প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব
বিশ্বসেরা ধনীদের কাতারে জুম সিইও এরিক ইউয়ান
করোনা মহামারীর এ সময়ে আইসোলেশনে প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে প্রযুক্তির আশীর্বাদই ছিল একমাত্র সঙ্গী। এ কারণে চলতি বছর সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ভিডিও কনফারেন্সিং প্ল্যাটফরম জুম, যার কথা একবারও উল্লেখ না করে কোভিড-১৯-এর ইতিহাস লেখা প্রায় অসম্ভব। ভিডিওকলিং এটি নতুন কোনো প্রযুক্তি না হলেও মহামারীকালীন মোটামুটি সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এ কারণে জুমের প্রধান নির্বাহী এরিক ইউয়ানের নাম উঠে এলো বিশ্বের ১০০ শীর্ষ ধনীর তালিকায়। আজকের আয়োজনে জুম সিইও এরিক ইউয়ানকে নিয়ে লিখেছেন-
ফয়সাল আহমাদ
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
চলতি বছরে জুমে শেয়ারের দামের ঊর্ধ্বগতির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে হয়ে ওঠে বছরের অন্যতম সেরা বিনিয়োগ উৎস। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জুমের দরে আসে ৪৫০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি। বছরের সবচেয়ে বড় ঘটনা হচ্ছে বিলিওনিয়ারদের মধ্যেও সেরা অবস্থানে ঠাঁই করে নেয়া, তাও এক বছরের কম সময়ে, যা জুমের প্রধান নির্বাহী এরিক ইউয়ান করে দেখিয়েছেন। এমনকি ২০২০ সালের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায়ও নাম লেখান। করোনায় শুরু হয় ইউয়ানের উত্থান গল্প।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
এরিক সুব্রাহ ইউয়ান ১৯৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। চীনা বংশোদ্ভূত আমেরিকান এ বিলিওনিয়ার একজন ব্যবসায়ী, যিনি জুম ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপ-এর প্রতিষ্ঠাতা সিইও। যদিও জুম কমিউনিকেশনে তার শেয়ার ২২ শতাংশ। পেশায় তিনি একজন তথ্যপ্রযুক্তি প্রকৌশলী। সিস্কোর মতো বড় ফার্মে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার হাত ধরেই ওয়েবেক্স ভিডিওকলের সফটওয়্যারটিও তৈরি। ইউয়ানের বাবা ছিলেন ভূতত্ত্ব প্রকৌশলী। তিনি চীনের শানডং প্রদেশের তাইয়ানে জন্মগ্রহণ করেন ও বেড়ে ওঠেন। ছোটবেলায় ইউয়ান তামা পুনর্ব্যবহারের জন্য নির্মাণ স্ক্র্যাপ সংগ্রহ করে সেগুলো বিক্রি করতেন নগদ অর্থের জন্য।
ছাত্রজীবন
ইউয়ান শানডং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাপ্লাইড ম্যাথমেটিকসে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন, যার সঙ্গে কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনও পড়েন তিনি। বেইজিংয়ের চীন ইউনিভার্সিটি অব মাইনিং অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ভূতত্ত্ব প্রকৌশল বিষয়ে øাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। ইউয়ান ২০০৬ সালে স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি এক্সিকিউটিভ প্রোগ্রামও সম্পন্ন করেছিলেন।
যেভাবে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের চিন্তা
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র থাকা অবস্থায় ১৯৮৭ সালে ইউয়ান তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করতে ১০ ঘণ্টা ট্রেন ভ্রমণ করতে হয়। এ লম্বা সময় ভ্রমণ করা ইউয়ানের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। এ সময় সে তার বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করার একটি সহজ উপায় খুঁজছিলেন এবং সে থেকেই ভিডিওটেলফোনির সফটওয়্যার তৈরি করতে অনুপ্রাণিত হন।
ক্যারিয়ার
ইউয়ান স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পর বেইজিংয়ে থাকতেন। ১৯৯৫ সালে তিনি জাপানে ৪ মাসের একটি প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে বক্তব্য রেখেছিলেন বিল গেটস, যা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি ১৯৯৭ সালে সিলিকন ভ্যালিতে টেক বুমে যোগ দিতে চলে আসেন ইউয়ান। অবাক করার বিষয়- ইউয়ান ৯ বার আমেরিকান ভিসার জন্য অ্যাপ্লিকেশন করেও ভিসা পেতে ব্যর্থ হন, শুধু ইংরেজি কম পারতেন বলে। যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছে ইউয়ান ওয়েব কনফারেন্সিং স্টার্টআপ ওয়েবেক্সে যোগদান করেন, যেখানে তিনি ছিলেন প্রথম ২০ কর্মীর একজন। ২০০৭ সালে সিস্কো সিস্টেম ওয়েবেক্সকে অধিগ্রহণ করে নিলে ইউয়ান প্রকৌশলী বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন। ২০১১ সালে ইউয়ান সিস্কো পরিচালনায় নতুন স্মার্টফোনবান্ধব ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম স্থাপন করেছিল, কিন্তু এ সিস্কো কর্তৃপক্ষ সেটি প্রত্যাখ্যান করায় ইউয়ান সিস্কো ছেড়ে নিজের সংস্থা জুম ভিডিও যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে চলে যায়।
জুমের শুরু
৯ বছর আগে ২০১১ সালে এপ্রিল মাসের ১১ তারিখ Zoom Video Communications, Inc. নামে একটি কোম্পানি শুরু করেছিলেন। ২০১৩ সালে কোম্পানিটি Zoom Meeting App প্রকাশ করে। প্রফেশনাল ভার্চুয়াল মিটিং-এর জগতে জুম আগে থেকেই বেশ পরিচিত একটি নাম।
বিলিওনিয়ার ইউয়ান
জুম প্রাথমিক পাবলিক অফারের মাধ্যমে একটি সরকারি সংস্থায় পরিণত হয়েছিল ২০১৯ সালে, সে সময়ে ইউয়ান কোটিপতি হন। ২০২০ সালের শুরুর দিকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে বিভিন্ন এলাকা লকডাউনের আওতায় চলে আসে। ফলে শত কোটি মানুষ হয়ে পড়ে গৃহবন্দি। তখনই ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে জুম মিটিং অ্যাপটি। মহামারী চলাকালীন ইউয়ানের সম্পদের পরিমাণ বাড়তে থাকে, যেহেতু জুম অনলাইনে অফিস এমনকি শিক্ষার্থীদের ক্লাসের ব্যবস্থা ছিল।
উল্লেখ্য, জুম ভিডিও কমিউনিকেশন্স-এর শেয়ার এতটাই বৃদ্ধি পায়, চলতি বছরের শেষ সময়ে এসে তার সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৭০০ কোটি ডলারে। জুমে তার মালিকানায় থাকা শেয়ারের মূল্যস্থিতিই তাকে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ ধনীর মর্যাদা এনে দিয়েছে।