Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পরিকল্পনায় দেশি-বিদেশি চক্র 

এমপি আনার ভারতে খুন

১০ মিনিটের কিলিং মিশনে অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন * নৃশংসতার শিকার ১৩ মে দুপুরে * খুনের পর লাশ টুকরো টুকরো করে চারটি ট্রলি ব্যাগে নেওয়া হয় * মূল পরিকল্পনাকারী শাহিন পাড়ি জমিয়েছেন দুবাইয়ে * দুই ঘাতকের পাসপোর্ট ডিবির হাতে

Icon

সিরাজুল ইসলাম, ঢাকা ও কৃষ্ণকুমার দাস, কলকাতা 

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

এমপি আনার ভারতে খুন

ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে দমদম বিমানবন্দর লাগোয়া নিউটাউনে রহস্যজনকভাবে খুন হয়েছেন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য (এমপি) আনোয়ারুল আজিম আনার। স্নায়ুরোগের চিকিৎসা নিতে তিনি ১২ মে দর্শনা-গেদে সীমান্ত দিয়ে কলকাতা যান। কিন্তু পরদিন থেকেই রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন। মূলত সেদিনই (১৩ মে) তাকে হত্যা করা হয়। 

নিউটাউনে বহুতল আবাসন সঞ্জীবা গার্ডেনসের একটি ফ্ল্যাটে ১৩ মে দুপুর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ১২টা ৫০ মিনিটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। হত্যাকাণ্ডের সময় নেওয়া হয় ১০ মিনিটেরও কম। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেয় অন্তত পাঁচজন। খুনের পর তার লাশ টুকরো করে চারটি ট্রলি ব্যাগে নেওয়া হয়। এরপর খুনিরা ব্যাগগুলো নিয়ে বিকাল ৫টা ১১ মিনিটে বাসা থেকে একে একে বের হয়ে যায়। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দেশি-বিদেশি চক্রের সদস্যরা জড়িত। এই খুনের ঘটনায় ৫ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছে। 

এমপি আনারকে ১৩ মে খুন করা হলেও ঘটনা প্রকাশ্যে আসে বুধবার। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর স্বজন, পরিচিতজনসহ ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। শোকাতুর মানুষগুলোই একে অপরকে সান্ত্বনা দেন। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয়েছে। আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন (২৪) বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে এ মামলা করেন। বুধবার সন্ধ্যায় মামলা হয়েছে বলে জানায় তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচএম আজিমুল হক। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখপ্রকাশ করেছেন। শোকবার্তায় শেখ হাসিনা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। প্রসঙ্গত, আনোয়ারুল আজিম তিনবারের সংসদ-সদস্য। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী হিসাবে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে ঝিনাইদহ-৪ সংসদীয় আসন থেকে জয়লাভ করেন। পেশায় ব্যবসায়ী আনোয়ারুল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।

বুধবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তার দাবি, ‘খুনের ঘটনায় বাংলাদেশিরাই জড়িত।’ 

রাত পর্যন্ত নিহত আনারের মৃতদেহ উদ্ধার হয়নি বলে কলকাতার উপদূতাবাসকে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। বিদেশি সংসদ-সদস্যকে নৃশংসভাবে খুন করার খবরে দুই দেশের (বাংলাদেশ ভারত) কূটনৈতিক মহলেও জোর তৎপরতা চলছে। রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারাও তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে আসেন। সংসদ-সদস্যের মোবাইল ফোনের কিছু খুদেবার্তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং খুনের দায় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাঁধে চাপানোর জন্য খুনিরা পরিকল্পিতভাবে কাজটি করেছে।

আনার হত্যার মূল নায়ক : আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক হলেন আক্তারুজ্জামান শাহিন। বাংলাদেশের একটি বাহিনীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। তিনি ইতোমধ্যে দুবাই চলে গেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক শাহিনের ভাই শহিদুজ্জামান সেলিম কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র। ঘটনার পর দেশ ছাড়ার আগে শাহিন তার প্রাডো গাড়ি অপেক্ষাকৃত কম দামে (২৭ লাখ) দ্রুত বিক্রি করে দেন। 

শাহিনের সহযোগী হিসাবে এখন পর্যন্ত যাদের নাম বেরিয়ে এসেছে তারা হলেন-শাহিনের বান্ধবী সেলেটি রহমান, সৈয়দ আমানুল্লাহ, শাহিনের চাচাতো ভাই টিটু, ভারতীয় নাগরিক জিহাদ ওরফে জাহিদ, সিয়াম প্রমুখ। খুনের ঘটনায় পুলিশ যাদের সন্দেহ করছে, তাদের মধ্যে দুজনের পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। পাসপোর্টগুলো এখন ডিবির হাতে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাদের মধ্যে আমানুল্লাহসহ কয়েকজন পুলিশের হেফাজতে আছেন।

পূর্বপরিকল্পনার অংশ : ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি) জানায়, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। পূর্বপরিকল্পনার অংশ হিসাবে ৩০ এপ্রিল আক্তারুজ্জামান শাহিন, তার বান্ধবী সেলেটি রহমান ও সৈয়দ আমানুল্লাহ কলকাতায় যান। আমানুল্লাহ হলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির নেতা। 

একাধিক হত্যা মামলার আসামি তিনি। সম্পর্কে শাহিনের বেয়াই। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি দুজন লোক সংগ্রহ করে দেন। ওই দুজনকে ভারতে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টও করে দেন তিনি। ডিবি সূত্র জানায়, পরিকল্পনার অংশ হিসাবে কলকাতা নিউটাউন এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেনে বিলাসবহুল একটি অ্যাপার্টমেন্ট (ডুপ্লেক্স বাসা) ভাড়া নেওয়া হয় শাহিনের নামে। কয়েকদিন ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকার পর ১০ মে তিনি (শাহিন) দেশে ফেরেন। 

তিনি দেশে ফিরলেও আমানুল্লাহ ও সেলেটিকে সেখানে রেখে আসা হয়। ডিবি আরও জানায়, সংসদ-সদস্য আনার যেদিন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন, সেদিন তাকে বাংলাদেশি এক লোক সাদা গাড়িতে করে রিসিভ করেন। ওই গাড়িটি নিউটাউনের কাছাকাছি একটি বাসার সামনে গিয়ে ৮-১০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। পরে সেখানে একটি লাল গাড়ি আসে। ওই গাড়িতে ছিলেন ভারতীয় চালক এবং বাংলাদেশি সৈয়দ আমানুল্লাহ। গাড়িটি প্রবেশ করে শাহিনের ভাড়া করা বাসায়। হত্যাকাণ্ডের পর দুই ঘাতক কলকাতা থেকে এসে শাহিনের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাটে আশ্রয় নেন। ওই বাসায় নিয়মিত মদের আসর বসত। 

আমানুল্লাহর ভাষ্য : ডিবি পুলিশকে সৈয়দ আমানুল্লাহ জানিয়েছেন সংসদ-সদস্য আনারকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়। এরপর আনারের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ চারটি ট্রলিতে নেওয়া হয়। পরে একেকজন একেকটি ট্রলি নিয়ে অ্যাপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে যান। তবে আমানুল্লাহ ও জিহাদ দুজনে মিলে একটি ট্রলি নেন। ওই ট্রলিটি নিয়ে তারা নিউটাউনে একটি পাবলিক টয়লেটের পাশে সিয়ামের হাতে দেন। পরে আমানুল্লাহ সেখান থেকে অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আসেন। 

সিয়াম ও জিহাদ ট্রলি ব্যাগটি নিয়ে অন্যত্র চলে যান। আমানুল্লাহ অ্যাপার্টমেন্টে যাওয়ার পর সেলেটি রহমান তাকে প্রশ্ন করেন, রুমে এত গন্ধ কেন? আমার বমি আসছে। তখন আমানুল্লাহ বলেন, জিহাদের বমি ও পাতলা পায়খানা হয়েছিল। বাথরুমে ব্লিচিং পাউডার দেওয়া হয়েছে। এজন্য গন্ধ আসছে। ওইদিন এবং পরদিন আমানুল্লাহ ও সেলেটি রহমান ওই ফ্ল্যাটে থাকেন। ১৫ মে তারা দেশে ফেরেন। 

লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা কম : ডিবি সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু লাশ টুকরো টুকরো করে বেশ কয়েকটি ব্যাগে করে বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে, তাই লাশ উদ্ধারের সম্ভাবনা ক্ষীণ। লাশ উদ্ধার করা না গেলেও এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব বলে ডিবি জানায়। যে বাসায় সংসদ-সদস্য আনার খুন হয়েছেন, সেই বাসার দেওয়ালে রক্তের দাগ আাছে। সেটি দিয়েই রহস্য বের করা সম্ভব বলে ডিবি জানায়। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্তের চেষ্টা : খুনের পর ঘাতকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালায়। আনারের দুটি মোবাইল ফোন দূরবর্তী দুটি স্থানে নিয়ে যায়। তারা ভেবেছিল, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করার জন্য প্রযুক্তির আশ্রয় নেবে। মোবাইল ফোনগুলোর লোকেশন যেখানে থাকবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থল হিসাবে ওই স্থানকে বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত করবে। তাই হত্যাকাণ্ড কলকাতায় ঘটনার পর তার মোবাইল ফোন নিয়ে যায় দূরে। 

১৩ মে ঘটনার পর তারা ১৬ মে দুই জায়গায় মোবাইল ফোন সচল করে। ফোন সচল করার পর তারা এমন লোকদের ফোন করেন, যাদের সাধারণত সংসদ-সদস্যের ফোন করার কথা না। কারণ, সংসদ-সদস্যের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো না। যাদের ফোন করা হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। মিন্টুর সঙ্গে আনারের দা-কুমড়া সম্পর্ক। দ্বিতীয়ত ফোন করা হয় ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর-কোটচাঁদপুর) আসনের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলকে। 

ফোন করা হয় জামান নামের একজন কন্ট্রাক্টরকে। এ তিনজনের সঙ্গে সংসদ-সদস্য আনারের সম্পর্ক খারাপ। ফোনগুলো সকালের দিকে দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে কেউই ফোন ধরতে পারেননি। তাদের কেউ ফোন ধরলে চক্রের সদস্যরা হয়তো বলত-‘লিডার কামত ঘটিয়ে ফেলেছি।’ এতে যাদের ফোন দেওয়া হয়েছে, ঘটনার সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ করা সহজ হতো।

শাহিন এখন দুবাই : এমপি আনার নিখোঁজের ঘটনায় ভারতীয় পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করে সাদা গাড়ির চালককে। ওই চালক গ্রেফতার হওয়ার পর মূল পরিকল্পনারী শাহিন খবর পেয়ে দিল্লি চলে যায়। সেখানে ২ ঘণ্টা ট্রানজিট করে চলে যান নেপালের কাঠমান্ডুতে। সেখান থেকে মঙ্গলবার ভোর ৫টার দিকে তিনি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। শাহিন এমপি আনারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক পাটনার।

বরাহনগরে বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন আনার : ১২ মে কলকাতায় এসে বরাহনগর লাগোয়া সিঁথির বাসিন্দা বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন সংসদ-সদস্য আনোয়ারুল আজিম। পরদিন ১৩ মে ওই বাড়ি থেকে ভাড়া গাড়িতে বেরিয়ে যান। এরপর আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তার। পুলিশে ডায়েরি করে গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, আমার বাড়িতে আসার পর দিন ডাক্তার দেখানোর উদ্দেশে বের হয়ে যান। যাওয়ার সময় বলে যান, ‘আমি দুপুরে খাব না, সন্ধ্যায় ফিরে আসব।’ 

তারপর উনি সন্ধ্যাবেলা না ফিরে, হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি বিশেষ কাজে দিল্লিতে যাচ্ছি। ফোন করব, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই।’ এরপর ১৫ মে বেলা ১১টা ২১ মিনিটে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে জানান, ‘আমি দিল্লিতে পৌঁছেছি। আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন। ফোন করার দরকার নেই।’ এই একই মেসেজ এমপির বাড়িতে ও পিএকে পাঠানো হয়। কলকাতার গোয়েন্দারা জানতে চাইছেন, ‘ওই মেসেজ সংসদ নিজেই করেছেন, না তার ফোন থেকে অন্য কেউ করেছিলেন?’ 

পশ্চিমবঙ্গ পুলিশকে সংসদ-সদস্য আনারের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস জানিয়েছেন, ‘১৭ মে আনোয়ারুল ভাইয়ের মেয়ে আমাকে ফোন করে বলেন, বাবার সঙ্গে কোনোভাবে যোগাযোগ করতে পারছি না। এরপরই আমি উনার যাবতীয় পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিন্তু কেউই তার ফোনকলে সাড়া পাননি। সে কারণেই আমি বরাহনগর থানায় মিসিং ডায়েরি করছি।’

সঞ্জীবা গার্ডেনসের বাসিন্দারা যা বলেন : সঞ্জীবা গার্ডেনসের বাসিন্দারা জানান, একজন মহিলা ও তিনজন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে নিউটাউনের ওই বিলাসবহুল আবাসনে ছিলেন সংসদ-সদস্য আনার। যে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেন সেটি একজন এক্সাইজ ডিপার্টমেন্টের অফিসারের। তবে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল আখতারুজ্জামান নামে এক মার্কিন নাগরিকের নামে। পুলিশ জানতে চাইছে, কে এই আখতারুজ্জামান? এর সঙ্গে নিহতের সম্পর্ক কী? 

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওই মহিলা ও সঙ্গীরা বেরিয়ে গেলেও সংসদ-সদস্য ফ্ল্যাটে থেকে যান। তবে টুকরো টুকরো করে দেহ কি আদৌ লোপাট করা হয়েছে? বাসিন্দারা বলেন, ঘটনার তদন্তে নেমেছেন গোয়েন্দারা। এর আগে গোপন খবর পেয়ে বুধবার ভোরে নিউটাউন থানার পুলিশ এলাকার সঞ্জীবা গার্ডেন্সের অভিজাত এই আবাসনে হাজির হয়। যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে, সেই ফ্ল্যাটে রক্তের দাগ মিলেছে। চলে আসেন ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করার বিশেষজ্ঞ এবং রক্তের দাগ সংগ্রহের বিশেষজ্ঞরা। 

অস্থায়ী ব্যারিকেড করে ঘিরে রাখা হয়েছে আবাসনের ওই নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটটি। আবাসনে ঢোকা-বেরোনোর ক্ষেত্রেও কড়াকড়ি করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ অবশ্য সরকারিভাবে দেহ উদ্ধার বা খুনের মোটিভ নিয়ে কিছু জানাতে রাজি হয়নি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য : বুধবার দুপুরে ধানমন্ডির নিজ বাসায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে ধরার চেষ্টায় আছি। তিনি বলেন, এমপি আনোয়ারুল আজিমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। খুনের উদ্দেশ্য, কারা খুন করেছে, এসব জানতে ভারতের পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় দেশে আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত চলছে। যারা এ খুনের সঙ্গে জড়িত, তাদের উদ্দেশ্য কী ছিল, আমরা পরে সেগুলো প্রকাশ করব।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বক্তব্য : রাজধানীর মেরুল বাড্ডা এলাকায় বৌদ্ধবিহার অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা খবর পেয়েছি ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ-সদস্য আনারের মরদেহ পাওয়া গেছে। বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশ ও বাংলাদেশ পুলিশ একসঙ্গে কাজ করছে। সংসদ-সদস্য আনারের বিরুদ্ধে হুন্ডি, স্বর্ণ চোরাচালানসহ নানা অভিযোগ রয়েছে-এমন প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, এসব বিষয়ে এখন মন্তব্য করার সময় নয়। তবে এই অভিযোগগুলো আমরা সামনে নিয়ে তদন্ত করছি।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তারা কাজ করছেন। খুনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনসহ বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিবিড়ভাবে ভারতীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। কয়েকজন আমাদের কাছে আছে। তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা সবকিছু বলতে পারছি না। 

মামলার এজাহার : মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন মামলাটির এজাহারে বলেন, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউর সংসদ-সদস্য ভবনের বাসায় আমরা সপরিবারে বসবাস করি। ৯ মে রাতে আমার বাবা আনোয়ারুল আজিম এই বাসা থেকে গ্রামের বাড়ি ঝিনাইদহ যাওয়ার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। ১১ মে বিকালে আমার বাবার সঙ্গে মোবাইলে ভিডিও কলে কথা বললে বাবার কথাবার্তায় কিছুটা অসংলগ্ন মনে হয়। এরপর বাবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাই। ১৩ মে বাবার ইন্ডিয়ান নম্বর থেকে উজির মামার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি মেসেজ আসে আমি হঠাৎ করে দিল্লি যাচ্ছি, আমার সঙ্গে ভিআইপি আছে। আমি অমিত সাহার কাছে যাচ্ছি। আমাকে ফোন দেওয়ার দরকার নাই। আমি পরে ফোন দিব।’ 

এটা ছাড়াও আরও কয়েকটি মেসেজ আসে। উক্ত মেসেজগুলো আমার বাবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অপহরণকারীরা করে থাকতে পারে। আমরা বিভিন্ন জায়গায় বাবার খোঁজখবর করতে থাকি। আমার বাবার কোনো সন্ধান না পেয়ে আমার বাবার বন্ধু শ্রী গোপাল বিশ্বাস ইন্ডিয়ার বরাহনগর পুলিশ স্টেশনে সাধারণ ডায়েরি নং-১২৩৯ রুজু করেন। আমরা বাবাকে খোঁজাখুঁজি অব্যাহত রাখি। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে আমার বাবাকে অপহরণ করেছে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম