প্রশাসনে আসুন
মো. নোমান হোসেন প্রিন্স
প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
সময়টা ১৯৯৭ সাল। ঢাকার আগারগাঁও শেরে বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৭ম শ্রেণীতে পড়ি। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে একজন ম্যাজিস্ট্রেট স্যার আসলেন। স্যারের অমায়িক ব্যবহার ও সবার সম্মান-শ্রদ্ধা ছোট বেলায় ছোট্ট হৃদয়ে দাগ কেটেছে। সিদ্ধান্ত নিলাম জীবনে ম্যাজিস্ট্রেট হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক পাস করলাম। ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা ভাবনায় বুঝলাম অপশন অনেক। কিন্তু ছোট বেলার সেই স্বপ্ন মাথা থেকে যায়নি। পরে, ২৯তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম চয়েস দিলাম প্রশাসন। বলে রাখা ভালো আমি ছোট বেলা থেকে ইংরেজি আর সাধারণ জ্ঞানে যথেষ্ট সময় দিতাম, যা বিসিএসে আমার অনেক কাজে লেগেছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বিষয়াবলির মাসিক ম্যাগাজিনসহ বিভিন্ন ইংরেজি পত্রিকা পড়তাম। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম হতেই লাইব্রেরিতে প্রচুর সময় দিতাম। ইংরেজি নিজের হাতে নোট তৈরি করতাম যা বিসিএসের প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করেছে। এখন আসি ক্যারিয়ার হিসেবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কেন আসবেন :
এক. প্রশাসন সার্ভিস এ আপনি সারাজীবনে মিনিমাম ১৫টি চাকরি করার অভিজ্ঞতা হবে। বৈচিত্র্যই এই ক্যাডারের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। ম্যাজিস্ট্রেট, এসি ল্যান্ড, ইউএনও, ডিসি, সহকারী সচিব থেকে সিনিয়র সচিব হিসেবে মন্ত্রণালয়ে, সরকারের সব অধিদফতর, পরিদফতরে, সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে, সব কর্পোরেশনগুলোর প্রধান হিসেবে আছে কাজের সুযোগ (পাটকল, চিনিকল, মিল্ক ভিটা ইত্যাদি) আপনি পোস্টিং পাবেন। এমনকি ক্যাবিনেট সচিবসহ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও প্রশাসন ক্যাডার হতে হয়ে থাকেন। সব ফরেন কন্সুলার অফিস এ, এফডিসিতে সহ সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের উপরের পদগুলোতে আপনার পদচারণা থাকবে। এমনকি সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ এডমিন ক্যাডার চালায়। অতি আশ্চর্যের বিষয় এই যে প্রতিটা ক্যান্টনমেন্ট এ ক্যান্টনমেন্ট এক্সিকিউটিভ নামের একটা পোস্ট আছে এডমিনের যে ক্যান্টনমেন্ট এর ভেতরের স্কুল, কলেজ, ইনফ্রাস্ত্রাকচার এসবের অভিভাবক। দুই, এই ক্যাডারের অফিসাররা ইদানীংকালে গণ হারে ফরেন ডিগ্রি নিচ্ছেন। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের দেশগুলোতে সিনিয়র সহকারী সচিব লেভেলের প্রায় সবারই কোনো না কোনো ইউনিভার্সিটির মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। এমনকি প্রশাসন এর অনেকে পিএইচডি ডিগ্রি ও অর্জন করেছেন। ৩ এই ক্যাডারের প্রধান কাজ হল অন্য সব ক্যাডার অফিসারদের মাঝে সমন্বয় সাধন। জেলায় ডিসিরা সব বিভাগের মাঝে সেতুবন্ধের কাজ করেন। আর সবচেয়ে বড় কথা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে উপজেলায়, জেলায় ও বিভাগে আপনার অবস্থান আপনাকে একটু গর্ববোধ করার অধিকার দিতেই পারে। ইউএনও ও ডিসিরা সরাসরি মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে থাকেন ফলে সরকারের পলিসি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও পলিসি ফিডব্যাক এডমিন অফিশিয়ালরাই দেন। চার, সরকারের সচিবালয় যন্ত্র মূলত প্রশাসন ক্যাডার দিয়ে পরিচালিত হয়। সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা ৭৫ ভাগ কেবল প্রশাসন ক্যাডার থেকে নিযুক্ত হবেন এবং বাকি ২৫ ভাগ অন্য সব ক্যাডার এর সিনিয়র অফিসারের জন্য উন্মুক্ত থাকিবে। রাজনৈতিক দিক থেকে দেশকে পরিচালিত করেন মন্ত্রী মহোদয়রা। দেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেন তারা। আর এই প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে নিবিড় ভূমিকা দাফতরিক প্রধান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সচিব ও সিনিয়র সচিবের। কেউ যদি নিজেকে দেশের পলিসি তৈরিতে যুক্ত দেখতে চান, স্বপ্ন দেখেন রুপান্তরের তিনি প্রশাসনের অংশ হওয়ার আগ্রহ দেখাতে পারেন। পাঁচ, দিন যাবে আপনার কাজের পরিধি বাড়বে। চাকরিতে থাকাকালে আপনি গুরুত্ব পাবেন, পাবেন অবসরের পরও। সরকারের সাংবিধানিক সংস্থাগুলোতে বুড়ো বয়সে আপনার প্রাধিকার থাকবে। বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন, নির্বাচন কমিশনের প্রধানরা প্রশাসন ক্যাডারের প্রাক্তন সচিব ছিলেন। পত্রিকায় কলাম লিখবেন, দেশের ভূত ভবিষ্যৎ নিয়ে মত দিবেন, সরকারকে পরামর্শ দেবেন আপনি। কারণ সারাজীবন ব্যাপিয়া আপনি তো এ কাজেই নিয়োজিত ছিলেন। ছয়, রাজনীতি না করেও কেউ যদি রাজনীতিবিদদের মতো গণ মানুষের কাছে যেতে চান তাকে প্রশাসন ক্যাডার চয়েস দিতেই হবে। একমাত্র ক্যাডার এডমিন, যার বিচরণ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী হতে সমাজের সব বর্ণের, গোত্রের মানুষের কাছে। ধনী দরিদ্র, ভালো খারাপ, সব চাকুরিজীবী, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ সবার মাঝে মিশে থাকার এক দুর্লভ সুযোগ। জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ আপনার বিচরণের মাঠ। ঠিক এ কারণেই অনেক ইউএনও ও ডিসি মহোদয়ের বিদায়ে মানুষকে কাঁদতে দেখেছি আমি। সাত, সম্মানের জায়গাটা তো ভুলেই গিয়েছিলাম। এখনও অনেক কিছুর পরেও উপজেলায় ইউএনও সবচেয়ে বেশি ফোকাস এ থাকেন, জেলায় ডিসি। আমার ৬ বছরের সার্ভিস অভিজ্ঞতায় দেখেছি জেলায় কোনো বড় আয়োজন সম্পূর্ণ হয় না ডিসির উপস্থিতি ছাড়া। ধর্মীয়, সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তি যেকোনো অনুষ্ঠানে ডিসি ও ইউএনও এর উপস্থিতি সবার আগে কাম্য।
মো. নোমান হোসেন : উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সদর, কক্সবাজার