এনবিআরের দুই কর্মকর্তার দুর্নীতি
ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি হদিস নেই মতিউরের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দুর্নীতির মাধ্যমে নিজের ও স্বজনের নামে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগ ওঠায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সালকে বগুড়ায় বদলি করা হয়েছে। রোববার কর প্রশাসন শাখা থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়েছে। এদিকে, এনবিআরের সদ্য সাবেক সদস্য মতিউর রহমান আত্মগোপনে চলে গেছেন। কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না তার। রোববার এনবিআরের কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করার আদেশ জারি করা হয়। কিন্তু সপ্তাহ পার হলেও তিনি কাজে যোগ দেননি।
অন্যদিকে, মতিউর পরিবারের জায়গা-জমির তথ্য চেয়ে দেশের সব ভূমি অফিসে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আর দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিদেশযাত্রায় দেওয়া আদালতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকী। এদিকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রভাবশালী মহলের কাছে মতিউর ও লায়লার যাওয়া-আসার তথ্যও পাওয়া গেছে। গত বছর দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ফয়সালের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান টিম গঠন করে দুদক। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ফয়সাল ও তার স্বজনদের নামে বিপুল সম্পদের তথ্য পান অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার তার ও আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা স্থাবর-অস্থাবর বিপুল সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করার আবেদন করে দুদক। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে ফয়সালের দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপরই তার বদলির আদেশ জারি করা হয়। আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনে গিয়ে জানা গেছে, রোববার অফিস করেননি ফয়সাল। এ বিষয়ে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কর লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্টের সদস্য মো. নাজমুল করিমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফয়সাল নৈমিত্তিক ছুটিতে আছেন। এদিকে মতিউর রহমানের কোনো হদিসও পাওয়া যাচ্ছে না। নতুন কর্মস্থলেও যাচ্ছেন না। তবে তিনি ছুটি নিয়েছেন কিনা সে বিষয়ে কেউ মুখ খুলছেন না। তার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আত্মগোপনে থেকেই উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নিজেকে রক্ষায় প্রভাবশালীদের কাছে তদবির করছেন। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুর খুব কাছাকাছি থাকা প্রভাবশালী এক সচিবের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।
জানা গেছে, সরকারি কর্মচারী (নিয়মিত উপস্থিত) বিধিমালা, ২০১৯-এ বলা হয়েছে, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে কোনো সরকারি কর্মচারী নিজ কর্মে অনুপস্থিত থাকতে পারবেন না। উপবিধি (১) এর বিধান লঙ্ঘন করলে কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে তার প্রতিদিনের অনুপস্থিতির জন্য ১ দিনের মূল বেতনের সমপরিমাণ কর্তন করতে পারবে। মতিউর অফিস না করলেও তার বিরুদ্ধে এই আইনে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উলটো মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ দুদকের অনুসন্ধান কাজে প্রভাব বিস্তারের অপচেষ্টা করছেন। এর অংশ হিসাবেই দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিত্রে আদালতের দেওয়া বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চেয়ে আবেদন করেছেন লাকী।
জানা গেছে, রোববার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালতে হাজির হয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে এই আবেদন করেন তিনি। আদালত ২৮ জুলাই এ আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেন। দুদকের আইনজীবী মীর আহম্মেদ সালাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২৪ জুন দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও তাদের পুত্র আহম্মেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকে (ইফাত) বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেন।