Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং নীতিমালা হচ্ছে

কমছে ডিসি হওয়ার বয়স

সচিবের দায়িত্ব পালনের ৩ বছর পর সিনিয়র সচিব * চাকরির ৬ বছর পূর্তিতে ইউএনও পদে পদায়ন * বাধ্যতামূলক হচ্ছে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্স

Icon

উবায়দুল্লাহ বাদল

প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

কমছে ডিসি হওয়ার বয়স

মাঠ প্রশাসনের শীর্ষপদ জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে নিয়োগের বয়সসীমা কমানো হচ্ছে। এ পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তার বয়স হতে হবে ৪৫ বছরের কম। বর্তমানে ডিসি পদে নিয়োগের সর্বোচ্চ বয়স ৫০ বছর নির্ধারণ করা আছে। ডিসি হতে হলে মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে কমপক্ষে ৫ বছর, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) হিসেবে ২ বছর ও ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। উল্লিখিত বিধান রেখে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার এবং সরকারের উপসচিব ও তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং (কর্মজীবন পরিকল্পনা) নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

নীতিমালাটি সম্প্রতি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে পাঠানো হলে তা আরও পর্যালোচনার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইনের নেতৃত্বে করা কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। কমিটি এটি চূড়ান্ত করার পর তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। জানতে চাইলে সোহরাব হোসাইন বুধবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা একটি বৈঠক করেছি নীতিমালাটি নিয়ে। তবে আরও কয়েকটি বৈঠক করার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।

নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে- একজন ডিসি এক জেলায় তিন বছর এবং একাধিক জেলায় ৪ বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। বর্তমানে তিন বছরের বেশি কেউ ডিসি হিসেবে থাকার নিয়ম নেই। সরকারের উপসচিবদের মধ্য থেকেই ডিসি পদে নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি যুগ্ম সচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ করা হবে। তাদের সর্বোচ্চ বয়স হবে ৫২ বছর এবং এক বিভাগে দুই বছরের বেশি কেউ বিভাগীয় কমিশনার থাকতে পারবেন না। তবে একাধিক বিভাগে তিন বছর থাকতে পারবেন। বর্তমানে অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আর অতিরিক্ত সচিবদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হবে এবং তিন বছরের বেশি এক মন্ত্রণালয়ের কাজ করতে পারবেন না। তবে সরকার চাইলে এই মেয়াদ কমবেশি করতে পারবে। সরকার উপযুক্ত কর্মকর্তাদের সচিব পদে নিয়োগ দেবেন। সেই ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, চাকরির অভিজ্ঞতা, বিশেষ বিষয়ে জ্ঞান ও দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। কমপক্ষে তিন বছর সচিব পদে চাকরি করা কর্মকর্তাকে সিনিয়র সচিব পদে পদায়ন করা হবে। মুখ্য সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব পদে পদায়নের ক্ষেত্রে তিন বছর সচিব পদে চাকরির অভিজ্ঞতার সঙ্গে মাঠ প্রশাসনে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এছাড়া কোনো সিনিয়র সহকারী সচিব বা উপসচিব চাকরিজীবনের ২০ বছরেও যদি পরবর্তী ধাপে পদোন্নতি না পান, তাহলে বাকি কর্মজীবনে তার আর পদোন্নতি হবে না। ওই কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার আবেদন করলে সরকার তাকে পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ উপসচিব বা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে অবসরে পাঠাবে। তবে অবসরে যাওয়ার এই আবেদন করতে হবে চাকরিজীবনের ২০ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। নীতিমালাটি অনুমোদন পেলে চাকরির ৬ বছর পূর্তিতে ইউএনও পদে পদায়ন করা হবে। ইউএনও পদে যোগদানের আগে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। যারা লিয়েনে থাকার কারণে এসি ল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না, তাদের ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই সপ্তাহের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর ধারাবাহিকতায় সাত বছর চাকরি পূর্তিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদায়ন করা হবে। পদায়নের আগে দুই সপ্তাহের ভূমি সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হবে এবং প্রশিক্ষণের ফল পদায়নের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, পদোন্নতির ক্ষেত্রে চাকরিকাল, কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদন, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের প্রাপ্ত নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শৃঙ্খলা প্রতিবেদন ও সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মূল্যায়ন বিবেচনা করে নির্দিষ্ট নম্বর বণ্টনের বিধান রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে উপসচিব পদে পদোন্নতিতে সিনিয়র সহকারী সচিব বা সমমর্যাদার পদে পাঁচ বছরের সন্তোষজনক চাকরির জন্য ১০ নম্বর, যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতিতে উপসচিব পদে তিন বছর চাকরির জন্য ১০ নম্বর এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে যুগ্ম সচিব পদে দুই বছরের চাকরির জন্য ১০ নম্বর। এছাড়া তিনটি পদের ক্ষেত্রেই কর্মমূল্যায়ন প্রতিবেদনে ৫০ নম্বর, বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য ১০ নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০ নম্বর, শৃঙ্খলা প্রতিবেদনে ১০ নম্বর ও এসএসবির মূল্যায়নের জন্য ১০ নম্বর থাকবে।

কর্মকর্তাদের দক্ষতা বাড়াতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের বিষয়ে নীতিমালায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতে সরকারি চাকরির অংশ করা হচ্ছে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির (বিএমএ) ওরিয়েন্টেশন কোর্স। তবে এখনই তা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না বা পদোন্নতির ক্ষেত্রে এর জন্য কোনো পয়েন্ট রাখা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, একসময় বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হবে। কারণ সব প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরই মৌলিক সামরিক প্রশিক্ষণ থাকা উচিত। এছাড়া নবীন কর্মকর্তাদের যোগদানের পরপরই দেড় বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সিভিল সার্ভিস প্রশাসন একাডেমিতে আইন ও প্রশাসন বিষয়ে এ প্রশিক্ষণ নিতে হবে। জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ের বিভিন্ন শাখার কাজের বিষয়ে ধারণা লাভ করা বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য সার্ভে অ্যান্ড সেটলমেন্ট কোর্স করতে হবে। বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে যারা ভালো ফল করবেন, তাদের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশে পাঠানো হবে। এছাড়া সম্ভব হলে বিএমএ ওরিয়েন্টেশন কোর্স সম্পন্ন করতে হবে।

প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রসঙ্গে নীতিমালায় আরও বলা হয়েছে- সহকারী কমিশনার পদে ওইসব কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেয়া হবে, যারা সাফল্যের সঙ্গে ভূমি জরিপ ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করবেন। চাকরির পাঁচ বছর পূর্তিতে সিনিয়র স্কেল পাবেন। সেক্ষেত্রে সিনিয়র সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগের কার্যাবলি সংক্রান্ত একটি স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অ্যাডভান্স কোর্স অন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য সিনিয়র স্টাফ কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের জন্য পলিসি প্ল্যানিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট কোর্স (পিপিএমসি) বাধ্যতামূলক করা হবে। এছাড়া অন্যান্য প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে হবে। বৈদেশিক উচ্চতর ডিগ্রি এবং শিক্ষাজীবনের সব পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণী বা বিভাগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম