
প্রিন্ট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ০৩:৪৬ পিএম

সাইফ আহমাদ
প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০১৯, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

আরও পড়ুন
মোবাইল ফোনে কথা বলা থেকে শুরু করে মেসেজ এমনকি জিপিএসের মাধ্যমে কোথায় যাচ্ছি কি করছি সব কিছুতেই নজরদারিতে রাখছে কেউ আমাদের?
স্মার্টফোনে থাকা আমাদের প্রয়োজনীয় অ্যাপগুলোই কি তবে এভাবে নজরদারিতে রাখছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে প্রায় এক হাজারের অধিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর জরিপ চালান গবেষকরা। জরিপে অংশগ্রহণকারী ৪৩ শতাংশই জানিয়েছেন, তারা বিশ্বাস করেন তাদের অনুমতি ছাড়া হাতে থাকা স্মার্টফোনগুলো তাদের কথা রেকর্ড করছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, হাতে থাকা স্মার্টফোন বা সেখানে থাকা অ্যাপ গোপনে আপনার কথা রেকর্ড করতে পারে। শুধু বিশেষজ্ঞরা নয়, অধিকাংশ স্মার্টফোন ব্যবহারকারীই এটি বিশ্বাস করেন। আর কারিগরিভাবে এটি সম্ভব বলে মনে করেন অনেকেই।
জিনিয়া জাহান জুঁই নামে এক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী জানান, মোবাইলে আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছিলাম তার সঙ্গে কথা চলাকালীন আমি একটি স্মার্টওয়াচ কেনার কথা বলি এবং স্মার্টওয়াচের মডেল ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করি।
মজার এবং একই সঙ্গে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, কথা বলা শেষ করেই ফেসবুকে ঢুকে দেখি নিউজ ফিডে স্মার্টওয়াচের বিজ্ঞাপন এবং নানা ধরনের স্মার্টওয়াচবিষয়ক তথ্য। এরপর থেকে মাথায় এই প্রশ্ন ঘুরছে মাথায়, তবে হাতে থাকা স্মার্টফোনটি কি আমার সব কথা গোপনে শুনছে? কোনো অ্যাপ ওপর কি নজরদারি চালাচ্ছে?
নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কথা রেকর্ড করা ছাড়াই একজন ব্যক্তি সম্পর্কে জানার দক্ষ উপায় রয়েছে। ২০১৭-১৮ সালে এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালায় নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক ডেভিড ছফেন্সের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল।
স্মার্টফোনে থাকা অ্যাপগুলো মানুষের গোপন কথা রেকর্ড করে কিনা তা জানা তাদের লক্ষ্য ছিল। অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়, এমন জনপ্রিয় ১৭ হাজার অ্যাপের ওপর তারা গবেষণা চালান।
তবে এমন কোনো প্রমাণ পাননি, যেখানে ওই অ্যাপগুলো মাইক্রোফোন চালু করে দেয় বা অডিওগুলো অন্য কোথাও পাঠিয়ে দেয়। শুধু ছফেন্সের দল নয়, এই বিষয়টি নিয়ে আগেও কাজ করেছেন মোবাইল নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ওনডেরার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল কোভিংটন। ছফেন্স ও কোভিংটনের গবেষণার ফলাফল কাছাকাছিই ছিল। অর্থাৎ তারা গোপনভাবে রেকর্ডিং করার কোনো প্রমাণ পাননি।
ছফেন্সের মতে, বড় পরিসরে কথা রেকর্ডিং, সেগুলো ভাষান্তর থেকে শুরু করে বিশ্লেষণ পর্যন্ত যে ধাপ রয়েছে, এতে প্রয়োজন প্রচুর কম্পিউটিং ক্ষমতা।
সাদা চোখেই দেখা যায়, স্মার্টফোনে থাকা বেশিরভাগ অ্যাপ যেমন- গুগল ফেসবুক উবারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রাহকদের থেকে নাম, জন্মতারিখ, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারসহ অন্যান্য তথ্য নিয়ে থাকে।
এর মধ্যে কিছু অ্যাপ জিপিএস ব্যবহার করে ব্যবহারকারীর অবস্থান শনাক্ত করে থাকে। যেমন- ব্যবহারকারী যেসব বিষয় ব্রাউজ করছে, প্রতিনিয়ত তা মনিটর করে ফেসবুক।
ছফেন্সের গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, ৯ হাজার অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ রয়েছে যেগুলো গোপনভাবে ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনের স্ক্রিনের স্ক্রিনশট নিয়ে থাকে। একটি ফুড ডেলিভারি অ্যাপকে পাওয়া গেছে যেটি ব্যবহারকারী তার স্মার্টফোন কি করছেন তা ভিডিও আকারে রেকর্ড করে।
এসব ছবি বা ভিডিও আপনাআপনি চলে যায় তৃতীয় পক্ষের কাছে। এসব তৃতীয় পক্ষ ওই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে থাকে। গবেষকদের ধারণা, যখন কেউ এসব অ্যাপ ব্যবহার করে বা স্মার্টফোন ব্যবহার করে মেসেজের মাধ্যমে নতুন স্মার্টওয়াচ কেনার কথা বলছেন তখন তার তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব বিজ্ঞাপন ভাসছে তাদের সামনে। আবার কেউ যখন ওই স্মার্টওয়াচের দোকানে গিয়ে স্মার্টওয়াচ কিনছেন তখন জিপিএস’র মাধ্যমে তিনি ট্র্যাক হচ্ছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, স্মার্টফোনে যে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার সময় অবশ্যই এটি খেয়াল রাখতে হবে, ফোনে থাকা কি কি বিষয়ে পারমিশন চাচ্ছে অ্যাপটি। সে পারমিশন দেয়া নিরাপদ এবং যৌক্তিক কিনা।