প্রযুক্তি ব্যক্তিত্ব
জ্যাক মা ও একটি হার না-মানা গল্প
ফয়সাল আহমাদ
প্রকাশ: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
প্রাইমারিতে দু’বার ফেল, মাধ্যমিকে তিনবার ফেল, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তিনবার ফেল, চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়ে ৩০ বার ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। কেএফসিতে তিনিসহ ২৪ জন চাকরির জন্য আবেদন করেন।
এর মধ্যে ২৩ জনের চাকরি হয়। শুধু একজন বাদ পড়ে, আর সেই ব্যক্তিটি ছিলেন তিনি। এমনও হয়েছে চাকরির জন্য পাঁচজন আবেদন করেছে; এর মধ্যে চারজনের চাকরি হয়েছে বাদ পড়েছেন শুধু তিনি। প্রত্যাখ্যানের পর প্রত্যাখ্যানই ছিল তার জীবনে, তবুও তিনি থেমে যাননি।
এমনকি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য ১০ বার আবেদন করে ১০ বারই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এতক্ষণ যার কথা বলেছি তিনি হলেন- পৃথিবীর অন্যতম বড় অনলাইনভিত্তিক কোম্পানি আলিবাবা ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক মা।
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
চীনের জিজিয়াং প্রদেশে ১৯৬৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন জ্যাক মা। বাবা-মা গান গেয়ে মানুষকে আনন্দ দিয়ে জীবন ধারণ করতেন। তিন সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। তার এক বড় ভাই এবং ছোট বোন ছিল। তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব ভালো ছিল না। শৈশব থেকেই ইংরেজি শেখার বিশেষ আগ্রহী ছিলেন জ্যাক মা। সব সময়ই চীনে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করতেন। এ ছাড়া নিজের একটি রেডিও কেনেন তিনি।
উদ্দেশ্য ছিল রেডিওতে নিয়মিত ইংরেজি শোনা। ইংরেজি ভালো শিখতে পারলেও গণিতে বারবার ফেল করতেন তিনি। গণিতে জ্যাকের বাজে দশার কারণে কলেজে ভর্তি পরীক্ষায়ও দু’বার ফেল করেছেন। তবে তৃতীয়বারের মতো ভর্তিপরীক্ষা দিয়ে টিকে যান জ্যাক মা। এবার তিনি হাংজু টিচার্স ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হন।
আলিবাবা প্রতিষ্ঠা
চীনের বৃহত্তম প্রযুক্তি সংস্থা আলিবাবা- এখন পূর্বের অ্যামাজন নামে পরিচিত। চীনের বন্দরনগরী হ্যাংঝুর ছোট্ট একটা অ্যাপার্টমেন্ট ঘর থেকে তিনি এ কোম্পানি গড়ে তোলেন।
১৯৯৯ সালে চীনের কারখানা অধ্যুষিত এলাকার কেন্দ্রে ছিল এ হ্যাংঝু শহর। চীনের অনলাইন, ব্যাংকিং এবং বিনোদন জগতে আলিবাবার অবদান হয়ে ওঠে বিশাল। চার হাজার কোটি ডলারের ব্যবসার মালিক হয়ে ওঠেন জ্যাক মা। ২০১৮ সালে আলিবাবার চেয়ারম্যানের পদ থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। তিনি বলেন, দানধ্যান নিয়ে থাকতে চান। কিন্তু আলিবাবার পরিচালনা বোর্ডে তার স্থায়ী পদ থেকে যায়। শুধু সম্পদ আর খ্যাতি নয়, মা চীনের অন্যতম প্রভাবশালী একজন ব্যক্তি।
করোনায় অবদান
বিশ্বের দেড়শ’টিরও বেশি দেশে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসেন চীনের এ ধনকুবের ব্যবসায়ী জ্যাক মা। করোনাভাইরাস টিকা আবিষ্কারের গবেষণায়ও মা লক্ষ লক্ষ ডলার অর্থ সাহায্য করেছেন এবং তার নিজের বাড়ি চীনের যে ঝেজিয়াং প্রদেশে সেখানকার ডাক্তারদের লেখা চিকিৎসা পরামর্শের পুস্তিকা চীনা ভাষা থেকে ১৬টি বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে। পৃথিবীর নানা দেশে চিকিৎসাসামগ্রী পাঠান জ্যাক মা।
তিনিই একমাত্র মানুষ, চীনের হ্যাংঝু থেকে আফ্রিকার আদ্দিস আবাবায়- এক কথায় পৃথিবীর যে কোনো দেশে বিমানে করে চিকিৎসা সরঞ্জাম পাঠিয়ে দেয়ার ক্ষমতা ও অর্থবল যার আছে, বলেছেন মা’র জীবনীকার ডানকান ক্লার্ক। সামগ্রী গন্তব্যে পৌঁছানো, তার আয়োজন, আর ব্যবস্থাপনা নেটওয়ার্ক- এসবই তার প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব, এসব নিয়েই তার ও তার কর্মীদের কাজ।