে পড়াশোনা করে কাজের অপার সম্ভাবনা ও ক্যারিয়ার গড়া যায় তা অনেক অভিভাবকের জানা নেই। এছাড়া অনেকের মধ্যে ভুল ধারণা রয়েছে কৃষি নিয়ে পড়লে হয়তো কৃষক হবে! সেটা নয়। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত মানুষও এখন শখবশত নিজের বাসার ছাদে ছাদকৃষি করছেন। কৃষি বিষয়ে পড়ালেখা করে দেশ-বিদেশে ভালো মানের চাকরি করা যায়। বর্তমান সময় কৃষি বিষয়ে চাকরির চাহিদা বাড়ছে। তাই দেশে কৃষি নিয়ে কাজ করতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।
জানতে চাইলে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক ও কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান চাকরির খোঁজকে বলেন, বাংলাদেশসহ সারা দেশে কৃষিবিদদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। কৃষিতে পড়াশোনা করে নিঃসন্দেহে ভালো ক্যারিয়ার গড়া যায়। এর কারণ মানুষের খাবার উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাই এ বিষয়ে দক্ষ গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদাও কখনও কমবে না।
এদিকে যারা নিত্য নতুন কোনো কিছু আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন কিংবা কোনো জিনিসকে ভেঙে উন্নত করতে চান তাদের জন্য কৃষিতে একটা বিষয় রয়েছে- যার নাম কৃষি প্রকৌশল। এছাড়া উদ্ভিদ রোগবিদ্যা পড়ে গাছের চিকিৎসক হতে পারেন। এই যেমন মানুষ কিন্তু নিজের রোগের ব্যাপারে বলতে পারে, গাছপালা পারে না। সেই না বলা গাছের অসুখটা বের করে নিমিষেই চিকিৎসা করে সুস্থ করাটা হবে আপনার কাজ। এছাড়াও পতঙ্গবিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, জিআইএস, প্রজননশাস্ত্র ও উদ্ভিদ প্রজনন, কৃষি সম্প্রসারণ, মৎস্য, ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে চাকরির ক্ষেত্র করে নিতে পারবেন।
কাজের ক্ষেত্র : কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অনুষদেও চাকরির ক্ষেত্র বেড়েছে। ভালো ফল করলে সেখানে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। রয়েছে সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরি। এছাড়া উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউট (বিএসটিআই), এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মস ছাড়াও কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি রয়েছে। তন্মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা হয়, যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং খাদ্যের গুণগতমান নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পথ খুলে দেয়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান : বেসরকারি পর্যায়ে কাজের ক্ষেত্র বেশ ব্যাপক। বেসরকারি দুগ্ধ ও পোলট্রির খামার, ব্র্যাক, ফিড মিল, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকরির সুযোগ আছে। এসবের মধ্যে আড়ং ডেইরি, কাজী ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, মিল্ক ভিটা, সিপি ফুড উল্লেখযোগ্য।
আন্তর্জাতিক সংস্থা : আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউএসএইড, ডিএফআইডি, ড্যানিডা, সিডা, উইনরক, ইরি, আইএফডিসি ও অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও কৃষিবিদদের অগ্রাধিকার রয়েছে। এনজিও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, জার্মান, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য অনেক শিক্ষার্থী গমন করছেন।
মাসশেষে আয় : বাংলাদেশে সাধারণত কৃষি সম্পর্কিত যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কৃষিবিদদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হবে। তাছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম অবস্থায় উচ্চ বেতন দিয়ে চাকরি শুরু হয়, দিন যত গড়াবে তত বেতন বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেক উচ্চমানের বেতন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে কৃষিবিদ হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করতে হবে। পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন অনুষদেও ৪ বছরমেয়াদি বিএসসি (অনার্স) কোর্স বেছে নিতে হবে। তাছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কোথায় পড়বেন : দেশে যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হল- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ জামালপুর, বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজ। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করা যাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও এ ডিগ্রি নেয়া যায়। দেশ ছাড়াও কৃষিবিদদের বিদেশে রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিশাল সুযোগ।