তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক
কোন্দল নিরসনে কঠোর বার্তা আ.লীগের
হাসিবুল হাসান
প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে কঠোর অবস্থানে আওয়ামী লীগ। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে চলমান বৈঠকগুলোয় নিজেদের মধ্যকার বিভেদ মেটাতে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার পাশাপাশি এ বিষয়ে দেওয়া হচ্ছে সতর্কবার্তাও। এরপরও দ্বন্দ্ব-কোন্দল ভুলে ঐক্যবদ্ধ না হলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিশেষ করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ কোনো সংঘর্ষ দেখতে চায় না ক্ষমতাসীনরা। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দলীয় সংসদ-সদস্য এবং তৃণমূলের নেতাদের কড়া ভাষায় সতর্কও করা হচ্ছে। দলীয় প্রতীকবিহীন এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে দলের হাইকমান্ডের স্পষ্ট অবস্থানের কথাও জানানো হচ্ছে তাদের। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোর সম্মেলন এবং সম্মেলন হওয়া কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার তাগিদও দেওয়া হচ্ছে আওয়ামী লীগের এই সিরিজ বৈঠকে।
ইতোমধ্যে একাধিকবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে মন্ত্রী-এমপিদের সতর্ক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন করতে চায় সরকার। নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে এমপি-মন্ত্রী কারোরই হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। এমপি-মন্ত্রীরা পছন্দের লোককে জেতানোর জন্য নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। নির্বাচনে কোনো প্রকার হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া হবে না। যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে, সেই উদ্দেশ্য ব্যাহত করা যাবে না। উপজেলা নির্বাচনকে সম্পূর্ণভাবে অবাধ, সুষ্ঠু এবং পক্ষপাতহীন করতে চাই।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, আমরা বিভাগওয়ারী সাংগঠনিক কাজগুলো করছি। যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে আমরা বসে আলোচনা করছি। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করছি। সমঝোতা ও সমন্বয় করছি যাতে আগামী দিনে সংগঠন আরও গতিশীল হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার সম্মেলন, অসম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার প্রস্তুতিও নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যারা দলীয় ঐক্য নষ্টের চেষ্টা করবে বা ক্ষতিগ্রস্ত করার অপচেষ্টা করবে, তাদের নেতিবাচকভাবেই দেখা হবে। কেউ যাতে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থেকে বলয় সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হবে এবং কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জানতে চাইলে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী যুগান্তরকে বলেন, রংপুর বিভাগের নেতাদের নিয়ে আমরা অনেকবার বসেছি। প্রধান সমস্যাগুলো আমরা আগেই সমাধান করেছি। এখন আর তেমন কোনো বড় সমস্যা নেই। ছোটখাটো যে সমস্যাগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে আমরা বসেছিলাম। কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা ছিল, কিছু নির্দেশনা দেওয়া ছিল, যেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। এসব বিষয় নিয়ে আমরা বসেছিলাম। আলোচনা করেছি, প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছি, এখন সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। আমরা কেন্দ্রীয়ভাবেও এগুলো মনিটরিং করছি। আশা করছি অচিরেই সেগুলোও সমাধান হয়ে যাবে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জন্ম নেওয়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা শুরু করেছেন সিরিজ বৈঠক। ইতোমধ্যে রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সূত্র বলছে, বৈঠকে অভ্যন্তরীণ বিভেদ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীকে সমর্থন করা-না-করার বিষয়টিই ঘুরেফিরে এসেছে। তৃণমূল নেতারা এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা চেয়েছেন। একই সঙ্গে তুলে ধরেছেন নিজেদের নানা অভিযোগের কথাও।
এদিকে রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের পর আজ খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা ডাকা হয়েছে। বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে। দলের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস পালন এবং সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে খুলনা বিভাগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। স্বাগত বক্তব্য দেবেন খুলনা বিভাগীয় টিম সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। সভাপতিত্ব করবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। সঞ্চালনা করবেন সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক। সভায় খুলনা বিভাগের অন্তর্গত সাংগঠনিক জেলাগুলোর নেতা, জাতীয় সংসদের দলীয় ও স্বতন্ত্র সদস্য এবং দলীয় জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। দলীয় সূত্রমতে, ২১ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ঈদের পর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য বিভাগের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। একইভাবে মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদেরও ঢাকায় ডাকা হবে। বিশেষ করে অন্তর্কোন্দল বেশি এমন জেলা-উপজেলা নেতাদের আগে ডাকা হবে।
এছাড়া সম্মেলন বাকি আছে বা সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি, সেই জেলার নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কোন্দল নিরসন ও সম্মেলন বা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা ও ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে ৩০টির বেশি জেলা-উপজেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও সম্মেলন হয়নি। আর ১৮টি জেলা ও মহানগরে সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। চলতি বছরের মধ্যেই দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন শেষ করতে চায় আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজও শেষ করতে চায় দলটি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করার চিন্তাও রয়েছে। এ লক্ষ্যে ঈদের পর সাংগঠনিক কাজে আরও গতি বাড়াবে দলটি।