Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মিত্রদের সঙ্গে বসবে বিএনপি

আন্দোলন ইস্যুতে মতৈক্য হয়নি

Icon

তারিকুল ইসলাম

প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

আন্দোলন ইস্যুতে মতৈক্য হয়নি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে অনেকটা ধীরগতিতে চলছে বিএনপি। গত আন্দোলনে কার্যত ব্যর্থতার পর হতাশা কাটিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে দলটি নানা কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির আন্দোলনকে এখন বেশি গুরুত্ব দিয়ে ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় সমাবেশ ডেকেছে। নানা ইস্যুতে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার চেষ্টা করলেও সমমনাদের সঙ্গে যুগপৎভাবে সরকারবিরোধী আন্দোলন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। অভিন্ন দাবিতে একই কর্মসূচি নিয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে পারছেন না তারা। যুগপতে জামায়াতে ইসলামীকে যুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে শরিক কয়েকটি দল। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী কর্মকৌশল নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবে বিএনপি। আগামী মাসের শুরুর দিকে এ বৈঠক করার কথা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির অন্যতম নেতা ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, ‘সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক চলমান একটি প্রক্রিয়া। যুগপতে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো সমস্যা নেই। সব দলেরই দাবি বর্তমান স্বৈরাচার ও অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে। আবারও সমমনাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। তাদের (সমমনাদের) সঙ্গে কথা বলে বৈঠকের তারিখ নির্ধারণ করা হবে।’

সরকারবিরোধী আন্দোলন নতুন করে গড়ে তোলা, সেটার কর্মকৌশল নির্ধারণ এবং নতুন কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ১২ থেকে ১৬ মে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করে যুগপতের শরিকদের কাছ থেকে প্রস্তাব ও মতামত নেয় বিএনপি। ওই ধারাবাহিক বৈঠকে নানা ইস্যুতে আলোচনা হয়। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি দল বিএনপির কাছে জানতে চেয়েছে ৭ জানুয়ারি মানুষ যে গণঅনাস্থা জানিয়েছে তা ধরে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে তাদের রোডম্যাপ আছে কিনা? দলগুলো বলেছে, বিএনপি যদি চলতি বছরের মধ্যেই সরকারবিরোধী বড় আন্দোলনের কথা চিন্তা করে তাহলে তার কৌশল, ধরন ও কাজের পদ্ধতি এক রকম হবে। আর যদি আরও সময় নিয়ে বড় আন্দোলন করতে চায় সে পদ্ধতি হবে ভিন্ন। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনো পরিকল্পনার কথা সমমনাদের জানায়নি বিএনপি। এছাড়া আগামী দিনে যুগপৎ আন্দোলনে শরিকদের বেশিরভাগ দলই জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে চাইছে। তবে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারা জামায়াতের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের মতে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে যুগপতের বাইরে থেকে জামায়াত যেভাবে একই দিনে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে, আগামী দিনেও একই ধারা থাকুক। গণতন্ত্র মঞ্চের কাছে এসব ইস্যুসহ সামনের দিনে করণীয় সম্পর্কে একটি প্রস্তাবনা চেয়েছিল বিএনপি। গণতন্ত্র মঞ্চ তা ইতোমধ্যে দিয়েছে বলে জানা গেছে। সামনে শরিকদের সঙ্গে বৈঠকে মূলত আন্দোলন ও জামায়াত ইস্যুটি বেশি প্রধান্য পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানা গেছে, জামায়াত ইস্যুতে বিএনপির অভ্যন্তরেও মতবিরোধ রয়েছে। একটি গ্রুপ জামায়াতকে যুগপৎ আন্দোলনে রাখার পক্ষে। তাদের যুক্তি, ৯৬-এর আন্দোলনে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আন্দোলন করেছিল। তখন একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত নেতারা ছিলেন। এখন জামায়াতে তারাও নেই। তাহলে তাদের যুগপতে রাখলে সমস্যা কোথায়। বিএনপির আরেক পক্ষ ভূরাজনীতির বিষয়টি সামনে নিয়ে আসছেন। তাদের মতে, জামায়াতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন করলে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিএনপির রাজনীতি। কারণ প্রভাবশালী কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র তা ভালো চোখে দেখবে না। তাই যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক। সমমনা একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা জানান, তারাও মনে করেন জামায়াত ইস্যুতে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা দুটি দলের আপত্তি থাকলেও যুগপতে থাকা অন্য কোনো দল বা জোটের আপত্তি নেই। তবে, বিএনপির মধ্যেই এ নিয়ে মতবিরোধ আছে। যে কারণে বিষয়টি বিএনপির ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন তারা। অবশ্য এ নিয়ে জামায়াতের কোনো আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন দলটির একজন দায়িত্বশীল নেতা। তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে তারাও নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছেন। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ আছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বিগত আন্দোলনের যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছি, এখন বিএনপির কাছ থেকে তাদের পর্যালোচনাটা জানতে চাইব। একটি বড় সম্ভাবনার পরও কেন আন্দোলনটা হোঁচট খেল, সেখানে বিএনপির দায়-দায়িত্ব কতটুকু-তাও বোঝার চেষ্টা করব। দুই নম্বর হচ্ছে এর একটা যৌক্তিক পর্যালোচনা না হলে আগামীতে একই ধরনের ভুল আবারও করার সম্ভাবনা থাকবে। সেজন্য বিএনপির কাছে এই রেসপন্সটা চাইব। তৃতীয়ত হচ্ছে এই সরকার এখন পুরোপুরিভাবে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের ফলে অল্প সময়ে সরকারবিরোধী আন্দোলনের ব্যাপারে বিএনপির রোডম্যাপ কি? তারা কি এই বছরের মধ্যেই সিদ্ধান্তমূলক আন্দোলন কর্মসূচির দিকে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন? এগুলো বিএনপির কাছ থেকে জানতে বা বুঝতে চাইব। মানুষ আসলে আরেকটা মরিয়া লড়াইয়ের জন্য তৈরি আছে। কারণ মানুষের তো জীবন চলছে না। এগুলোই সামনের আলোচনার বিষয় হবে।’

জামায়াতে ইসলামী প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, ‘জামায়াত প্রশ্নে আমরা বলেছি তারা তো যুগপতের শরিক না। তারা ৩১ দফার পার্ট না, এর বাইরে আছে। আমরা মনে করি যুগপতের ধারাকে অব্যাহত রাখা দরকার। জামায়াতসহ যারা যুগপতের বাইরে আছেন, তারাও রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রাখুক। কিন্তু হঠাৎ করে সবাইকে একমঞ্চে বা এক কাতারে আনার চেষ্টা করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ এটা শুধু গণতন্ত্র মঞ্চের প্রশ্ন নয়। বাস্তবে রাজনৈতিক জোটগুলোর যে অবস্থা, জবরদস্তি করে এক মঞ্চে বা এক কাতারে এখনি আনার চেষ্টা না করাই ভালো। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, নব্বইয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে কখনোই আমরা এক ব্যানারে আন্দোলন করিনি। বরং যুগপৎ আন্দোলনকে কিভাবে আরও সমন্বিত, আরও গতি বাড়ানো যায় সে বিষয়ে মনোযোগটা আরও বেশি করে আনতে চাই।’

তবে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা যুগান্তরকে বলেন, ‘বিএনপির প্রতি আমাদের পরামর্শ যারাই রাজপথে আছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবেন তাদের সবকে নিয়েই বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে জামায়াত একেবারেই কোনো সমস্যা নয়। এখন বৃহত্তর স্বার্থে বিভেদ বা যে কোনো অনৈক্যের পথকে সংকুচিত করে আনতে হবে। ৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগও আন্দোলন করেছিল। সুতরাং আওয়ামী লীগ-জামায়াত আগে মিত্র ছিল, বিএনপি-জামায়াত নয়। বরং বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির পর সবচেয়ে শক্তিশালী সংগঠন হচ্ছে জামায়াত। সুতরাং তাদের ব্যাপারে যাদের অনীহা আছে আমি মনে করি তাদের অন্য কোনো স্বার্থ আছে।’

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম