Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের গ্যাস থেকে আগুন

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বারো শিশুসহ ৩৪

শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে আহাজারি

Icon

শিপন হাবীব, ঢাকা ও সরকার আব্দুল আলীম, কালিয়াকৈর (গাজীপুর)

প্রকাশ: ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বারো শিশুসহ ৩৪

ব্যথায় কাতরাচ্ছেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ মোতালেব। বুধবার রাতে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে -যুগান্তর

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে সিলিন্ডারের গ্যাসে আগুন লেগে শিশুসহ ৩৪ জন দগ্ধ হয়েছেন। বুধবার বিকালে উপজেলার মৌচাক ইউনিয়নের তেলিরচালা টপ স্টার খারখানার পাশের একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে তাদের ঢাকায় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। ভর্তি অধিকাংশ রোগীর ৩৫ থেকে ৯৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাদের কেউ শঙ্কামূক্ত নন। 
দগ্ধরা হলেন-রত্না বেগম (৪০), রহিমা (৩),শারমিন (১১), সুফিয়া (৯), মনসুর আলী (৩০), মিরাজ (১৩), তারেক রহমান (১৮), সুমন (২৫), শিল্পী (৪৫), আজিজুল (২৪), রমিসা (৩৬), নীরব (৭), লালন (২৪), নাঈম (১৩), মুন্নাফ (১৮), কবীর (৩০), নূর নবী (৫), সাদিয়া খাতুন (১৮), মশিউর (২২), জহুরুল ইসলাম (৩২), আরিফ (৪০), নিলয় (১০), কমলা খাতুন (৮০), কুদ্দুস (৪৫), মো. সোলায়মান (৬), তাওহিদ (৭), তায়েবা (৩), লাদেন (২২), ইয়াসিন আরাফাত (২১), মোসাম্মৎ নার্গিম (২৫),  রাব্বী (১৩), মহিদুল (২৫), মোতালেব (৪৮), সুলাইমান মোল্লা (৪৫)। এদের মধ্যে ৫ জনকে আইসিইউতে, ২৩ জনকে এইচডিইউতে এবং বাকি ৬ জনকে রেড ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। 
এলাকাবাসী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তেলিরচালা টপ স্টার কারখানার পাশে ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জমি ইজারা নিয়ে কলোনি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন। কলোনির একটি বাড়িতে থাকা সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেলে সফিকুল ইসলাম নিজেই দোকান থেকে একটি সিলিন্ডার কিনে আনেন। সেই সিলিন্ডারটি সংযোগ দেওয়ার সময় এর চাবি খুলে যায়। এ সময় পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারের বের হওয়া গ্যাসে আগুন ধরে যায়। তখন শফিকুল সিলিন্ডারটি ছুড়ে মারেন। এ সময় উৎসুক নারী, পুরুষ ও শিশুদের শরীরে আগুন লেগে যায়। এতে অনেকে দগ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে নারী ও শিশু রয়েছে। আশপাশের লোকজন উদ্ধার করে প্রথমে তাদের কোনাবাড়ী এলাকার কয়েকটি হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। পরে তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে গেছেন। সেখানে তাদের আহাজারি চলছে।
সাবিনা খাতুন নামে একজন জানান, তার স্বামী লালন শ্রমিকের কাজ করেন। মাত্র ৯ মাসের শিশুকে নিয়ে ঘরেই ছিল সে। আগুন আগুন শব্দ শুনে বের হয়েছিল দেখতে। তখনই তার শরীরে আগুন লেগে যায়। স্বামীর কিছু হলে কি নিয়ে বাঁচবেন তিনি, সন্তানের কী হবে-এই প্রশ্ন রেখে শুধু আহাজারি করছেন।
খবর শুনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা.সামন্তলাল সেন বার্ন ইনস্টিটিউটে ছুটে আসেন। তিনি রোগী ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলার পর সাংবাদিকদের জানান, নারী ও শিশু সহ মোট ৩৪ জন দগ্ধ এই ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন। রোগীদের মধ্যে ৯৫ শতাংশ দগ্ধও আছে। এদের কাউকেই আশঙ্কামুক্ত বলা যাবে না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি তাদের সুস্থ করে তুলতে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীও রোগীদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে আসেন। ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। সেই হিসাবে সবাইকেই সংকটাপন্ন বলা যায়। তাদের মধ্যে সাতটি শিশু রয়েছে। দুটি শিশুর শরীর ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। 
সরেজমিন দেখা যায়, ডা. প্রদীপ চন্দ্র দাসসহ অন্তত ৩৫ জন চিকিৎসক দ্রুততার সঙ্গে দগ্ধ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় কাজ করছেন। তিনি জানান, দগ্ধরা হাসপাতালে আসার পর পরই চিকিৎসক নার্স এবং স্টাফরা চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছি।’ 
৯ দিনের শিশুকে বাসায় রেখে বার্ন ইউনিট হাসপাতাল বারান্দায় ফরিয়াদ করছেন সাবিনা খাতুন। স্বামী লালন মিয়ার (৩০) শরীর ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। অন্যদিকে দুই বছরের কন্যাশিশুক বুকে জড়িয়ে বিলাপ করছেন দুলু খাতুন। তার স্বামী জহিরুলের শরীর ৯০ শতাংশ পুড়ে গেছে। ২ মাসের কন্যাকে বাসায় রেখে এসেছেন সুমি আক্তার। স্বামী আরিফুল ইসলামের শরীর ৭৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। শিল্পী নামের এক মা এবং তার ছোট্ট দুই ছেলে সন্তান দগ্ধ হয়েছে। 
জানতে চাইলে বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়নি। সিলিন্ডারে ত্রুটি থাকার কারণে গ্যাস বের হতে থাকে। হঠাৎ পাশের চুলা থেকে সিলিন্ডারে আগুন ধরে যায়।’ কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল আলম জানান, কী কারণে এমনটা হলো তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। 
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাউসার আহমেদ সন্ধ্যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, আহতদের সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তাও দেওয়া হবে।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম