Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ

ছিন্ন বীণার তারে বেদনার সুর

ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি, করের চাপ সর্বস্তরে ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ আইএমএফ’র শর্তপূরণ

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৭ জুন ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

ছিন্ন বীণার তারে বেদনার সুর

‘সুযোগ খুব কমই আসে। সোনার বৃষ্টি হলে বালতি বের করে দাও, ঠোঁট নয়’-এটি বিশ্বের প্রখ্যাত ব্যবসায়ী ওয়ারেন বাফেটের বিখ্যাত উক্তি। এর সঙ্গে মিল রেখে বলতে হয়, আবুল হাসান মাহমুদ আলী অর্থমন্ত্রী হিসাবে প্রথম সুযোগ পেয়েই রাজস্ব আহরণের জন্য বালতি বের করে দিয়েছেন ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে। পদে পদে ফেলেছেন ভ্যাট ও করের জাল। এর আওতায় নিয়ে এসেছেন ধনী-গরিব সর্বস্তরের মানুষকে। এতে বাড়বে জীবনযাত্রার ব্যয়। অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে করমুক্ত আয়ের সীমা। 
এক্ষেত্রে বাড়তি ছাড় দেওয়া হয়নি সাধারণ মানুষকে। এ মুহূর্তে অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ হিসাবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ, উন্নত বিশ্বের সুদহার বৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধির শ্লথগতি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জিডিপির প্রবৃদ্ধি আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ এবং মধ্য মেয়াদে (২০২৪-২৫ থেকে ২০২৬-২৭) ৭ দশমিক ২৫ শতাংশে পৌঁছাতে চান তিনি। তবে এ লক্ষ্য অর্জন বাস্তবতার নিরিখে খুবই কঠিন বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। 

তাদের আরও অভিমত-এসব বিষয় ছাড়াও আইএমএফ-এর শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি হ্রাস এবং বড় অঙ্কের রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ, যা জীবনযাত্রার ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিন বছর ধরে চলা অর্থনৈতিক মন্দায় নানা সংকটে আছে সর্বস্তরের মানুষ। তাদের মতে, প্রস্তাবিত বাজেট যেন ‘ছিন্ন বীণার তারে বেদনার সুর’ বাজছে। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে আগামী (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এর আগে সকালে সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে খসড়া বাজেটের অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে মোট ব্যয় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা, জিডিপির ১৪ দশমিক ২ শতাংশ এবং আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ঘাটতি (অনুদানসহ) ২ লাখ ৬১ হাজার ৬০০ কোটি এবং অনুদান ছাড়া ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটের শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’।

প্রস্তাবিত বাজেটে নিত্যব্যবহার্য অনেক পণ্যের ওপর আরোপ করা হয়েছে বাড়তি শুল্ক ও ভ্যাট। তীব্র দাবদাহ থেকে একটু প্রশান্তির ছোঁয়া নিতে কোল্ড ড্রিংস বা দেশীয় উৎপাদিত ফলের জুস কিনতেও এখন খরচ বাড়বে। গরম থেকে রক্ষা পেতে এসি ও ফ্রিজ কেনার ক্ষেত্রেও বাড়বে ব্যয়। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এসব পণ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে ভ্যাট-সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছেন। আরও ব্যয় গুনতে হবে মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে। সিম কার্ড এবং কার্ডের বিপরীতে সেবায় তিনি সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছেন। কর জিডিপির অনুপাত বাড়াতে অর্থমন্ত্রী শিল্প খাতের অনেক সুবিধা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি বাড়াতে তিনি আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধে কৃচ্ছ সাধন থেকে বেরিয়ে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জিডিপির কর অনুপাত ১০ শতাংশে নিয়ে যেতে চান। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার করেন।

মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আগামী অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের ঘরে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে বৈদেশিকনির্ভরতা হ্রাস করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। যাতে সম্পদের জোগান নিশ্চিত করা যায়। অর্থমন্ত্রী মনে করেন, ব্যয়ে দীর্ঘ তিন কৃচ্ছ সাধন কর্মসূচি অব্যাহত থাকলে প্রবৃদ্ধি গতি শ্লথ হবে। এজন্য আগামী অর্থবছরের দ্বিতীয়ভাগে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। 

দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখাসহ ১১টি নির্বাচনের ইশতেহারকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। সেখানে বলা হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট দেশে পরিণত করা হবে। এ লক্ষ্য অর্জনে আগামী দেড় দশকে ভৌত অবকাঠামো তৈরি, গবেষণা ও উদ্ভাবন, দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলা, রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রাসরণ, প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ সেবা ও সর্বোচ্চ মানের বিনিয়োগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোতে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি মোট বরাদ্দের ২৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। ভৌত অবকাঠামোতে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা, যা শতাংশ হিসাবে ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ; সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, মোট বরাদ্দের ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ এবং সুদ পরিশোধ ব্যয় ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ।

এ বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় ৪৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় হেলথ কলসেন্টারগুলোর সেবার জন্য বরাদ্দ ২ হাজার কোটি টাকা। সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিলে বরাদ্দ থাকছে ১০০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বরাদ্দ থাকছে ৪১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজনের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও প্রভাব হ্রাসের জন্য বিশেষ বরাদ্দ থাকছে ১০০ কোটি টাকা। 

খাদ্য মজুত গুদামের ধারণক্ষমতা ২১ দশমিক ৮৬ লাখ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ২৯ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির উন্নয়ন ও ব্যবহার বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয় ১০০ কোটি টাকা। সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও ব্লু ইকোনমি সেলকে এগিয়ে নিতে বরাদ্দ রাখা হয় ১০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ববাদ্দ থাকছে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে এতিম ও সুবিধাবঞ্জিত শিশুদের অনুদান স্মার্ট সিস্টেমের কার্যক্রম পাইলটিং হিসাবে ৬৪ জেলায় শুরু করা হবে। পরবর্তী অর্থবছরে ইএফটির মাধ্যমে এ অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হবে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ১ লাখ ৩৬ হাজার ২৬ কোটি টাকা। দারিদ্র্য বিমোচনে নতুন করে ৩ লাখ ২৪ হাজার জন প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হবে। প্রতিবন্ধীদের উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের উপবৃত্তি ৯৫০ থেকে বাড়িয়ে ১০৫০ টাকায় উন্নীত করা হবে। এছাড়া ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৮০ জন নতুন মুখ যুক্ত হবে মা ও শিশু সহায়তার ভাতায়। দুই লাখ বাড়ছে বয়স্ক ভাতা এবং ২ লাখ বাড়ছে বিধবা ভাতার উপকারভোগীর সংখ্যা। হিজড়া জনগোষ্ঠী ভাতার আওতায় আসছে ৫ হাজার ৭৫৯ জন।

২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সব সরকারি চাকরিজীবীকে সর্বজনীন পেনশনের আওতায় আনা হবে। ১৯ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর জন্য তৈরি হবে স্মার্ট তথ্যভান্ডার। তাদের জন্য স্বাস্থ্যবিমা চালুর বিষয়টি বিবেচনাধীন আছে। ডিজিটাল ব্যাংক বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। 

প্রস্তাবিত বাজেটের মাধ্যমে আগামী দিনে ৯টি বিষয়ে সহায়তার লক্ষ্যে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। সেগুলো হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নীতি ও কর সহায়তা দেওয়া, সম্পদের পূর্ণ বণ্টন ও বৈষম্য হ্রাস, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি, রাজস্ব এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন। এছাড়া রয়েছে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, দেশীয় শিল্প সংরক্ষণ ও বিকাশ, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, রপ্তানি বহুমুখীকরণে নীতি ও কর সহায়তা। 

অর্থমন্ত্রী মনে করেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং কর জিডিপির অনুপাত বাড়াতে বিভিন্ন খাতের কর অব্যাহতির সুবিধা প্রত্যাহার করা দরকার। এতে মূসক খাতে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে, যা উন্নত-সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত আমে আমসত্ত্ব, ম্যাংগো জুস, আনারসের জুস, পেয়ারার জুস, তেঁতুলের জুসে মূসক হার ৫ থেকে ১৫ শতাংশ, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্বে ৫ থেকে ১৫ শতাংশে ভ্যাট উন্নীত করা হয়েছে। নিলামকৃত পণ্যের ক্রেতা সেবা সরবরাহে ভ্যাট বাড়বে ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। সিকিউরিটি সার্ভিস, যান্ত্রিক লন্ড্রি, লটারির টিকিট বিক্রয় সেবা, যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত ইট ও অপারেটর ট্যুর সেবায় খরচ বাড়বে। কোমল পানীয়, কার্বোনেটেড বেভারেজ, এনার্জি ড্রিংকস, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাল্ব ইত্যাদি। এতে ভোক্তা পর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও নিত্যব্যবহার্য পণ্যের দাম বাড়তে পারে। এছাড়া অর্ধশত মূলধনি যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের রেয়াতি সুবিধা (শূন্য শুল্কে আমদানি) প্রত্যাহার করা হচ্ছে।

এদিকে সিগারেট উৎপাদন পর্যায়ে সম্পূরক শুল্ক ও মূল্য স্তর বাড়ানোর ঘোষণা আসতে পারে। দেশে উৎপাদিত কাজু বাদাম চাষকে সুরক্ষার আওতায় আনতে আমদানিকৃত কাজু বাদামের শুল্ক ৫ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ প্রস্তাব করেছে। এছাড়া এসি উৎপাদনে ব্যবহৃত কম্প্রেসার ও সব ধরনের উপকরণের শুল্ক বৃদ্ধি, পানির ফিল্টার আমদানিতে শুল্ক ১০ থেকে ১৫ শতাংশ, সিএনজি-এলপিজিতে কনভার্সনের ব্যবহৃত কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ৩ থেকে ৫ শতাংশের প্রস্তাব করা হয়। পাশাপাশি বাসাবাড়ি বা শিল্পে জেনারেটের সংযোজন ও উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণ বা যন্ত্রাংশ আমদানিতে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। 

আগামী অর্থবছরে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না। এখনকার মতো বার্ষিক করমুক্ত সীমা সাড়ে তিন লাখ টাকাই থাকছে। তবে ব্যক্তি করদাতা, ফার্ম ও হিন্দু পরিবারের জন্য করহার ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। পাবলিক ট্রেড নয় এমন কোম্পানির করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়। তবে শর্ত থাকে আয় ও ব্যয়ের লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করতে হবে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর করহার ২২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়। তবে সমবায় সমিতির কর ১৫ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়। এছাড়া নগদ টাকার ওপর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে বিনা প্রশ্নে যে কেউ এই সুযোগ নিতে পারবেন। একইভাবে জমি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট কিনেও নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে টাকা সাদা করা যাবে।

সাধারণত বিয়ে, বিবাহবার্ষিকী, জন্মদিন, গায়ে হলুদ, সুন্নতে খতনাসহ বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সভা, সেমিনার, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান করতে কমিউনিটি সেন্টার ও মিলনায়তন ভাড়া মিলবে না আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ ছাড়া।

মোবাইল ফোনের সিম কার্ডের সেবার বিপরীতে সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া সিম কার্ডের সম্পূরক শুল্ক একশ টাকা বাড়ানো হয়। সিগারেট ও বিড়ি পেপার স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে মূসক হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণপরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ও দেশে উৎপাদনের স্বার্থে বেশকিছু পণ্যে শুল্ক কমানোর ঘোষণা আসতে পারে। এর মধ্যে ২৮২টি পণ্যের ন্যূনতম মূল্য প্রত্যাহার-হ্রাস, সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ও সংরক্ষণমূলক শুল্ক (আরডি) কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্যাকেটজাত গুঁড়া দুধ আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার, চকোলেট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ, ল্যাপটপ আমদানিতে ভ্যাট ৩১ শতাংশের পরিবর্তে ২০.৫০ শতাংশ করা হবে। নিত্যপণ্যের ওপর শূন্য শুল্ক অব্যাহত রাখা হয়েছে।

যদিও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে এক শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। এ কারণে দেশে ব্যবহার্য অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। 

সংসদ-সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসতে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানের করহার আড়াই শতাংশ কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। শর্ত হলো ৫ লাখ টাকার একক লেনদেন এবং বার্ষিক লেনদেন ৩৬ লাখ টাকার বেশি হলে তা ব্যাংকের মাধ্যমে হতে হবে। 
ব্যবসায়ীরা কিছু পণ্য আমদানিতে শুল্ক সুবিধা পান। সেই সুবিধা সীমিত করা হচ্ছে। খাদ্যপণ্য, কৃষি উপকরণ, ওষুধসহ অত্যাবশ্যকীয় ও জীবন রক্ষাকারী পণ্যসহ ৩২৯টি পণ্য আমদানি করতে আমদানিকারককে কোনো আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্ক দিতে হয় না। আগামী বাজেটে ওই তালিকার অন্তত ১০-১৫ শতাংশ পণ্যের ওপর ১ শতাংশ হারে আমদানি শুল্ক আরোপ করা হতে পারে। সেই হিসাবে অর্ধশতাধিক পণ্যের ওপর এই শুল্ক বসতে পারে। প্রাথমিক তালিকায় আছে, গম, ভুট্টা, শর্ষে। 

এছাড়া হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের শিল্পকারখানার মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে ১ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসতে পারে। এই দুটি অঞ্চলের শিল্প মালিকরা আর শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুযোগ পাবেন না। এ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসতে পারে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আয় বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়। সেই মুনাফার ওপর এখন ১০ শতাংশ উৎসে কর কেটে রাখা হয়। এটি বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে।

আয়-ব্যয় ও ঘাটতি : মোট ব্যয়ের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে পরিচালন ব্যয় ৫ লাখ ৬ হাজার ৯৭১ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা, মূলধনি ব্যয় ৩৭ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা, ঋণ ও অগ্রিম ৮ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ ৯৩ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণের সুদ ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরে মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে অনুদান আছে ৪ হাজার ৪শ কোটি টাকা। এছাড়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর ৪ লাখ ৯৫ হাজার কোটি টাকা, যার মধ্যে শুধু এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তি ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

ঘাটতি (অনুদানসহ) রাখা হয়েছে ২ লাখ ৫১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির অঙ্ক হচ্ছে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। এই ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে ঋণ নিট ৯০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণ ১ লাখ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে আসবে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, সঞ্চয়পত্র থেকে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম