আয়কর মেলা উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী
দেশে করযোগ্য আরও তিন কোটি মানুষ আছে
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
প্রিন্ট সংস্করণ
রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার আয়কর মেলার উদ্বোধনকালে অর্থমন্ত্রী ও এনবিআর চেয়ারম্যান। ছবি: যুগান্তর
|
ফলো করুন |
|
|---|---|
দেশে করযোগ্য আরও তিন কোটি মানুষ আছে। এরা সবাই কর দিলে করদাতার সংখ্যা হতো চার কোটি। কিন্তু বর্তমানে এক কোটি মানুষ কর দেন।
সবাই কর দিলে দেশ থেকে দারিদ্র্য নির্মূল করা সহজ হতো। রাজধানীর অফিসার্স ক্লাবে মঙ্গলবার সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা বলেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান।
অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় কর দেয়ায় অনীহা ছিল। সবাই মনে করত কর দিলে সারা জীবনের জন্য প্যাঁচে পড়ে গেলাম। এ মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। অনেক যুবক স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আয়কর দিয়ে যাচ্ছেন।
এটা জাতির জন্য উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তিনি আরও বলেন, আগে ১৫ লাখ করদাতাও (টিআইএনধারী) ছিল না। এখন করদাতার সংখ্যা ৩০ লাখের চেয়ে বেশি হয়ে গেছে। তবে বিভিন্নভাবে এক কোটি মানুষ কর দেন। এটা কৃতিত্বের বিষয়।
কিন্তু উন্নয়ন এগিয়ে নিতে এই এক কোটির সঙ্গে আরও ৪ কোটি মানুষ কর দিলে সরকার জনগণকে যে সেবা দেয় সেটার ব্যাপ্তি আরও বাড়নো যাবে।
দারিদ্র্য নিরসনকে সরকারের এবং জাতীয় লক্ষ্য হিসেবে অভিহিত করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক সময় দেশে ৭০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করত। এখন দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশ।
কিন্তু ২২ শতাংশ কম নয়, প্রায় ৩ কোটি মানুষ। এদের দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠাতে হবে। সেটাই সরকার ও জাতীয় লক্ষ্য। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ২০১০ সালে আয়কর মেলায় ৬০ হাজার মানুষ সেবা নিয়েছিলেন। সেই থেকে গতবার পর্যন্ত ৪৫ লাখ মানুষ সেবা নিয়েছেন।
আয়কর মেলায় করদাতারা যে সেবা পায়, কর অফিসেও সে সেবা দিতে হবে। তাহলে কর আদায় বাড়বে। তিনি আরও বলেন, সরকার যে উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতে কর-জিডিপি অনুপাত ১৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এনবিআর সে লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছে।
গত অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকার রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে তা আদায়ে কর্মকর্তারা সচেষ্ট রয়েছেন।
শুরুর দিনই উপচেপড়া ভিড় : সকাল ৯টায় আয়কর মেলার উদ্বোধনের আগেই করদাতারা অফিসার্স ক্লাবে জড়ো হতে থাকে। করদাতাদের দীর্ঘ লাইন অফিসার্স ক্লাবের মূল গেট ছাড়িয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী যখন মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন করদাতারা ভেতরে প্রবেশের জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে।
এক পর্যায়ে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। পরে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের মাঝখানেই করদাতাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। দুপুরের পর মেলায় ভিড় কমতে থাকে।
করদাতাদের দীর্ঘ লাইন অর্থমন্ত্রীর চোখও এড়ায়নি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় তিনি বলেন, আয়কর মেলা সত্যিই মেলায় রূপ নিয়েছে। এখানে সবাই খুশি মনে কর দিচ্ছে।
দেশের স্বার্থে সবাইকে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। কর দিতে আসা সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা জুবায়ের বলেন, সকালে রিটার্ন জমা দিতে এসেছি। চেয়েছিলাম, রিটার্ন দিয়ে ব্যাংকে যাব।
কিন্তু এসে লম্বা লাইনে পড়তে হয়েছে। তারপরও বাসা থেকে আগেই রিটার্ন পূরণ করে আসায় সুবিধা হয়েছে। লাইনে দাঁড়িয়ে অল্প সময়ের মধ্যে রিটার্ন জমা দিয়েছি।
দেশব্যাপী আয়কর মেলা : মঙ্গলবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হয়েছে আয়কর মেলা। মেলায় ব্যক্তিশ্রেণীর করদাতারা হয়রানিমুক্তভাবে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
বিভাগীয় শহরে সাত দিন, জেলা শহরে চার দিন, ৩২ উপজেলা শহরে ২ দিন এবং ৬৮টি উপজেলায় ১ দিন করে আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ভ্রম্যমাণ মেলাও হবে।
মেলা প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে চলবে। বিভাগীয় শহরগুলোয় মেলা মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়ে সোমবার পর্যন্ত চলবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মেলা সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলের সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হবে।
বিভাগীয় শহরের যেসব জায়গায় মেলা : ঢাকায় অফিসার্স ক্লাবে আয়কর মেলা হবে। এখানে ঢাকার ১৫টি কর অঞ্চলের করদাতারা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন।
অন্য বিভাগীয় শহরের মধ্যে চট্টগ্রামে জিইসি কনভেনশন সেন্টারে, সিলেটের রিকাবি বাজারের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে, রাজশাহীর হেলেনাবাদের কর ভবন প্রাঙ্গণে, রংপুরের জেলা পরিষদ কমিউনিটি সেন্টারে, বরিশালে অশ্বিনী কুমার টাউন হলে, খুলনায় কর ভবন প্রাঙ্গণে এবং ময়মনসিংহের টাউন হল মোড়ের জেলা ক্রীড়া সংস্থার জিমনেসিয়ামে সপ্তাহব্যাপী আয়কর মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
